কাজ থেকে অবসর নেওয়ার সময় হাতে ঠিক কতটা তহবিল থাকা উচিত, সে ব্যাপারে ভারতের সাধারণ মানুষের ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয় বলেই জানাল সমীক্ষা। দাবি করল, সেই সঞ্চয় তৈরির পথ সম্পর্কেও ধন্দ বিস্তর। বুধবার প্রকাশিত ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ মানুষই জানিয়েছেন এক কোটি টাকার তহবিল হলে সচ্ছন্দে অবসর জীবন যাপন করা যাবে। কিন্তু কোন পথে এগোলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব, তা নিয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা। যদিও বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির হার যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে আগামী দিনে এক কোটির বেশি তহবিল হলেও স্বচ্ছলতা বজায় রেখে সংসার চালাতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে মানুষকে। তার উপরে দ্রুত গতিতে বাড়ছে চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষার মতো ক্ষেত্রের খরচ। ফলে তাঁদের মতে, আগামী দিনে অবসরের তহবিল হতে হবে এক কোটির অনেকটা বেশি।
দেশে ২৮টি শহরে ‘ইন্ডিয়া রিটায়ারমেন্ট ইন্ডেক্স স্টাডি (আইরিশ ৫.০)’ সমীক্ষাটি চালিয়েছিল এক্সিস ম্যাক্স লাইফ ইনশিয়োরেন্স। অংশ নেন ২৫-৬৫ বছর বয়সি ২২৪২ জন। তাঁদের অর্ধেক বেতনভুক এবং বাকিরা পেশাদার। প্রত্যেকেরই আয় বছরে ৫ লক্ষ টাকার বেশি। ২০২২ সালের ৪৪-এর তুলনায় আইরিশ সূচক এ বছর ৪৮-এ পৌঁছেছে ঠিকই। কিন্তু তা গত বছরের ৪৯-এর তুলনায় কম।
সমীক্ষা জানাচ্ছে, এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ৫০ শতাংশের মতে, ৩৫ বছর বা তার আগেই অবসরের প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি। খুব ভাল হয় যদি রোজগার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেই পথে হাঁটা যায়। অথচ প্রতি ১০ জনের ৭ জনই মনে করেন অবসরের তহবিল ১ কোটি হলেই যথেষ্ট। তবে অবসর ভাল মতো কাটাতে হলে স্বাস্থ্য যে ভাল থাকতে হবে, তা জানিয়েছেন তাঁরা।
অ্যাক্সিস ম্যাক্স লাইফের নবনিযুক্ত এমডি-সিইও সুমিত মদনের বক্তব্য, অবসরের সঞ্চয় নিয়ে সচেতন হচ্ছেন মানুষ। আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রও জোর দিচ্ছে গিগ কর্মী (যাঁরা মূলত অনলাইন সংস্থার হয়ে পণ্য পৌঁছনো-সহ বিভিন্ন পরিষেবা দেন), মহিলা ও নিজের রাজ্যে ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর। কিন্তু এখনও কোন পথে এগোলে ভাল থাকার মতো টাকা জমবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ফলে চাহিদা বাড়ছে লগ্নি পরামর্শদাতার।
তবে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ শৈবাল বিশ্বাস মনে করাচ্ছেন, এক কোটি টাকা যদি ৬% সুদের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করা যায়, তা হলে বছরে হাতে আসবে ৬ লক্ষ, মাসে ৫০,০০০ টাকা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই টাকায় সংসার চালানো, চিকিৎসার খরচ সামলানো ও সন্তানের উচ্চশিক্ষার মতো ব্যয় এখনই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে এক কোটির তহবিল যথেষ্ট নয়’’
একই বক্তব্য লগ্নি বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন দে-রও। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ মানুষই আর্থিক পরিকল্পনা করার সময়ে মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রাখেন না। বিশেষত মনে রাখা দরকার খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার যে হারে বাড়ে, চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্য বিমার খরচ বাড়ে তার প্রায় তিনগুণ হারে। অর্থাৎ, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৫% হলে দ্বিতীয়টি হয় প্রায় ১৫%। তাই এক কোটি ধরে এগোলে আখেরে সমস্যায় পড়তে হবে। যা নিশ্চিন্ত অবসরের পথে বড় বাধা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)