Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Nirmala Sitharaman

কী পেলাম

বাজেট এল। চলেও গেল। কিন্তু রেখে গেল অনেক প্রশ্ন। কতটা লাভ হল আমার-আপনার? নতুন কর-কাঠামো কি বাড়তি কিছু দিল, নাকি তা আদতে বাড়াল ধন্দ? উত্তর খুঁজছেন অমিতাভ গুহ সরকারকোন পথে সুবিধা বা অসুবিধা কতটা, কোনটাই বা অপেক্ষাকৃত লাভজনক।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:০৭
Share: Save:

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কর্পোরেট কর কমিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে আশা তৈরি হয়েছিল, সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিতে বাজেটে ব্যক্তিগত করে রদবদল করবেন। হয় কমানো হবে করের হার, নয়তো বাড়বে ছাড়। বাজেট পেশের পরে দেখা গেল, কিছু ক্ষেত্রে কর কমেছে ঠিকই। কিন্তু তার সুযোগ নিতে গেলে ছাড়তে হবে ছাড়ের সুবিধা। আবার বলা হয়েছে, চাইলে এখনকার মতোই করছাড়ের সুবিধা পেতে পারেন। তবে তার বদলে বাকি আয়ে কর চাপবে চালু হারেই। ফলে আমজনতা পড়েছেন মহা ফাঁপড়ে। কোন পথে এগোলে ভাল, তা নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে সরগরম চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে শুরু করে বাস, ট্রেনের কামরা। আজ আমাদের আলোচনায় সেই পথের হদিসই নেব আমরা। দেখব, কোন পথে সুবিধা বা অসুবিধা কতটা, কোনটাই বা অপেক্ষাকৃত লাভজনক।

ঘোষণা কী

• এ বার থেকে আয়করের ক্ষেত্রে মানুষের সামনে থাকবে দু’টি বিকল্প। একটিতে মিলবে চালু থাকা সমস্ত ধরনের করছাড়ের সুবিধা। তবে তাতে করের হার থাকবে আগের মতোই শূন্য, ৫%, ২০% এবং ৩০%।

• দ্বিতীয় ক্ষেত্রে করের হার কমে হবে শূন্য, ৫%, ১০%, ১৫%, ২০%, ২৫% এবং ৩০%। কিন্তু সেখানে ৭০টি ছাড়ের সুবিধা থাকবে না।

• চাইলে চাকুরিজীবীরা প্রতি বছর দু’টি বিকল্পের মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে পারবেন। অর্থাৎ, এক বছর প্রথমটি নিলে পরের বছর তা বদলে দ্বিতীয়টি বাছা যাবে।

• ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অবশ্য এক বার কোনও একটিকে বেছে নিলে পাল্টানোর সুযোগ থাকবে না।

• নতুন বিকল্প কর-কাঠামো চালু হবে ২০২০-২১ সাল থেকে।

কোনটা ভাল

এক কথায় কোনটা ভাল, তা বলার উপায় নেই। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার পরিস্থিতির উপরে। যেমন ধরুন, তরুণ প্রজন্মের কেউ প্রথম চাকরিতে ঢুকেছেন। মাইনে খুব একটা মন্দ নয়। এখনও সে ভাবে সঞ্চয় শুরু করেননি। নেই পরিবারের দায়ও। তাঁর ক্ষেত্রে হয়তো ছাড়ের সুবিধা না-নিয়ে এক বারে কর মিটিয়ে হাতে বেশি টাকা আসার দ্বিতীয় বিকল্পই ভাল।

কিন্তু কেউ যদি ৮০সি ধারার বিভিন্ন প্রকল্পে (জীবন বিমা, পিপিএফ, ইএলএসএস ইত্যাদি) সঞ্চয় শুরু করে থাকেন বা নিয়ে থাকেন গৃহঋণ, তাঁর এখনকার নিয়মেই থেকে যাওয়া বেশি ভাল হতে পারে।

আবার প্রথম ব্যক্তিই যদি সংসারের দায়িত্ব নেন, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনেন, তখন তিনিও হয়তো আসতে চাইবেন প্রথম বিকল্পে।

অর্থাৎ, একেক জনের জন্য একেকটি বিকল্প ভাল হতে পারে। তা বাছতে হবে নিজের পরিস্থিতিতে বুঝে। হাতে এখনও কিছুটা সময় রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে।

বুঝব কী ভাবে

বাজেটের পরে অনেকেই জানতে চাইছেন, কী ভাবে বুঝব কেমন করে যে কোন কাঠামো আমার জন্য সুবিধার। এর একটা উপায় হল খাতা পেন নিয়ে বসা। এ জন্য—

• প্রথমে করছাড় মেলে, এমন সব ধরনের আপনার লগ্নির হিসেব কষুন। দেখুন, মোট কত টাকা করছাড় পাওয়া যাচ্ছে। এ বার তা বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় হিসেব করুন। তার উপরে আপনার করের হার অনুযায়ী কর হিসেব করতে হবে।

