গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২৫-’২৬ সালের অর্থবর্ষের বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর বয়ে আনলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটের শুরুতেই মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট পেশের সময়ে কথা রাখলেন নির্মলা। জনগণের বিরাট একটি অংশ করছাড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও দেশের বাণিজ্য নিয়ে সে ভাবে কোনও চমক বা বড় ঘোষণা নেই এই বাজেটে। আর্থিক বৃদ্ধির গতি এমনিতেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। সরকারি পূর্বাভাসই বলছে, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশে আটকে থাকবে, গত চার বছরে যা সর্বনিম্ন। অর্থনীতিতে নতুন লগ্নি বা শিল্পমহলের বিনিয়োগেও ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। পূর্বসূরিদের মতো জনমুখী ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ বাজেট পেশেই মন দিলেন নির্মলা, এমনটাই মত অর্থনীতিবিদদের একাংশের। মনমোহন সিংহ ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে যে ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের নমুনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল তার তুলনায় নেহাতই সাদামাঠা এই বাজেট। শিল্পমহলকে কী করতে হবে, অর্থনীতিতে গতি আনতে ও আর্থিক বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করার জন্য বাজেটে বড় শিল্পের জন্যে একটিও বাক্য খরচ করেননি অর্থমন্ত্রী।
মূল্যবৃদ্ধির জেরেও সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। মানুষের আয় সে ভাবে বাড়েনি। সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় খরচ মাত্রাছাড়া। সেই সমস্যার সমাধানের কোনও ইঙ্গিত মেলেনি নির্মলার কথায়। খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক ছিল, তা আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ বাড়তে পারে, এমন কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকেও বিরত থেকেছেন অর্থমন্ত্রী। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করার কোনও বার্তাই দেওয়া হয়নি এই বাজেটে, মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করতে গিয়ে নির্মলা জানান, মধ্যবিত্তদের উপর ভরসা রাখছে সরকার। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে দিতে হবে না কোনও কর। আমজনতার জন্য নির্মলার এটাই ছিল বাজেটের বিশেষ উপহার।
২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের ব্যয় বরাদ্দকে কেন্দ্র করে আমজনতা থেকে শুরু করে শিল্প সংস্থার মধ্যে প্রত্যাশার পারদ চড়ছিল। বাজেট পেশের শুরুতেই আগামী পাঁচ বছরে ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি কৃষক, নারী, ক্ষুদ্রশিল্পকে চাঙ্গা করার লক্ষে এই বাজেটে বেশ কিছু প্রকল্প ও আর্থিক বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন তিনি। বিদ্যুৎ, কৃষি এবং ক্ষুদ্রশিল্প-সহ ছ’টি ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা জানান তিনি। তবে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় অর্থনীতিকে কী ভাবে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেই পথ স্পষ্ট হল না বাজেটে।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
‘প্রধানমন্ত্রী ধন ধান্য কৃষি যোজনা’র আওতায় দেশের দেড় কোটি কৃষককে সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানান নির্মলা। পঞ্চায়েত, ব্লক স্তরে ফসল সংগ্রহের পরে তা ঠিক ভাবে সঞ্চয় করে রাখা, সেচকে শক্তিশালী করতে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণে নিতে উৎসাহ দেবে সরকার। ভোজ্য তেল এবং ডালজাতীয় শস্যে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করবে ভারত। ভোজ্য তেলে স্বনির্ভরতার জন্য ছয় বছরের মিশন শুরুর কথাও বলা হয়েছে বাজেটে। লাভজনক মাখনা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে বিহারে একটি আলাদা বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা হয়েছে এই বা়জেটে। কিসান ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণও তিন লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে তা পাঁচ লক্ষ করা হয়েছে নতুন বাজেটে। তুলো চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করছে সরকার। ভারতের টেক্সটাইল সেক্টরকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য তৈরি হবে ‘তুলো উৎপাদনশীলতা মিশন’।
মহিলাদের জন্য বেশ কিছু ঘোষণা করেছেন নির্মলা সীতারামন। প্রথম উদ্যোগপতি পাঁচ লক্ষ তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিভুক্ত মহিলারা দু’কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন— বাজেট পেশ করার সময় ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর। এ ছাড়াও অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের আওতায় মহিলা ও সদ্য মায়েদের জন্য বিশেষ পুষ্টি প্রকল্পের ঘোষণা করলেন নির্মলা।
বড় শিল্পের জন্য কোনও পরিকল্পনা না থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে ২০২৫-’২৬-এর বাজেটে। এই শিল্পের ক্রেডিট গ্যারান্টি কভার ৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হবে। মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ়গুলির জন্য ৫ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বসীমা পর্যন্ত ‘কাস্টমাইজ়ড ক্রেডিট কার্ড’ চালু করবে সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা জানান হকারদের জন্য ইউপিআই লিঙ্ক করা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
মেডিক্যাল কলেজগুলির জন্য ঢালাও ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আগামী পাঁচ বছরে ৭৫ হাজার আসন বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী বছর বৃদ্ধি করা হবে ১০ হাজার আসন। পাশাপাশি, সমস্ত জেলা হাসপাতালে ক্যানসার সেন্টার তৈরির কথা জানালেন নির্মলা। ৩ বছরে মোট ২ হাজার ক্যানসার সেন্টার তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা।
বড় ও ভারী শিল্পের মধ্যে একমাত্র বিমানশিল্পের কথাই উল্লিখিত হয়েছে নির্মলার বাজেটে। দেশে নতুন ১২০টি বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তার মধ্যে রয়েছে বিহারে একাধিক নতুন বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা। আগামী ১০ বছরে আঞ্চলিক বিমানবন্দরের জন্য ১০০টিরও বেশি নতুন জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। পাশাপাশি, সম্প্রসারিত হবে পটনা বিমানবন্দরও। পটনা বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। মগধভূমের শিল্প ও পরিষেবা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য চারটি নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর এবং বিহতায় একটি ব্রাউনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের কথাও বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তি খাতে জোর দেওয়া হতে পারে এই বাজেটে, এমনটাই পূর্বাভাস ছিল। প্রত্যাশামতোই এই ক্ষেত্রে ঘোষণা হয়েছে নির্মলার বাজেটে। ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’। ২০১৪ সালের পর তৈরি পাঁচটি আইআইটি-তে অতিরিক্ত পরিকাঠামোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে বাজেটে। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আগামী পাঁচ বছরে ৭৫ হাজার আসন বৃদ্ধির ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর। আগামী বছর বৃদ্ধি করা হবে ১০ হাজার আসন।
জীবনদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রে বড় ঘোষণা ছিল অষ্টম বাজেটে। ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে শুল্ক তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ক্যানসার-সহ দুরারোগ্য রোগের জন্য ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে প্রত্যাহার করে নেওয়া হল শুল্ক। পাশাপাশি, ৬টি জীবনদায়ী ওষুধে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। শহুরে কর্মীদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য বিশেষ প্রকল্প আনছে সরকার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের কল্যাণের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প স্থাপন করা হবে। অনলাইন ডেলিভারি কর্মীদের পরিচয়পত্র সরকারি পোর্টালে নিবন্ধিত করা হবে, ঘোষণা করেছেন নির্মলা সীতারামন।
আগামী সপ্তাহেই সংসদে পেশ হবে নতুন আয়কর বিল। শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট বক্তৃতায় সে কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আয়করের নতুন আইন তৈরি হলে করদাতারা যথেষ্ট সুরাহা পাবেন বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি। বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে ১০০ শতাংশ করা হবে বলেও ঘোষণা করেছেন নির্মলা। বাজেটে প্রবীণ নাগরিকদের সুখবর শুনিয়েছেন নির্মলা। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ এক লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছেন তিনি। জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পে কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। অগস্ট বা তার পরে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প অ্যাকাউন্টগুলিকে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy