একই দিনে নতুন নজির গড়ল দেশের প্রধান দুই শেয়ার সূচক সেনসেক্স এবং নিফ্টি। পিছিয়ে থাকেনি মিডক্যাপ সূচক। সেটিও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। স্মলক্যাপ সূচকও পৌঁছে গিয়েছে ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে উঁচুতে। ফলে সমস্ত ধরনের শেয়ারেই এখন খুশির আবহ। যে কারণে সম্প্রতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে প্রায় সব শেয়ার নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ। ভাল রিটার্ন দেখা যাচ্ছে শেয়ার নির্ভর এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এবং এনপিএস লগ্নিতেও। ফলে স্বস্তিতে শেয়ার এবং শেয়ার নির্ভর বিভিন্ন প্রকল্পের লগ্নিকারীরা।
শুক্রবার ৪৬৭ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স সপ্তাহ শেষ করে ৬৩,৩৮৫ অঙ্কে। যা রেকর্ড। গত বছরের ১ ডিসেম্বর তা ৬৩,২৮৪-তে পৌঁছেছিল। একই দিনে ১৮,৮২৬ পয়েন্টে পৌঁছে নিফ্টিও আগের নজির (১৮,৮১২) ভেঙে দেয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশি ও বিদেশি লগ্নিকারীরা এখন ভারতের অর্থনীতির বুনিয়াদ শক্তিশালী বলে মনে করছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজারে। আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ এই দফায় সুদ না বাড়ালেও চলতি বছরে আরও দু’বার সুদ বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। তার জেরে বৃহস্পতিবার সেনসেক্স নেমেছিল ৩১১ পয়েন্ট। কিন্তু পর দিনই দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দুই সূচক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছয়। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি জুনের প্রথম ১৫ দিনে বাজারে নিট ১০,৭০৫ কোটি টাকার পুঁজি ঢেলেছে।
যে সব কারণে অর্থনীতির ভিত মজবুত বলে মনে করা হচ্ছে তা হল—
- মে মাসে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.২৫ শতাংশে নামা।
- পাইকারি বাজারে মূল্য সঙ্কোচন।
- এপ্রিলে শিল্প বৃদ্ধির হার ৪.২%।
- ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জিএসটি বাবদ ১৮.১০ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ। যা আগের বছরের চেয়ে ২২% বেশি।
- ওই বছর প্রত্যক্ষ কর বাবদ রাজকোষে জমা পড়েছে ১৯.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ২০.৩৩%।
- রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে কেন্দ্র ডিভিডেন্ড পাবে ৮৭,৪১৬ কোটি টাকা।আগের বছর ছিল ৩০,৩০৭ কোটি।
- ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার এখন প্রায় ৬০,০০০ কোটি ডলার।
- ব্যারেলে অশোধিত তেল ৭৫ ডলারের আশেপাশে। সস্তায় বিপুল পরিমাণ তেল আসছে রাশিয়া থেকে।
- অর্থনীতির ভিত আগের তুলনায় অনেক শক্ত— এই যুক্তিতে ভারতের মূল্যায়ন বাড়ানোর জন্য রেটিং সংস্থা মুডি’জ়ের কাছে দাবি পেশ করবে ভারত। রেটিংয়ে উন্নতি হলে কম সুদে বিশ্ব বাজার থেকে ঋণ মিলবে।
- ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির লগ্নি অব্যাহত থাকা।
সূচক এতটা উঁচুতে ওঠার কারণে অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা সংশোধনের কবলে পড়তে পারে বাজার। যদিও বড় মেয়াদে তার মুখ উপরের দিকেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কিছু কিছু আশঙ্কার দিক উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারকে যে সমস্ত শর্ত বেগ দিতে পারে সেগুলি হল—
- দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি। এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
- পশ্চিম দুনিয়ার অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় রফতানিতে ক্রমাগত পতন। মে মাসে ভারতের রফতানি ১০.৪% কমে নেমে এসেছে ৩৪৯৮ কোটি ডলারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)