Advertisement
E-Paper

ভাড়া মানেই ঝগড়া নয়

কোথাও বিদ্যুতের মিটার থেকে বিল ভাগাভাগি নিয়ে চুলোচুলি। কোনও বাড়ি আবার হুলস্থুল জল পাওয়া কিংবা ঢোকার পথ আটকানো নিয়ে। বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটিয়ার এমন হাজারো সমস্যা চিঠি হয়ে জমা পড়েছে আমাদের কাছে। এই ঝামেলা সমূলে উপড়ে ফেলার উপায় খুঁজলেন জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কোথাও বিদ্যুতের মিটার থেকে বিল ভাগাভাগি নিয়ে চুলোচুলি। কোনও বাড়ি আবার হুলস্থুল জল পাওয়া কিংবা ঢোকার পথ আটকানো নিয়ে। বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটিয়ার এমন হাজারো সমস্যা চিঠি হয়ে জমা পড়েছে আমাদের কাছে। এই ঝামেলা সমূলে উপড়ে ফেলার উপায় খুঁজলেন জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৯

রাত নেই, দিন নেই চিৎকারের চোটে বাড়িতে কাক-চিল বসা দায়। প্রাণ ওষ্ঠাগত অশান্তিতে। এমনই অবস্থা যে, একে অন্যের মুখোমুখি হওয়াও অস্বস্তির। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার তেতো সম্পর্কের এই ছবিটা খুব চেনা। অথচ অনেক সময়ে এই দু’পক্ষই পরস্পরের পড়শি। বিপদে-আপদে যাঁদের মুখ বাড়িয়ে ডাকা যায়। দরকারে বাচ্চা রেখে সেরে আসা যায় কাজ। কিন্তু যাঁর বাড়ি এবং যিনি টাকা দিয়ে থাকতে এসেছেন তাঁদের অধিকারে ঠোকাঠুকি লাগলেই বাধে ঝামেলা। যার মূল উৎস শুরুতেই ভাড়া সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলি খুঁটিয়ে না দেখা। আর পাশাপাশি না থাকলেই বা কি? সারাক্ষণ উটকো অশান্তি কারই বা ভাল লাগে? তাই সেই পরিস্থিতি এড়াতে ভাড়ার চুক্তির সময়েই দু’পক্ষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। চলুন আজ এ নিয়েই কথা বলি।

কত দিনের চুক্তি

• চুক্তিতে যে দিনের কথা বলা থাকবে, সে দিন থেকে ভাড়ার মেয়াদ শুরু। কাজেই দেখে নিন কত দিনের জন্য থাকা যাবে সেখানে।

• মেয়াদ ফুরোনোর পরে ফের চুক্তি করবেন কি না, শুরুতেই কথা বলে রাখা ভাল। এবং লিখিত চুক্তিতে তা যেন থাকে।

• জেনে রাখুন, চুক্তি পুনর্নবীকরণ করলে নতুন কী শর্ত বসতে পারে। নতুন শর্তগুলি নতুন চুক্তিতে রাখতে হবে।

• চুক্তি পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

নোটিস দিতে হবেই

• হতে পারে বনিবনা হচ্ছে না। কিংবা ভাড়া দেওয়া অংশটা হঠাৎ ব্যবহারের দরকার পড়ল বা বাড়ি বেচার কথা ভাবতে হচ্ছে। কারণ যা-ই হোক, ভাড়াটিয়াকে দুম করে উঠতে বলা যায় না। নোটিস দিতেই হবে।

• কত দিনের নোটিস, তা লেখা থাকবে চুক্তিপত্রে। চুক্তি শেষের বিবরণও কিন্তু থাকা উচিত সেখানেই।

• সাধারণত মেয়াদের আগে চুক্তি শেষ করতে চাইলে, অন্তত ৩০ দিন আগে লিখিত ভাবে নোটিস দেওয়ার কথা।

বাসা কেমন

• কতটা জায়গা (কত বর্গ ফুট) জুড়ে তৈরি বাড়ি বা ফ্ল্যাট।

• যদি গ্যারাজ থাকে, তবে তার মাপ।

• ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা, সিঁড়িও আলাদা কি না। ফিরতে রাত হলে ঝামেলা বাধবে না তো! কিংবা লোকজন এলে? আশেপাশে লোকজনের অসুবিধা হবে না তো!

• সাধারণ কোনও গেট থাকলে, তা খোলা-বন্ধের নিয়ম কী? রাতে তালা দেওয়া বা সকালে খোলার দায়িত্ব কী ভাবে ভাগ হবে?

• ‘কমন এরিয়া’ (থাকলে) কতটা? যা ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালা উভয়েই ব্যবহার করবেন। যেমন, বাড়িতে ঢোকা-বেরোনোর পথ, সিঁড়ি ইত্যাদি। ছাদের অধিকার সাধারণত সকলের।

বিরোধ মেটাতে

• সালিশিই (আরবিট্রেশন ক্লজ) সবচেয়ে ভাল। তাই বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার বিরোধ মেটানোর জন্য একেবারে শুরু থেকেই সেই রাস্তা খোলা রাখা খুব জরুরি।

• দ্বিতীয় পথ আইন। সে জন্য এ রাজ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গ বাড়ি ভাড়া আইন (ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেনেন্সি অ্যাক্ট)।

• চুক্তিতে থাকা উচিত, ভা়ড়া বসবাসের জন্য না কি ব্যবসার কাজে। বাণিজ্যিক কারণে নিলে সাধারণত বেশি ভাড়া লাগে।

• বাড়িওয়ালা বেআইনি ভাবে ভাড়াটিয়াকে তুলতে চাইলে বা ভাড়াটিয়া বাড়ি জবরদখল করতে চাইলে আইনের দ্বারস্থ হতেই হবে।

• বেআইনি কাজকর্ম যে চালানো যাবে না, সেই বিষয়টি চুক্তিতে বলে দেওয়া ভাল।

ভাড়া বাড়ানো

• চুক্তি পুনর্নবীকরণের সময়ে ভাড়া কতটা বাড়বে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন নেই। তা দু’পক্ষের সমঝোতা, এলাকায় অন্যান্য বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ভাড়া ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। শুরুতেই এ নিয়ে কথা বলে নেওয়া উচিত।

• তবে কিছু জায়গায় আগেই প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলা থাকে।

ভাড়াটিয়া হলে...

ঝক্কি এড়াতে শুরুতেই কিছু বিষয় জানুন—

• ভাড়া দিয়ে পাকা রসিদ নেবেন। বাড়িওয়ালা যাতে তা দিতে বাধ্য থাকেন, সে জন্য চুক্তিতে বিষয়টি লেখা থাকতে হবে।

• বাড়িওয়ালার সম্মতি ছাড়া সম্পত্তিতে অদল-বদল করা চলবে না।

• ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা আইনত আটকাতে পারেন না বাড়িওয়ালা।

• ভাড়াটিয়াকে বঞ্চিত করা যায় না জল, বিদ্যুতের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবা থেকেও। সেটা করা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুলিশে খবর দিতে পারেন।

• ভাড়া না-দিলে বাড়িওয়ালা উঠিয়ে দিতে পারেন। তবে ভাড়াটিয়াকে ওঠাতে অনেকে ইচ্ছে করে ভাড়া নিতে চান না। সে ক্ষেত্রে রেন্ট কন্ট্রোলারের কাছে তা জমা দিতে হবে। তা হলে আর ভাড়া দেননি বলা যাবে না।

• বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও সেটিকে বাসযোগ্য রাখার কথা বাড়িওয়ালার। তবে তার কোনও ক্ষতি না হওয়া নিশ্চিত করবেন ভাড়াটিয়া।

বাড়িওয়ালা হলে...

অবশ্যই মনে রাখবেন—

• ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র নেবেন।

• মাসে কত তারিখের মধ্যে ভাড়া দিতে হবে, চুক্তিতে তা লেখা আছে তো?

• আর সিকিউরিটি ডিপোজিট ও ভাড়ার অঙ্ক? সংখ্যা ও শব্দে তার উল্লেখ জরুরি।

• তিন মাস ভাড়া না-পেলে নোটিস ছাড়াই উচ্ছেদ করতে পারেন ভাড়াটিয়াকে।

• আর চুক্তি শেষের পরেও তাঁরা বাড়ি খালি করতে না-চাইলে আদালতই ভরসা।

• সম্পত্তির ক্ষতি হলে, সেই খাতে টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে কাটার কথা লিখিত ভাবে রাখা থাকতে হবে।

• ভাড়াটিয়াকে আগাম জানিয়ে সম্পত্তি তদারকির অধিকার। যাতে মাঝেমধ্যে দেখা যায় যে, বাড়ি-ঘর ঠিকঠাক আছে কি না।

• বাড়িওয়ালার বিশেষ দরকারে (ছেলে-মেয়ের বিয়ে, নিজের বা পরিবারের জন্য বাড়তি জায়গা ইত্যাদি) ভাড়াটিয়াকে উঠে যেতে বলার রাস্তা খোলা রাখা। যাকে বলে ‘রিজনেবল রিকোয়ারমেন্ট’।

• চুক্তিপত্র ১০/২০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখে পাবলিক নোটারিকে দিয়ে বৈধ করুন।

লেখক কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী

Clash Land Lord Tenants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy