পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, তামিলনাড়ুর তিরুপুর-কোয়েম্বত্তুর থেকে গুজরাতের আমদাবাদ-সুরাত— সর্বত্র সাধারণ বস্ত্র ব্যবসায়ীরা জিএসটি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তবে, এই নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থার জন্যই নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সাধুবাদ জানালেন বস্ত্রশিল্পের তাবড় উদ্যোগীরা।
রেমন্ড-এর সিএমডি গৌতম সিংঘানিয়া থেকে শুরু করে অরবিন্দ গোষ্ঠীর সঞ্জয় লালভাই— বস্ত্রশিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের দাবি, জিএসটি চালু হওয়ার ফলে এই শিল্পের আরও বৃদ্ধি হবে। গাঁধীনগরে বস্ত্রশিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘টেক্সটাইলস ইন্ডিয়া ২০১৭’-র মঞ্চ থেকে এই শিল্পপতিদের যুক্তি, অসংগঠিত ক্ষেত্রও এ বার সংগঠিত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হবে। আরও বেশি কর্মসংস্থান হবে।
বস্ত্রশিল্পমহলের প্রথম সারির কর্তাদের পাশে পাওয়ার জোরেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকও জানিয়ে দিয়েছে, জামাকাপড়ের উপর ৫ শতাংশ কর বসানো মোটেই অন্যায্য নয়। যাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা পুরোপুরিই করের আওতার বাইরে থাকতে চাইছেন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক মনে করছে, গাঁধীনগরের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১০৬টি দেশ যোগ দেওয়ায় যে-ভাবে এ দেশের বস্ত্রশিল্পের সামনে গোটা দুনিয়ার দরজা খুলছে, তাতে সব মহলের ক্ষোভ দূর হয়ে যাবে। আজ ‘টেক্সটাইলস ইন্ডিয়া’-য় ৬৫টি সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে চিন, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, জাপানের সংস্থাগুলি। গবেষণা, প্রশিক্ষণ, হস্তশিল্প বিপণনের মতো ক্ষেত্রে এ দেশের সংস্থাগুলি বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাত মেলাবে। বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “এখন বস্ত্রশিল্পের স্বর্ণযুগ।” এ দেশে কৃষির পরেই সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান বস্ত্রশিল্পে। সেই শিল্পের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।
আরও পড়ুন: হোঁচট দিয়েই প্রথম দিন শুরু জিএসটি-র
আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর প্রধান কুমার মঙ্গলম বিড়লা বলেন, “মানুষের হাতে খরচ করার অর্থ বাড়ছে। নতুন ক্রেতারা আসছেন। যথেষ্ট বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হচ্ছে”। রেমন্ডের সিএমডি গৌতম সিংঘানিয়া বলেন, “জিএসটি চালু হওয়ায় বস্ত্র ক্ষেত্রে যে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়িত হবে।” গাঁধীনগরের সম্মেলনে এসে অরবিন্দ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় লালভাই বলেন, জিএসটি চালু হলে অসংগঠিত ক্ষেত্র সংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে জুড়ে যাবে। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আদান-প্রদানে বাধা উঠে যাবে। যাঁরা নিয়ম মেনে কর মেটান, তাঁদের আর অসম প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না।
বড় শিল্পপতিরা এ কথা বললেও সুরাত-আমদাবাদের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, জামাকাপড়ে ৫ শতাংশ হারে জিএসটি চাপানো নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। আসল সমস্যা হল পলিয়েস্টার, রেয়ন বা সিন্থেটিক সুতোর উপর জিএসটি-তে ১৮ শতাংশ কর বসা নিয়ে। এর ফলে জামাকাপড়ের কাঁচা মালের দাম বাড়বে। গোটা বস্ত্রশিল্পেই এর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চিনের মতো দেশ থেকে সস্তায় আমদানি হওয়া পণ্যের সঙ্গে এ দেশের বস্ত্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। অর্থ মন্ত্রক অবশ্য এখনই এই যুক্তি মানতে নারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy