E-Paper

তিন বছরে ২০% বাড়বে কৃষি রফতানি, সুবিধা মৎস্যজীবীদেরও! ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্যচুক্তিতে কী কী সুবিধা?

চুক্তি অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ হয়, এমন ক্ষেত্রের সিংহভাগ পণ্যই ব্রিটেনে রফতানিতে শুল্ক বসবে না। যেমন— কৃষি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র, চামড়া, রাসায়নিক, সামুদ্রিক পণ্য, রত্ন-অলঙ্কার ইত্যাদিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:২১
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। বৃহস্পতিবার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের ছোট-মাঝারি শিল্প উপকৃত হবে, আশা মোদী সরকারের।

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আজ ভারত-ব্রিটেনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের দাবি, এর ফলে আগামী তিন বছরে কৃষিপণ্যের রফতানি ২০% বাড়বে এবং তার সুফল পাবেন দেশের চাষি থেকে মৎস্যজীবীরা। চুক্তি অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ হয়, এমন ক্ষেত্রের সিংহভাগ পণ্যই ব্রিটেনে রফতানিতে শুল্ক বসবে না। যেমন— কৃষি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র, চামড়া, রাসায়নিক, সামুদ্রিক পণ্য, রত্ন-অলঙ্কার ইত্যাদিতে। ফলে ওই বাজারে ভারতের কৃষিপণ্য ব্রাজ়িল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশরের মতো দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। আমেরিকা, চিন, তাইল্যান্ডের মতো দেশের থেকে বাড়তি সুবিধা পাবে ভারতের প্রক্রিয়াজাত খাবার। বস্ত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বা কম্বোডিয়ার সঙ্গে এঁটে উঠতে সুবিধা হবে। মন্ত্রকের বার্তা, মহিলাদের ক্ষমতায়নও হবে। মহিলারাই ছোট-মাঝারি শিল্পের মেরুদণ্ড। পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, তামিলনাড়ুতে এমন শিল্পগুচ্ছের জন্য ওই দেশে রফতানি সহজ হয়ে যাবে।

অন্য দিকে, ভারতে আসা ব্রিটেনের স্কচ হুইস্কি, চকোলেট, স্যামন মাছ থেকে দামি ব্যাটারি চালিত গাড়ি (ইভি) সস্তা হয়ে যাবে। সে দেশের সংস্থাগুলি স্পর্শকাতর ক্ষেত্র বাদে এখানকার সরকারি জিনিসপত্র বরাত পাওয়ার দরপত্রেও অংশ নিতে পারবে। ব্রিটেনের পণ্যে এখন গড়ে ১৫% শুল্ক বসে। তা ৩ শতাংশে নামবে। সেখান থেকে ভারতে রফতানির ৯২% ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি শুল্ক তুলে নিচ্ছে বা কমাচ্ছে।

তবে কেন্দ্র এটাও জানিয়েছে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, আনাজ, আপেল, ভোজ্য তেল, ওটসের মতো ক্ষেত্রের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। ব্রিটেনে তৈরি গাড়িতে শুল্ক ছাড় থাকলেও, তা মূলত বেশি ক্ষমতাশালী ইঞ্জিনেরগুলিতে। কম দামি ইভি-র বাজারও খোলা হচ্ছে না। ফলে ভারতে তৈরি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের ব্যাটারি চালিত গাড়ির অসুবিধা হবে না। শুধু ৮০ হাজার পাউন্ডের বেশি দামির বাজার খুলছে। ব্রিটেন প্রায় ৩৭৫২ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি করলেও, ভারত থেকে মাত্র ৮১ কোটি ডলারের কেনে। ফলে চা, কফি, মশলা, তৈলবীজ, আঙুরের মতো দামি কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিপুল। গোয়ার ফেনি থেকে কেরলের টোডির মতো দেশীয় পানীয় সে দেশের সুপারমার্কেটে জায়গা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মারের উপস্থিতিতে চুক্তি সই হয়েছে। মোদী একে ‘ঐতিহাসিক দিন’ আখ্যা দিয়েছেন। দাবি করেছেন, তরুণ প্রজন্ম, কৃষক, মৎস্যজীবী ও ছোট-মাঝারি শিল্প উপকৃত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রকের যুক্তি, ব্রিটেনের ৭৫ হাজার ভারতীয় কর্মীকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে যে টাকা দিতে হয়, তা থেকে তিন বছর ছাড় পাবেন। পেশাদারদের সুযোগ বাড়বে। প্রায় ১৮০০ রাঁধুনি, যোগাসন প্রশিক্ষক, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞেরা সাময়িক ভাবে কাজ করতে ব্রিটেনে যেতে পারবেন। সংসদের বাদল অধিবেশনের মধ্যেই ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদী সরকার এই চুক্তি নিয়ে প্রচারে নামছে। তাদের দাবি, এতে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির দর কষাকষিতেও সুবিধা হবে।

অবাধ বাণিজ্যে ভারতের সুবিধা

ফল, আনাজ, খাদ্যশস্য, হলুদ, গোলমরিচ, দারচিনি এবং প্রক্রিয়াজাত মোড়কবন্দি তৈরি খাবার, আচার, ডাল ইত্যাদিতে ব্রিটেনে শুল্ক বসবে না।

৯৫ শতাংশের বেশি কৃষি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারেও শূন্য শুল্ক। কৃষকেরা ৩৭৫০ কোটি ডলারের বাজারে ব্যবসার সুবিধা পাবেন।

মৎস্যজীবীরা পাবেন সামুদ্রিক পণ্যের ৫৪০ কোটি ডলারের বাজার।

বস্ত্র, রাসায়নিক, চামড়া ইত্যাদি শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান বাড়বে।

বহু ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে শুল্ক ওঠায় কিংবা কমায় সেগুলি রফতানির অঙ্ক পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হতে পারে।

ব্রিটেনের ৭৫ হাজার ভারতীয় কর্মীকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে যে টাকা দিতে হয়, তা থেকে তিন বছর ছাড় পাবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-UK Trade Talk

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy