কলকাতা-সহ চারটি বিমানবন্দর পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থার হাত ধরার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। ভাবছে এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং পবন হংস হেলিকপ্টার্সকে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করার কথাও। তবে লোকসানে চলা এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে আগামী দিনে তাদের পরিকল্পনা কী, তা স্পষ্ট করেনি বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। বরং জানিয়েছে, এই সংবেদনশীল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। পরামর্শ করা হবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও।
বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে নতুন করে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে মোদী-সরকার। সোমবার তা প্রকাশ করেন বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু। সেই খসড়াতেই কলকাতা, চেন্নাই, আমদাবাদ এবং জয়পুর বিমানবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি মডেল) সামিল হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
দেশের ১৮টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমেত মোট ১২৫টি বিমানবন্দর পরিচালনা করে এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই)। যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল তৈরি, তার রক্ষণাবেক্ষণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহণের খুঁটিনাটি বিমানবন্দরে এই সমস্ত কিছুই দেখভালের দায় এএআইয়ের। খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এ বার এই মিনিরত্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নাম শেয়ার বাজারে তুলতে চায় কেন্দ্র। একই ভাবে বাজারে নথিভুক্ত করতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা সংস্থা পবন হংসকেও। সরকারের দাবি, শুধু কোষাগারে টাকার সংস্থানের জন্য নয়, সংস্থাগুলিতে আরও বেশি করে পেশাদারিত্ব আনার জন্যই এই পথে হাঁটার কথা ভাবছে তারা। এ দিন রাজু জানিয়েছেন, এখনই এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে তা হলে, তিনিই সব থেকে খুশি হবেন।
বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে আরও একগুচ্ছ প্রস্তাব রয়েছে ওই খসড়ায়। ছ’টি মেট্রো শহরের বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে বিভিন্ন ছোট শহর-সহ দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তকেও বিমান পরিষেবার মানচিত্রে আনার। প্রয়োজনে তার জন্য ছোট বিমান চালানো। করের হার বেশি হওয়ায় ভারতে বিমান জ্বালানির দাম এখন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি বলে প্রায়ই অভিযোগ তোলে সংস্থাগুলি। সে কথা মাথায় রেখে এই বিষয়টি এ বার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে চায় কেন্দ্র। তা ছাড়া, এখন অন্তত ২০টি বিমান এবং দেশের মধ্যে পাঁচ বছর উড়ান চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে, আন্তর্জাতিক পরিষেবা চালুর অনুমতি মেলে না। আগামী দিনে শিথিল হতে পারে সেই নিয়মও।
আগে ইউপিএ জমানাতেই ছ’টি বিমানবন্দরে বেসরকারি সংস্থার হাত ধরতে টেন্ডার ডেকেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তখন সরকারের ভিতরেই এ নিয়ে মতানৈক্য, রাজনৈতিক বিরোধিতা, কর্মী ইউনিয়নগুলির প্রতিবাদ ইত্যাদি কারণে তা সফল হয়নি। এ দিন আগের বিমান পরিবহণ নীতিকে অস্বচ্ছ বলে দাবি করেছেন রাজু। এ বার বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার ভোল বদলাতে মোদী-সরকার নতুন প্রস্তাব কতটা কার্যকর করতে পারে, সে দিকেই এখন চোখ সংস্থাগুলির।