Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কার হাতে ঋণনীতির রাশ

কেন্দ্র-আরবিআই সংঘাতের সম্ভাবনা

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বনাম কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সুদের হার (রেপো রেট) ঠিক করার রাশ এ বার আদপে কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে আগামী দিনে এই দু’পক্ষের মধ্যে জোর লড়াই বাঁধার সম্ভাবনা। শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং অরুণ জেটলির মন্ত্রক— দু’তরফেই ইঙ্গিত এ বিষয়ে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয় তারা। এ নিয়ে শেষমেশ জল কোন দিকে গড়ায়, তা দেখার জন্য সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে শিল্পমহল। নজর রাখছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও।

এখনও ভিন্ন মত। জেটলি এবং রাজন।—ফাইল চিত্র।

এখনও ভিন্ন মত। জেটলি এবং রাজন।—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বনাম কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।

সুদের হার (রেপো রেট) ঠিক করার রাশ এ বার আদপে কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে আগামী দিনে এই দু’পক্ষের মধ্যে জোর লড়াই বাঁধার সম্ভাবনা। শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং অরুণ জেটলির মন্ত্রক— দু’তরফেই ইঙ্গিত এ বিষয়ে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয় তারা। এ নিয়ে শেষমেশ জল কোন দিকে গড়ায়, তা দেখার জন্য সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে শিল্পমহল। নজর রাখছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও।

এ বার বাজেটে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সম্পর্কে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এক, এ বার থেকে মূল্যবৃদ্ধির নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা আগাম বেঁধে নিয়ে সেই অনুযায়ী ঋণনীতি তৈরি করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর দুই, সেই ঋণনীতি তৈরির ক্ষেত্রে গড়া হবে নজরদারি কমিটি (মনিটারি পলিসি কমিটি)। আগামী দিনে ঋণনীতি পর্যালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে তারা।

কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, দু’পক্ষের মিলেমিশে পথ হাঁটা আপাতত এখানেই শেষ। কারণ, ওই কমিটিতে কত জন সদস্য থাকবেন, কারা তাঁদের বেছে নেবেন, সুদের বিষয়ে শেষ কথা এখনকার মতো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরই বলবেন কি না, এই ধরনের প্রায় সমস্ত বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছতে সমস্যা হবে দু’পক্ষের। এবং শেষ পর্যন্ত ঋণনীতি নির্ধারণে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বজায় থাকবে কি না, তা-ও এই দর কষাকষির উপরই নির্ভর করবে বলে মনে করছেন সকলে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি স্বল্প মেয়াদে যে সুদে ধার নেয়, তাকে বলে রেপো রেট। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এই রেপো রেটই এখন শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রধান হাতিয়ার। প্রত্যেক বার ঋণনীতির সময় ওই সুদের হার বাড়ানো, কমানো বা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত একান্তই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের। এ ক্ষেত্রে সাধারণত তিনি ডেপুটি গভর্নরদের পরামর্শ নেন। কথা বলেন বাইরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁদের সেই পরামর্শ মানতে তিনি বাধ্য নন। সুদের হার নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা তাঁরই। এ বিষয়ে ‘ভেটো’ প্রয়োগের অধিকার রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের একটি অংশ মনে করে, এই ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের হাতে থাকার কোনও যুক্তি নেই। বরং তাঁরা চান, আগামী দিনে সুদের হার ঠিক হোক সেই বিষয়ে তৈরি হওয়া কমিটিতে ভোটাভুটির ভিত্তিতে।

দু’পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে কমিটির গঠন কেমন হবে, তা নিয়েও। এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্যানেলের পরামর্শ, কমিটিতে পাঁচ জন সদস্য থাকুন। গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং ব্যাঙ্কেরই বেছে নেওয়া বাইরের দুই সদস্য। অন্য দিকে, কেন্দ্র নিয়োজিত কমিশনের পরামর্শ, কমিটি হোক সাত সদস্যের। গভর্নর, শীর্ষ ব্যাঙ্কের এক এগ্জিকিউটিভ সদস্য এবং কেন্দ্রের বেছে নেওয়া পাঁচ জন। ওই পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনকে অবশ্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে বাছাইয়ের কথা বলেছে তারা। এ ছাড়াও থাকুন কেন্দ্রের আর এক প্রতিনিধি। ভোটাভুটিতে যোগ দেওয়ার অধিকার যাঁর থাকবে না। কমিশন চায়, ঋণনীতি ঠিক করার চূড়ান্ত ক্ষমতা গভর্নরের হাতেই থাকুক। কিন্তু বৈঠকের আলোচনা এবং সেখানে সদস্যদের মতামত জানানো হোক জনসমক্ষে। ফলে এই সমস্ত টানাপড়েনের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছনো দু’পক্ষের কাছেই বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