• দ্বিতীয় কাঠামোয় ৮০সি ধারায় করছাড় মিলবে না। থাকবে না অন্য অনেক করছাড়ের সুবিধাও। ফলে সেগুলি ছাড়া কর হিসেব করতে হবে।

• দেখুন দু’টির মধ্যে কোন কাঠামোয় কর বাবদ দায় কম। সেটাই বাছতে হবে বিকল্প হিসেবে।

বোঝার সুবিধার জন্য সারণিতে তিনটি কাল্পনিক উদাহরণ দিয়েছি। দেখানোর চেষ্টা করেছি এক জন আয়করদাতা পুরনো ও নতুন, দুইয়ের মধ্যে কোন ব্যবস্থায় বেশি লাভবান হতে পারেন। তবে এখানে সাধারণ কিছু ছাড়ের কথা ধরেছি। তার বাইরেও আরও ছাড় ধরলে প্রথম বিকল্পে দেয় কর কমবেশি হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই বয়স ধরা হয়েছে ৬০-এর কম।

কোনটা গেল, কী রইল

আগেই বলেছি, বর্তমানে চালু ১০০টিরও বেশি আয়কর ছাড়ের মধ্যে ৭০টিই তুলে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় প্রকল্পও। ফলে কোন বিকল্প বাছবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল ভাবে দেখতে হবে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল এমনই কিছু ছাড়ের তালিকা, যা নতুন বিকল্প কর-কাঠামোয় তুলে নেওয়া হয়েছে।

তবে এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে, পিপিএফের মতো কিছু প্রকল্প রয়েছে, যাতে করছাড় থাকুক বা না-থাকুক, তা চালিয়ে যাওয়াই ঠিক। কারণ, এতে সুদ ব্যাঙ্ক জমার চেয়ে বেশি এবং সেই সুদ ও হাতে আসা মোট টাকা করমুক্ত।

তেমনই নতুন বিকল্পে স্বাস্থ্য বিমায় করছাড় না-মিললেও, তা বন্ধ করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

এ ছাড়াও কী

করের হার ও স্তর বদল ছাড়াও বাজেটে এমন কিছু ঘোষণা হয়েছে, যা প্রভাব ফেলবে আমাদের জীবনে। এখানে দেওয়া হল তারই কয়েকটি—

• প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত বিবাদ মেটাতে ‘বিবাদ সে বিশ্বাস’ প্রকল্প এনেছে কেন্দ্র। এর আওতায় ৩১ মার্চের মধ্যে বকেয়া কর মিটিয়ে দিলে সুদ বা জরিমানা দিতে হবে না। তার পরে ৩০ জুনের মধ্যে তা মেটালে করের উপরে অতিরিক্ত ১০% দিতে হবে।

• সংস্থার ডিভিডেন্ট বণ্টন কর তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বদলে সেই দায় চাপবে ডিভিডেন্ড প্রাপকের উপরে। অর্থাৎ, পরের অর্থবর্ষ থেকে কোনও সংস্থার শেয়ারে টাকা খাটিয়ে যে ডিভিডেন্ড পাবেন, তা আয়ের সঙ্গে যোগ করে করের হিসেব করতে হবে।

• মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ডিভিডেন্ড ৫,০০০ টাকা ছাড়ালে ১০% উৎস কর বসানোর প্রস্তাব আনা হয়েছে। যা বসবে শুধু প্রাপ্য ডিভিডেন্ডের উপরেই। ইউনিট ভাঙানোয় নয়।

• ইপিএফ, এনপিএস বা অন্যান্য অবসর প্রকল্পে কারও অ্যাকাউন্টে নিয়োগকারীর জমা টাকা বছরে ৭.৫০ লক্ষ পেরোলে, বাড়তি টাকায় কর্মী করছাড় পাবেন না। উল্টে অতিরিক্ত জমায় সুদ বা ডিভিডেন্ড বাবদ আয়ে চাপবে কর। যা দিতে হবে কর্মীকেই।

• বিদেশে বছরে ৭ লক্ষের বেশি পাঠালে, দিতে হবে উৎসে কর।

• অনাবাসী ভারতীয়ের এ দেশে থাকা সম্পত্তি থেকে আয় হলে, তার উপরেও কর দিতে হবে।

• এত দিন ব্যাঙ্কে সব ধরনের জমা (স্থায়ী, রেকারিং, সেভিংস ইত্যাদি) মিলিয়ে ১ লক্ষ টাকায় গ্যারান্টি মিলত। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লক্ষ।

• বাড়ি ঋণের সুদে বাড়তি ১.৫ লক্ষ টাকার উপরে করছাড়ের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

এটা ঠিক যে, কিছু বিষয়ে এখনও বিভ্রান্তি রয়েছে। আগামী দিনে কেন্দ্র সেগুলি স্পষ্ট করলে বুঝতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Budget 2020 Union Budget 2020 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE