ডাক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর যুক্তিতে অনেক ডাকঘর বন্ধ করে দিচ্ছে ডাক বিভাগ। সেগুলিকে মিশিয়ে দিচ্ছে এলাকার তুলনায় বড় ডাকঘরের সঙ্গে। কলকাতা-সহ প্রথম শ্রেণির শহরে সেই কাজ শুরু হতেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ আন্দোলনে নেমেছে কর্মী সংগঠনগুলি। তবে সূত্রের খবর, তার মধ্যেই এ বার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির শহরে সেই প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশিকা জারি হয়েছে ৩ জুন। গত ৩ জুন এক নির্দেশিকা জারি করে ডাক বিভাগ জানিয়েছে, দেশের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির শহরগুলির ডাক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য কোন কোন ডাকঘরের সংযুক্তিকরণ এবং স্থানান্তরকরণ দরকার, সেই পরিকল্পনা ৯ জুনের মধ্যে প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানকে বিস্তারিত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। আর তারপর সমগ্র প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হবে ৩০ জুনের মধ্যে। তার পরেই উঠেছে প্রশ্ন, ডাক বিভাগের এত তাড়াহুড়ো কীসের? সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে আরও সময় প্রয়োজন।
সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির বা বড় শহরগুলিতে এই সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া চলেছে। কর্মী সংগঠনগুলি যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছে। ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের মধ্যে কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলেই প্রায় ২৫টি ডাকঘর সংযুক্তির খবর সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গোটা রাজ্যে শতাধিক ডাকঘরের এমন সংযুক্তিকরণ হবে। তবে ডাক বিভাগ সূত্র এটাও জানাচ্ছে, আচমকা এই সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র। ২০০৭-০৮ নাগাদ কেন্দ্রে পূর্বতন ইউপিএ সরকার দেশের ডাক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ সংস্থা ম্যাকিনসে-কে নিয়োগ করে। ২০১২-এ সংস্থাটি রিপোর্ট দেয়, ৯৭৯৭ টি ডাকঘর তুলে দিতে হবে। কিন্তু ডাক কর্মী সংগঠনের লাগাতার ধর্মঘটের হুমকির মুখে পড়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিব্বল সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরে ঘোষণা করেন, কোনও ডাকঘর বন্ধ হবে না। শুধু স্থানান্তর হবে।
ডাক কর্মী সংগঠনের একাংশের দাবি, এক যুগ পরে ফের সেই রিপোর্টই অনুসরণ করছে মোদী সরকারের ডাক বিভাগ। যদিও এই কথা সরকারি ভাবে কোনও পক্ষই স্বীকার করেনি। তবে যে ভাবে অত্যন্ত দ্রুত এই প্রক্রিয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে ডাকঘর স্থানান্তকরণ করার রিপোর্ট কতটা জমা পড়বে তা সন্দেহের। পশ্চিমবঙ্গ পোস্টাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩ জুন নির্দেশিকা জারি করে ৯ জুনের মধ্যে সমগ্র পরিকল্পনা জমা করে তা ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত করতে বলা অবাস্তব। সেটা কার্যক্ষেত্রে করা কখনওই সম্ভব নয়। তাঁরা মনে করছে, এত দ্রুত ডিভিশনের সুপারদের পক্ষে ডাকঘর স্থানান্তর পরিকল্পনার তুলনায় সংযুক্তির পরিকল্পনা জমা দেওয়া সহজ। বাস্তবে হয়তো সেটাই হচ্ছে।
দেশের পাশাপাশি, গোটা রাজ্য জুড়ে ডাকঘর সংযুক্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে কর্মী ইউনিয়নগুলি। পোস্টাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে বুধবার যোগাযোগ ভবনে সকাল থেকে অনশন কর্মসূচি চলবে। অন্দোলনে যোগ দিচ্ছে স্মল সেভিংস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন-সহ নানা সংগঠন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)