এমনিতে ঋণনীতি পর্যালোচনার জন্য তৈরি কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে ঋণনীতি পর্যালোচনাই এখন সারা বিশ্বে রেওয়াজ। কি উন্নত, কি উন্নয়নশীল দেশে। কিন্তু সংসদে বিল পাশের পরে ভারতে তা তৈরি হলে, ঋণনীতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নরের হাতে থাকবে কি না, সে দিকে এখন সতর্ক দৃষ্টি রাখছে শিল্পমহল। সাগ্রহে তাকিয়ে লগ্নিকারীরাও।

এক পক্ষ মনে করেন, গভর্নর যে-ই হোন, তাঁর হাতে ‘ভেটো’ প্রয়োগের ক্ষমতা না থাকাই ভাল। তাতে ব্যক্তিনির্ভরতা কমে। সুদ কমা-বাড়া শুধু এক জনের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে না। তেমনই উল্টো দিকে অনেকে আবার মনে করেন, ভারতের মতো দেশে সুদের বিষয়ে শেষ কথা বলার অধিকার থাকা উচিত শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরেরই।

দ্বিতীয় পক্ষের যুক্তি, ওই ক্ষমতা ছাঁটাই হলে, অনেকটাই আবছা হয়ে যাবে কেন্দ্র এবং শীর্ষ ব্যাঙ্কের মধ্যেকার লক্ষ্মণরেখা। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধারকে কেন্দ্র নিয়োগ করে ঠিকই, কিন্তু ভোটের কথা মাথায় রেখে আমজনতাকে জবাবদিহি করার দায় তাঁর নেই। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একবগ্গা থাকতে পারেন তিনি। প্রয়োজনে অটল থাকতে পারেন সুদ না-কমানোর মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্তে। কিন্তু কেন্দ্র সেখানে নাক গলানোর সুযোগ পেলে, রাজনীতি ঢুকে পড়বে সেখানেও। হয়তো দেখা যাবে, ভোটের মুখে অর্থনীতির হাল ভাল দেখাতে কিংবা স্রেফ কম সুদ গোনার সুবিধা পেতে তা ছাঁটাইয়ের পক্ষে সওয়াল করছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। ফলে তখন মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেবে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের অর্থনীতি। তাই এই পক্ষের মতে, সুদের বিষয়ে শেষ কথা বলার অধিকার থাকা উচিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরেরই। বিশেষত যদি ঋণনীতির কমিটিতে কেন্দ্রের মনোনীত কিংবা শীর্ষ ব্যাঙ্কের বাইরের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশি হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বেশি থাকলে অন্য কথা।

অনেকে বলছেন, বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আগাম বেঁধে দেওয়ার কথা বলে কার্যত রাজনের দীর্ঘ দিনের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন জেটলি। তেমনই বাজেটে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের হদিস থাকার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়েই শিল্পের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে সম্প্রতি ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ফলে ঋণনীতির রাশ নিয়ে দর কষাকষিতেও যে দু’পক্ষ ঐকমত্যের সন্ধান করবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে সহজে একমত হওয়ার লক্ষণ অন্তত এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি বিশেষজ্ঞদের।

কর্মী নিয়োগ বাড়ল মার্কিন মুলুকে

সংবাদ সংস্থা • ওয়াশিংটন

কর্মসংস্থান আরও বাড়ার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিশ্বকে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিল আমেরিকার অর্থনীতি। শুক্রবার মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে নতুন কর্মী নিয়োগ হয়েছে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার। এই নিয়ে টানা ১২ মাস ধরে প্রতি মাসে দু’লক্ষের উপর নতুন চাকরি হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। পাশাপাশি বেকারত্বের হার ৫.৭% থেকে কমে ৫.৫% হয়েছে। ফলে অনেকের মতে, শ্রম বাজার যে দ্রুত চাঙ্গা হচ্ছে সেটা স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

reserve bank of india finance ministry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE