Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Business

শেষ বেলার হিসেব

আজ মধ্যরাত পার হলেই নতুন বছর। স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় সবাই। তবে মনে রাখবেন, ক্যালেন্ডারের পাতা শেষ হলেও অর্থবর্ষ ফুরোতে এখনও তিন মাস। সঞ্চয়-বিনিয়োগের হিসেব যা বাকি রইল, তা ঝালিয়ে নিতে সময় রয়েছে ওটুকুই। মনে করাচ্ছেন শৈবাল বিশ্বাসতার জন্য আগাম শুভেচ্ছাও রইল। তবে একটা কথা ভুলবেন না। মানিব্যাগটা গুছিয়ে রাখতে না-পারলে সমস্ত আশাই অগোছালো হয়ে যেতে পারে।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:১০
Share: Save:

দেওয়াল থেকে পুরনো ক্যালেন্ডার সরিয়ে নতুন বছরেরটা ঝুলিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বছর শেষে ছোট পরিসরে হলেও পার্টি-পিকনিকের যা ধুম দেখা যাচ্ছে তাতে পরিষ্কার, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছেন সকলে। সবার আশা, ২০২১ সাল নিশ্চয়ই একেবারে অন্য রকম হবে।

ভাল হলেই ভাল। তার জন্য আগাম শুভেচ্ছাও রইল। তবে একটা কথা ভুলবেন না। মানিব্যাগটা গুছিয়ে রাখতে না-পারলে সমস্ত আশাই অগোছালো হয়ে যেতে পারে। তাই গত ন’মাসে সঞ্চয় বা বিনিয়োগের যা যা বাকি থেকে গেল, সেটাই আজ একবার ঝালিয়ে নেওয়ার পালা। যাতে আগামী কয়েকটা দিনে সেই বকেয়াগুলো মিটিয়ে নেওয়া যায়।

হাতে তিন মাস

এ বছর বিশ্বজোড়া অতিমারি সব শ্রেণির মানুষকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি থেকে শুরু করে কোন ক্ষেত্রে আঘাত লাগেনি! অনেকের রোজগার ধাক্কা খেয়েছে। যাঁদের রোজগার কমেনি তাঁদেরও অস্বস্তিতে ফেলেছে জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম। সব মিলিয়ে বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক পরিকল্পনাই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তাকে ফের ঠিক পথে আনতে হবে। নতুন ক্যালেন্ডারের প্রথম তিনটি পাতা আমাদের সকলকে দিচ্ছে সেই সুযোগ। অর্থবর্ষের শেষ তিনটি মাস। হাতে সময় ওটুকুই।

নজরে এসআইপি

• গত ন’মাসে আপনার রোজগার বেড়েছে, নাকি কমেছে? আপনি যদি প্রথম দলের হন, তা হলে বর্ধিত আয়ের একাংশ দিয়ে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানগুলি (এসআইপি) টপ-আপ করতে পারেন। তাতে আপনার দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা সফল করতে সুবিধা হবে। অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পরে শুরুর দিকে বড় শেয়ারগুলিই মাথা তুলছিল বেশি। এখন বড় শেয়ারের পাশাপাশি মাঝারি এবং ছোট শেয়ারগুলিও যথেষ্ট ভাল সাড়া দিচ্ছে। অর্থাৎ, স্টক মার্কেট বাড়ছে সামগ্রিক ভাবে। তাই বলি, এসআইপিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে রাখার এটাই উপযুক্ত সময়।

• কী বলছেন, এসআইপি নেই! তা হলে রোজগারের ওই বাড়তি টাকার একাংশ অবশ্যই এই ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ করুন। এখনই। ছ’সাত মাস আগে বাজার যখন নিচুতে ছিল, তখন এসআইপিতে বিনিয়োগ করে বা লগ্নি বাড়িয়ে অনেকেই সুফল পেয়েছেন। তবে শুরু করার পক্ষে এটাও খারাপ সময় নয়। প্রকল্প বাছাই করার জন্য নিতে পারেন আর্থিক পরামর্শদাতার সাহায্য।

• আয় যদি কমে থাকে তা হলে অবশ্য আলাদা কথা। কিছু কিছু বিনিয়োগ পরিকল্পনা কয়েকটা দিনের জন্য স্থগিত করতে হতে পারে। এসআইপির কিস্তিও আপাতত স্থগিত রাখার কথা ভাবতে পারেন। আমার পরামর্শ, হাতে দ্বিতীয় কোনও উপায় না-থাকলে তবেই সেটা করুন। যদিও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার তহবিল থেকে টাকা তুলে না-নেওয়াই ভাল।

খরচ সামলে

• লকডাউনের সময় থেকেই বেড়েছে জিনিসপত্রের দামের চাপ। তার জেরে আপনার খরচও বেড়ে গিয়েছে কি? যদি বেড়ে থাকে, তা হলে এখনই কমাতে হবে। কারণ, খাবার-আনাজ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ইদানীং কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাই ভাবতে চেষ্টা করুন গত কয়েক মাসে কোন খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খরচ করতে হয়েছে। সেই ব্যয় অবিলম্বে ছাঁটাই করতে হবে।

• খরচের তালিকায় ঋণের কিস্তিও (ইএমআই) পড়ে। গত এক বছরে সুদের হার দফায় দফায় কমার ফলে ওই খরচ এমনিতে বাড়ার কথা নয়। তবু ভাল করে মিলিয়ে দেখে নিন সেটাও। কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের সুদ অপেক্ষাকৃত কম তার খোঁজ নিন। আজকাল এর জন্য বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। ইন্টারনেটেই যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়। প্রয়োজনে ঋণ সেখানে সরানোর কথাও ভাবতে পারেন।

আপৎকালীন তহবিল

আমরা সব সময়েই পরামর্শ দিই অন্তত চার থেকে ছ’মাসের বেতনের টাকা লিকুইড ফান্ড বা মেয়াদি আমানতে রেখে দিতে। যাতে আপৎকালীন দরকারে তা কাজে লাগানো যায়। তেমন কোনও ব্যবস্থা যদি না করা থাকে, তা হলে এখনই সেই তহবিল তৈরি শুরু করে দিন। একটু আগে বিভিন্ন খাতে টাকা সাশ্রয়ের কথা বলছিলাম। তা দিয়েই আপাতত কাজটা শুরু করা যেতে পারে।

পরিবারের জন্য

করোনার বছরেও বিয়ে করেছেন অনেকে। বহু মানুষের সন্তান হয়েছে। তাঁদের সকলের ক্ষেত্রে পরিবারের আর্থিক পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমান সময়। এই সমস্ত পরিবারের রোজগেরে সদস্যদের জীবন বিমার অঙ্ক বাড়ানো উচিত। গুরুত্ব দেওয়া উচিত স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিমাতেও। অবশ্যই নিজের আয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কর সাশ্রয়

প্রত্যেক অর্থবর্ষেই কর সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে আয়কর আইনের ৮০সি-সহ বিভিন্ন ধারায় প্রয়োজনীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করি আমরা। তাতে কর যেমন গুনতে হয় কিছুটা কম, তেমনই বেড়ে ওঠে ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার তহবিল। এখনও যদি চলতি অর্থবর্ষের সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে না-থাকে, তা হলে খাতা-পেন নিয়ে বসে পড়ুন। কষে ফেলুন বিনিয়োগের হিসেব। মনে রাখবেন অধিকাংশ সংস্থায় জানুয়ারিতেই এই হিসেব জমা দিতে হয়। ফলে হাতে কিন্তু একেবারেই বেশি সময় নেই।

ক্রেডিট কার্ডের ধার

লকডাউনের সময়ে আর্থিক চাপে অনেকেরই হয়তো ক্রেডিট কার্ডের ধার শোধ করে ওঠা হয়নি। কেউ কেউ নিয়ে থাকতে পারেন মোরাটোরিয়ামের (কিস্তি স্থগিত) সুবিধা। নির্দিষ্ট সময়সীমার চেয়ে দেরি হয়ে গেলে কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে বিপুল সুদ গুনতে হয়। চেষ্টা করুন এই অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই বকেয়া ঋণ মিটিয়ে দিতে।

আর্থিক লক্ষ্য

নিজের বিয়ে হোক বা সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ। বেড়াতে যাওয়ার হোক বা অবসর জীবনের তহবিল তৈরি। সন্তানের বিয়ের খরচও হতে পারে। প্রতি ক্ষেত্রেই দরকার স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা। তার জন্য তহবিল তৈরি। আর্থিক স্বাক্ষরতার সঙ্গে এই সমস্ত ক্ষেত্রেও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, করোনার জেরে গত কয়েক মাসে অনেককেই এই তহবিল তৈরিতে সাময়িক বিরতি টানতে হয়েছে। আপনার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে খতিয়ে দেখুন কোন কোন পরিকল্পনার উপরে এর ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ল। সেগুলিকে ফের মেরামতির কথা ভাবতে শুরু করুন। দরকার হতে পারে পরিকল্পনা কিংবা তার সময়সীমায় কিছু হেরফেরের।

একটু দেখে নিন

• জীবন বিমার কোনও প্রিমিয়াম ভুল করে বাকি পড়ে থাকল কি? দেখে নিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আগামী তিন মাসের মধ্যে কোনও প্রিমিয়াম দেওয়ার থাকলে খাতায় বা ক্যালেন্ডারে নোট করে নিন।

• স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের তারিখ পার হয়ে গেলে কিন্তু কেলেঙ্কারি। এ ক্ষেত্রে আরও সাবধান হতে হবে।

• অনেক সময়ে মেয়াদি আমানতের সময়সীমা পার হলেও খেয়াল থাকে না। কারণ, সেগুলো আপনাআপনি পুনর্নবীকরণ হয়। গত ক’মাসে সুদ কমায় ওই সমস্ত সঞ্চয় প্রকল্প এখন কম রিটার্ন দিচ্ছে। সুতরাং ভেবেচিন্তে সেগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

• দীর্ঘমেয়াদি কোনও ঋণপত্রের সময় শেষ হয়ে এসেছে কি?

• এই অর্থবর্ষে পিপিএফ অ্যাকাউন্টে অন্তত এক বার টাকা রেখেছেন তো? না-হলে কিন্তু পস্তাবেন।

• সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।

• অতিমারির জন্য প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে লাইফ সার্টিফিকেট জমার সময়সীমা বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। তবে ফেলে না-রাখাই ভাল।

• অধিকাংশ অনাবাসীকে আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হয় ডিসেম্বরের পরে। তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এখনই।

পেশায় নতুন হলে

যাঁরা সদ্য পেশায় যোগ দিয়েছেন তাঁদের বলছি, সঞ্চয় শুরু করতে দেরি করবেন না। প্রথম ধাপে পিপিএফ এবং এসআইপিতে লগ্নি শুরু করুন।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Business Year ending accounts
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE