Advertisement
E-Paper

কমতে শুরু করল জমায় সুদ, আশা মাসিক কিস্তি কমারও

বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাকে সমূল তুলে ফেলতে এখনও চড়া সুদের জমানাই বজায় রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু এ বার তার মধ্যেই সুদ কমাতে শুরু করল স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। প্রাথমিক ভাবে আমানতে সুদ কমিয়েছে তারা। কিন্তু ইঙ্গিত মিলেছে অদূর ভবিষ্যতে ঋণে সুদ কমানোরও। শেষ পর্যন্ত তা হলে, কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন ধারে বাড়ি-গাড়ি কেনা মধ্যবিত্ত।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯

বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাকে সমূল তুলে ফেলতে এখনও চড়া সুদের জমানাই বজায় রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু এ বার তার মধ্যেই সুদ কমাতে শুরু করল স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। প্রাথমিক ভাবে আমানতে সুদ কমিয়েছে তারা। কিন্তু ইঙ্গিত মিলেছে অদূর ভবিষ্যতে ঋণে সুদ কমানোরও। শেষ পর্যন্ত তা হলে, কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন ধারে বাড়ি-গাড়ি কেনা মধ্যবিত্ত। সুদ কমলে, ওই সমস্ত ঋণ শোধের জন্য মাসিক কিস্তি কম গুনতে হবে তাঁদের। দীর্ঘ দিনের দাবি মিটবে শিল্পেরও। কারণ, মূলধন সংগ্রহের খরচ কমানোর জন্য আজ অনেক দিন ধরে লাগাতার সওয়াল করে আসছে তারা।

শুক্রবার এক বছরের বেশি কিন্তু পাঁচ বছরের কম মেয়াদের আমানতের উপর সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮.৫% করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। আমানতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমানোর কথা জানিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কও। এ ছাড়া, ব্যাঙ্কটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আদিত্য পুরি জানান, আমানতে সুদ কমানোর পর এ বার ঋণের ক্ষেত্রেও তা কমবে। তাঁর কথায়, “জমায় সুদ কমিয়েছি। মার্চের মধ্যে কমবে বেস রেটও (ঋণে সুদের হার যার উপর নির্ভর করে)।” গত কয়েক দিনের মধ্যে আমানতে সুদ কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্কও। বাকি ব্যাঙ্কগুলিও আগামী দিনে এই একই পথে হাঁটতে পারে বলে ব্যাঙ্কিং মহলের ধারণা।

গত ২ ডিসেম্বর ঋণনীতি পর্যালোচনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছিলেন, বাজারে সুদ কমানোর মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই পদক্ষেপ করছে না ব্যাঙ্কগুলি। সে দিন রাজন কেন ওই কথা বলেছিলেন আর এখনই বা ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমাতে শুরু করল কেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মূলত দু’টি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক, ঋণের চাহিদায় ভাটা। দুই, ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বৃদ্ধি। তাঁদের মতে, প্রধানত এই দুই কারণে ‘কল-মানি’র বাজারে সুদ কমেছে। যে কারণে এখন ঋণে সুদ কমানোর কথা বলতে শুরু করেছে ব্যাঙ্কগুলি।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি আমানত ও ঋণের মধ্যে প্রতিদিন সামঞ্জস্য রাখা, বিদেশি মুদ্রা কেনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের (অন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক) কাছে অতি স্বল্প মেয়াদের জন্য (কয়েক দিন) ঋণ নেয়। একে বলে কল-মানি।

এখন ওই কল-মানি অনেক ব্যাঙ্কের হাতেই উদ্বৃত্ত। কারণ, আজ বহু দিন ধরেই শিল্পে ঋণের ভাটা। সুদ না-কমা পর্যন্ত মূলধন সংগ্রহের খরচ বাড়ার ভয়ে সে ভাবে ধার নিতে চাইছে না শিল্প সংস্থাগুলি। বিশেষত অর্থনীতির চাকায় এখনও সে ভাবে গতি না-ফেরাও ওই চাহিদায় ঘাটতির অন্যতম কারণ। তার উপর কয়েকটি ঋণনীতিতে নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর (ব্যাঙ্কগুলিকে যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত রাখতে হয়) কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ফলে বাড়তি নগদ এসেছে ব্যাঙ্কগুলির হাতে। আর এই দুই খাতে থাকা টাকাই এখন কল-মানির বাজারে খাটাতে চাইছে অধিকাংশ ব্যাঙ্ক। তাই সেখানে সুদ কমেছে। ফলে কমেছে ব্যাঙ্কগুলির ফান্ড সংগ্রহের খরচ। সেই কারণেই তারা সুদ কমানোর পথে হাঁটছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।

ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত-র মতে, “মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। ফলে এখন রিয়েল ইন্টারেস্ট রেট বা মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে হাতে থাকা নিট সুদের হার বেশি। আগামী এক বছরের মধ্যে যে সমস্ত সরকারি ঋণপত্রের মেয়াদ পূর্ণ হবে, তাদের ‘ইল্ড’ বা সুদও ন’মাস ধরে কমছে। ব্যাঙ্কগুলির সামনে ঋণ এবং আমানতে সুদ কমানোর রাস্তা প্রশস্ত করেছে এই দু’টি ঘটনা।”

অনেকের মতে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কগুলির ব্যালান্স শিট থেকে স্পষ্ট যে, তাদের অধিকাংশেরই নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন বেড়েছে। অর্থাৎ, সুদ বাবদ খরচের থেকে বেড়েছে ওই বাবদ আয়। এটিও ঋণে সুদ কমানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বলে তাঁদের অভিমত।

rate of interest proggananda chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy