জাহাজ মন্ত্রকের ডাকে সাড়া দিয়েছে দেশের সমুদ্র তীরবর্তী বিভিন্ন রাজ্য। অনুপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। মুম্বইতে সোমবার শুরু হওয়া পাঁচ দিনের ‘ইন্ডিয়ান মেরিটাইম উইক ২০২৫’ সম্মেলনে যোগ দিয়েছে তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরলের মতো বিরোধী শাসিতরাও। সূত্রের দাবি, জলপথ এবং বন্দরের উন্নতি রাজ্য এবং দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর দিশা খোঁজাই এই সম্মেলনের লক্ষ্য। তাই সাড়া মিলেছে। মন্ত্রক কর্তাদের আক্ষেপ, সমুদ্র তীরের রাজ্য হিসেবে বাংলার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু বহুবার বলার পরেও তারা যোগ দিল না। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, সচরাচর এই ধরনের সম্মেলনে আধিকারিকেরা গিয়ে থাকেন। মুম্বইয়ের এই সম্মেলনের জন্য সরকারি স্তরে আমন্ত্রণ এসেছিল কি না, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল বাংলার নাম উচ্চারণ করেননি। তবে দাবি করেছেন, সকলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ কেন গরহাজির, তা নিয়ে অবশ্য কোনও কথার জবাব দেননি তিনি। জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও জানান, রাজ্যগুলিকে জল পরিবহণ ক্ষেত্রের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল করাই সম্মেলনের লক্ষ্য। এ দিন এটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন মহারাষ্ট্র, গুজরাত, গোয়া, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীরা। বড় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাডু, অসম। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির প্যাভিলিয়নও রয়েছে। সেখানে এই ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব তুলে ধরবে তারা। অনেকে আলাদা করে সভাও করবে। লগ্নি টানতে নিজেদের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করবে। তবে এ ক্ষেত্রেও নেই বাংলা।
অমিত এ দিন বলেন, “১৩টি উপকূলবর্তী রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সকলের উন্নতিই লক্ষ্য। দেশে ১১ হাজার কিলোমিটারের বেশি উপকূল। সেখানকার রাজ্যগুলিতেই অর্ধেকের বেশি মানুষের বাস। ফলে বন্দরকে কেন্দ্র করে তাদের উন্নতি জরুরি।” সূত্রের দাবি, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়তে চায় বাংলা। তাই মুম্বইয়ে এলে তাদেরই লাভ হত। রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ শীর্ষকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনে যোগ দিয়েছে আদানি পোর্ট এবং জেএসডব্লিউ ইনফ্রাও। তাজপুরের বরাত পেতে জোর লড়াই চালিয়েছিল যারা। শিঁকে ছেঁড়ে আদানিদের। তবে তা রাজ্য পরে বাতিল করে দেয় বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে এ দিন জিজ্ঞাসা করা হলে দুই সংস্থার শীর্ষকর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
সোনওয়াল জানান, সম্মেলনে থাকছে ৯টি রাজ্যের জন্য আলাদা রাজ্যওয়াড়ি সম্মেলন। তার মধ্যে বিরোধী শাসিত রাজ্যও রয়েছে। থাকছেন ৮৫টি দেশের কয়েক হাজার প্রতিনিধি। অমিতের দাবি, বহু দেশ যোগ দিয়েছে। কমপক্ষে ১০ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি আসছে। কেন্দ্রের লক্ষ্য কয়েক বছরের মধ্যে জলপথ ও বন্দর উন্নয়নে বিশ্বের প্রথম সারিতে আসা। তাই এই ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে। যার অঙ্গ হিসেবে ৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ৪৪,০০০ কোটি টাকা) খরচে গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প করা হচ্ছে। এটি চালু হলে জলপথে ভারতের বাণিজ্য কয়েক গুণ বাড়বে। প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে বিতর্ক ছিল। সোনওয়ালের দাবি, ২০৪৭-এর মধ্যে দেশকে যাতে বিশ্বের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে আসে সেটাই এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।
এই সম্মেলন থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট (পূর্বতন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট) কর্তৃপক্ষ বিবিধ ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা লগ্নির লক্ষ্যে মউ স্বাক্ষর করতে চলেছে। যার পুরো প্রকল্পই হবে বাংলার বিভিন্ন জায়গায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)