Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
শেয়ারে লম্বা মেয়াদে লগ্নির বিপদ কম
Coronavirus

কর বাঁচানোর ফান্ড কেনার সময় এটাই

সূচকের এই বিপুল পতনের সময় শেয়ার বেচতে গেলেই লোকসান।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৪:৫৫
Share: Save:

গোটা বিশ্ব আতঙ্কের গ্রাসে। দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের ঘুম কেড়েছে করোনাভাইরাসের ত্রাস। এই অবস্থায় বিপর্যস্ত শেয়ার বাজার। সূচকের এমন দ্রুত অবতরণ গত এক দশকে দেখা যায়নি। যে সেনসেক্স ক’মাসে আগে ৪২ হাজারে পৌঁছেছিল, তা-ই গত সপ্তাহে নেমেছিল ২৭ হাজারের ঘরে। এক-একটি দিনে কমবেশি ১০ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ মুছে যাচ্ছিল লগ্নিকারীদের খাতা থেকে। তবে নাগাড়ে তলিয়ে যাওয়া বাজার শুক্রবার কিছুটা ওঠে। ১৬২৮ বেড়ে সেনসেক্স দাঁড়ায় ২৯,৯১৬ অঙ্কে। এক সময় ১২,০০০ পয়েন্ট অতিক্রম করা নিফ্‌টি এখন ৮৭৪৫ অঙ্কে। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে এখনও পর্যন্ত বাজার নেমেছে প্রায় ২৯%।

সূচকের এই বিপুল পতনের সময় শেয়ার বেচতে গেলেই লোকসান। যে কারণে উদ্বিগ্ন ছোট মেয়াদে লগ্নিকারীরা। তবে তুলনায় বিপদ কম তাঁদের, যাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য শেয়ার কিনেছেন। কারণ, এর আগে যত বার সূচক এমন বিপুল হারে পড়েছে, পরে প্রত্যেকবারই দ্বিগুণ শক্তিতে আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির ক্ষেত্রে পুষিয়ে গিয়েছে লোকসান।

এই অসময় আশার আরও একটি বার্তা রয়েছে। কর সাশ্রয়ের জন্য এখনও যাঁরা সঞ্চয় করেননি, তাঁরা এই সুযোগে ইএলএসএস (শেয়ার নির্ভর) ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। যাঁরা ৩০% ও ২০% করের আওতায় পড়েন, তাঁরা ৮০সি ধারায় ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত লগ্নি দাঁড়াবে (কর ছাড় বাদ দিয়ে) যথাক্রমে ১.০৫ লক্ষ এবং ১.২০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এই জায়গা থেকে দাম আরও নামলেও তাঁদের তাৎক্ষনিক লোকসানের আশঙ্কা কম। বরং পরে বাজার উঠলে বড় মাপের লাভের দেখা মিলতে পারে।

এই বাজারে শেয়ারে লগ্নি করা যেতে পারে ইল্ড বা ডিভিডেন্ড বাবদ প্রকৃত আয়ের কথা মাথায় রেখেও। বুদ্ধিমানের কাজ হবে ফান্ডে এসআইপি চালিয়ে যাওয়া। বাজারে বন্ডের দাম যাতে পড়ে না-যায় এবং নগদের জোগান যাতে বাড়ে, সে জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রথমে ১০,০০০ কোটি এবং পরে আরও ৩০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড বাজার থেকে কিনবে। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি টানা মোটা টাকার শেয়ার ও বন্ড বেচতে থাকায় শেয়ার ও বন্ডের পাশাপাশি রেকর্ড তলানিতে নেমেছে ডলারের নিরেখে টাকার দামও। গত সপ্তাহ শেষে এই প্রথম এক ডলার পৌঁছেছে ৭৫.২০ টাকায়। ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার এখন বেশ মজবুত। আশা, ডলারের দাম কমাতে আরবিআই খোলা বাজারে ডলার বেচতে থাকবে।

করোনার জেরে বহু শিল্পে উৎপাদন প্রায় স্তব্ধ। ধাক্কা লেগেছে পরিষেবায়। বাণিজ্য তলানিতে। অতি সংবেদনশীল শেয়ার বাজারে এর প্রভাব তো পড়বেই। বেশি ঝুঁকি এড়াতে যাঁরা শেয়ার বাজারের বদলে ফান্ডে টাকা রেখেছেন একটু বেশি আয়ের আশায়, লোকসানের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন তাঁরাও। তবে এখানেও বিপদ কম দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নিকারীদের। শুধু ইকুইটি ফান্ডই নয়, কিছুটা হলেও নেমেছে বন্ড ফান্ড।

বাজার আরও নামলে সাধারণ লগ্নিকারী ছাড়াও বিপাকে পড়বে সেই সব সংস্থা, যাদের শেয়ারে মোটা লগ্নি আছে। চলতি অর্থবর্ষ শেষে শেয়ারের লোকসানকে খাতায় নিতে হবে সংস্থাগুলিকে। এতে কমতে পারে বহু সংস্থার মুনাফা। কোনও কোনও সংস্থা আবার দাম কমার সুযোগ নিয়ে নিজেদের শেয়ারই নিজেরাই কিনে বাজার থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার (বাইব্যাক) পথে হাঁটতে পারে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus BSE Share Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE