Advertisement
E-Paper

প্রায় বন্ধ মাসিক কিস্তিতে গয়না কেনার প্রকল্প

সারদা কেলেঙ্কারির ছায়া এ বার গয়নার বাজারে। চড়া লাভের আকর্ষণকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা যাবে না। নয়া কোম্পানি আইনে এই লাভের টাকা ১২ শতাংশের বেশিও হতে পারবে না। ফলে ইএমআই বা মাসিক কিস্তিতে নগদ জমার বদলে গয়না কেনার প্রকল্প প্রায় বন্ধ। কারণ গ্রাহককে গড়ে ১৫% হারে লাভ করার সুযোগ দিচ্ছিল এ ধরনের প্রকল্প। পাশাপাশি, এই ধরনের প্রকল্পে মানতে হতে পারে সেবি-র সংশ্লিষ্ট আইনও।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৪১

সারদা কেলেঙ্কারির ছায়া এ বার গয়নার বাজারে।

চড়া লাভের আকর্ষণকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা যাবে না। নয়া কোম্পানি আইনে এই লাভের টাকা ১২ শতাংশের বেশিও হতে পারবে না। ফলে ইএমআই বা মাসিক কিস্তিতে নগদ জমার বদলে গয়না কেনার প্রকল্প প্রায় বন্ধ। কারণ গ্রাহককে গড়ে ১৫% হারে লাভ করার সুযোগ দিচ্ছিল এ ধরনের প্রকল্প। পাশাপাশি, এই ধরনের প্রকল্পে মানতে হতে পারে সেবি-র সংশ্লিষ্ট আইনও। ওই আইনে নির্দিষ্ট মুনাফা দেওয়ার শর্তে বহু লগ্নিকারীর কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়ার যে-কোনও প্রকল্পকেই বলা হয় ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’ (সিআইএস)। যা চালু করতে হলে সেবির আগাম অনুমোদন প্রয়োজন। এই আইনের জালে পড়েই ঘটেছে সারদা, সুমঙ্গলের মতো কাণ্ড।

নতুন আইন কী ভাবে তাদের উপর প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়েই ধন্দে গয়না শিল্প। আর, পাছে তাদের উপর আইনের খাঁড়া নেমে আসে, সে জন্যই গয়না সংস্থাগুলির এই আগাম সতর্কতা।

এ দিকে, বিপণনের এই ধারালো হাতিয়ার হারিয়ে ধাক্কা খেয়েছে গয়নার বাজার। হা-হুতাশ করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষই।

মধ্যবিত্তের স্বপ্ন পূরণ করতে ইএমআই বা মাসিক কিস্তির জয়জয়কার বহু দিনই। বাড়ি-গাড়ি, আসবাবপত্র, মোবাইল ইএমআই-এর তালিকায় বাদ নেই কিছুই। এই তালিকায় নিজেদের যুক্ত করে নিয়েছিল গয়না শিল্পও। তবে বাড়ি-গাড়ির মতো ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মাসিক কিস্তির ব্যবস্থা নয়। সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে মাসিক কিস্তির লেনদেন শুরু করে তানিস্ক, গীতাঞ্জলি, ত্রিভুবনদাস ভীমজি জাভেরির মতো নামী-দামি ব্র্যান্ড থেকে স্থানীয় ছোট-মাঝারি দোকান। অর্থাৎ নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক কিস্তির বদলে বছর শেষে সেই মূল্যের গয়না পাবেন ক্রেতা।

গয়না শিল্পমহলের দাবি, এই ব্যবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা, দু’পক্ষেরই লাভ হচ্ছিল। এক সঙ্গে মোটা টাকা খরচ করে গয়না কেনা অনেকের পক্ষেই সহজ নয়। বরং গোটা বছর ধরে প্রতি মাসে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে কেনা সুবিধাজনক। তা সে মেয়ের বিয়ের গয়নাই হোক, বা নিজের বহু দিনের সাধ মেটানোই হোক। ভারী গয়না কিনতে মাসিক কিস্তির সুযোগ নিচ্ছিলেন মাস মাইনের চাকুরে থেকে গৃহবধূ সকলেই।

ক্রেতাদের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে সঙ্গে গয়না সংস্থাগুলির ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছিল মাসিক কিস্তির প্রকল্প। বিভিন্ন উৎসব বা বিয়ের মরসুমের পাশাপাশি নতুন বাজার তৈরি করেছিল এ ধরনের প্রকল্প। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির অন্যতম কর্তা বাবলু দের দাবি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিত ব্যবসার সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। বড়-ছোট, যে অঙ্কেরই লগ্নি হোক, সেই টাকার গয়না বিক্রি করার নিশ্চিত বাজার অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, দাবি বাবলুবাবুর।

আর এই নিশ্চিত বাজারেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নতুন কোম্পানি আইনের কারণে। ২০১৩ সালের নয়া আইন চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী গয়না কেনা বাবদ মাসিক কিস্তির টাকাও জন আমানত হিসেবে ধরা হবে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার বদলে ১২ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়া যায় না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গয়না সংস্থাগুলি থেকে ক্রেতারা ১৫ থেকে ১৬% হারে লাভ করছিলেন।

আর এই চড়া হারে লাভের সুযোগই সরকারি স্তরে শঙ্কা তৈরি করেছে। কারণ সারদা কেলেঙ্কারির পরে যে-কোনও আমানতের উপরে চড়া লাভের অঙ্কই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের টাকা মার যাওয়ার পথ বন্ধ করতেই এই আইন সংশোধন। সাধারণত এ ধরনের গয়না প্রকল্পের মেয়াদ ১১ মাস থেকে ৩৬ মাস। আপাতত দেশের প্রায় ছোট-বড় সব সংস্থাই এই প্রকল্প বন্ধ রাখছে। সব সংস্থাই অবশ্য জানিয়েছে, জমানো টাকার সমমূল্যের গয়না নিতে পারেন ইচ্ছুক ক্রেতারা।

প্রসঙ্গত, সিআইএস প্রকল্প চালু করতে হলে সেবি-র আগাম অনুমোদন জরুরি। দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু সংস্থা সেবি-র অনুমতি না-নিয়েই ওই ধরনের প্রকল্প বাজারে চালু করছে। আইনকে ফাঁকি দিতে অনেকে সুদ দেওয়ার শর্তে আমানত সংগ্রহ না-করে জমি, গাছ এমনকী আলুতে বিনিয়োগের টোপ দিয়ে প্রকল্প ছেড়ে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। কিন্তু ওই ধরনের সমস্ত প্রকল্পই সিআইএস-এর শ্রেণিতে পড়ে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে সেবি।

তবে এই ব্যবস্থা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হবে না বলেই মনে করছে গয়না শিল্প। কিন্তু তানিস্ক-এর মতো ব্র্যান্ডও দাবি করছে, আইনি দিকটি স্পষ্ট বোঝা গেলেই নতুন প্রকল্প চালু করা হবে। টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটির প্রধান সি কে ভেঙ্কটরামন জানান, আইন মেনে চালু প্রকল্পগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রকল্প ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই আইন মেনেই নতুন প্রকল্প আনার পরিকল্পনা করেছি আমরা।” আইন বাঁচিয়ে নিজেদের প্রকল্প চালু রাখার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সংস্থা অঞ্জলি জুয়েলার্সের প্রধান অনর্ঘ্য চৌধুরী। ক্রেতা-স্বার্থ ও এই শিল্পের বাজারের কথা মাথায় রেখে নিজেদের জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরি করতে দফায় দফায় আলোচনায় বসছে সংস্থাগুলিও। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে আগামী মাসের মধ্যে সমাধানসূত্র বেরোতে পারে।

gargi guhathakurta sarada scam gold ornament buying scheme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy