Advertisement
E-Paper

বাজার ধরতে আসছে আইআইটি-র গ্রিন টি

শুধু পাহাড় নয়, সমতলেও যে চা তৈরি হয় তা আগেই প্রমাণ করেছিল খড়্গপুর আইআইটি। এবার নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে তা বাজারজাত করতেও উদ্যোগী হল তারা। এই প্রথম সমতলের চায়ের ব্র্যান্ড বাজারে আসতে চলেছে। কর্তৃপক্ষের আশা, পাহাড়ের চায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাজার মাতাবে সমতলের চা-ও।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:৫২
খড়গপুর আইআইটি-র চা বাগান।

খড়গপুর আইআইটি-র চা বাগান।

শুধু পাহাড় নয়, সমতলেও যে চা তৈরি হয় তা আগেই প্রমাণ করেছিল খড়্গপুর আইআইটি। এবার নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে তা বাজারজাত করতেও উদ্যোগী হল তারা। এই প্রথম সমতলের চায়ের ব্র্যান্ড বাজারে আসতে চলেছে। কর্তৃপক্ষের আশা, পাহাড়ের চায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাজার মাতাবে সমতলের চা-ও।

যাঁর উদ্যোগে আইআইটিতে এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে, আইআইটি-র সেই কৃষি খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক বিজয় ঘোষের বক্তব্য, “পাহাড়ের চায়ের সঙ্গে সমতলের চায়ের গুণগত মানের তেমন কোনও ফারাক নেই। বাজারে গেলেই মানুষ তা বুঝতে পারবেন।”

আইআইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরাসরি নিজেরা কোনও ব্যবসা করতে পারে না। তাই এখানে তৈরি করা হয়েছে ‘স্টেপ’ (সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি আন্ট্রাপ্রেনিওরস পার্ক), যার সদস্য আইআইটি-র ইচ্ছুক গবেষক, শিক্ষক, পড়ায়ারা। কৃষি, খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পিআইচডি করা ছাত্র সৌমেন পালিত এই চা বাজারজাত করার ছাড়পত্র পেয়েছেন। সৌমেনবাবুর কথায়, “প্রথমে সাধারণ গ্রিন টি বাজারে ছাড়া হবে। পরে বিভিন্ন সুগন্ধে গ্রিন টি বাজারে আসবে।” প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আদা, জুঁই, তুলসি ও গোলাগ এই চারটি সুবাসের ‘গ্রিন টি’ তৈরি করা হবে। স্টেপের জেনারেল ম্যানেজার সুভাষ সাঁতরা ও ম্যানেজার (অপারেশনস) অরুণাংশু ভুঁইয়ার কথায়, “আমাদের তৈরি চা কয়েক জন ব্যবসায়ী বাজারে বিক্রি করছেন। এ বার আমরা চেষ্টা করছি, আইআইটি খড়্গপুরের নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি হোক।”

চা তৈরির যন্ত্র।

আইআইটি-র কৃষি, খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক বিজয় ঘোষ ১৯৯৭ সাল থেকে সমতলে চা চাষের পরীক্ষা শুরু করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো রুক্ষ জায়গাতেও চা চাষ সম্ভব। প্রযুক্তির মাধ্যমে জল ছড়িয়ে দেওয়া, রোদ থেকে বাঁচতে চা গাছের মাঝে বড়-বড় গাছ লাগিয়ে দেওয়া, বর্ষাকালে যাতে জল দাঁড়িয়ে না থাকে তার ব্যবস্থা করলেই হল। আইআইটি-র মতে, জৈব পদ্ধতিতে করা এই চাষে ফলন কম হয় না, স্বাদেরও বিশেষ হেরফের ঘটে না। সৌমেনবাবুর মতে, “অন্য চায়ের সঙ্গে এর স্বাদের কোনও ফারাক থাকবে না। এই চায়ের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি একশ শতাংশ জৈব। কোনও পর্যায়েই কোনও রকম কেমিক্যালের ছোঁয়া থাকবে না।”

যদিও ‘গ্রিন টি’-র ক্ষেত্রে স্বাদের হেরফের বড় সমস্যা নয়। কারণ, সাধারণত স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এই চা পান করেন। যেখানে সাধারণ ভাবেই স্বাদ বড় হয়ে ওঠে না। আইআইটি-র বিশেজ্ঞদের মতে, গ্রিন টি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বার্ধক্যের গতি হ্রাস করে, কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না, হার্ট ও দাঁতের পক্ষেও উপকারী। এই সমস্ত উপকারিতার কথা চায়ের প্যাকেটেও লেখা থাকবে। সাতশো টাকা কেজি দরের এই চায়ের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেক গ্রিন টি’। ১০০ গ্রামের সিলভার পাউচ তৈরি করা হয়েছে ২ হাজারটি। প্যাকেটে রাখা থাকবে এক-একটি পাউচ। প্যাকেটে খাবার নিয়মাবলি থেকে শুরু করে চা খেলে তার উপকারিতা কী, সব কিছুরই উল্লেখ রয়েছে। জল ফোটানো চলবে না, ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে গরম করার পর প্রতি কাপ পিছু ৩ গ্রাম চা দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট তা ঢেকে রাখার পরে খেতে হবে। ১০০ গ্রামের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা।

সৌমেনবাবু জানান, জৈব পদ্ধতিতে তৈরি এই চা দু’তিন মাসের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে। বর্তমানে আইআইটিতে ১৫ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ধীরে-ধীরে চাষ বাড়ানোর চেষ্টাও হচ্ছে। বিশেষত, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে সহজেই চা চাষ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। জঙ্গলমহলের তিন জেলায় প্রচুর পতিত জমি রয়েছে। যেখানে মাটি উর্বর না হওয়ার কারনে অন্যান্য ফসল ভাল হয় না। সেখানে সহজেই চা চাষ সম্ভব। এক্ষেত্রে চা তৈরি থেকে প্রযুক্তি দেওয়া-সব ক্ষেত্রেই আইআইটি সাহায্য করবে বলেও বিজয়বাবু জানিয়েছেন। সৌমেনবাবুর কথায়, “প্রথম দিকে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এই চা বাজারে আসার পর চাহিদা দেখলে অনেকেই উৎসাহিত হবেন বলেই আমাদের ধারণা।”

তবে বিপনণের ক্ষেত্রে প্রথমেই বেশি তড়িঘড়ি করতে রাজি নন কর্তৃপক্ষ। শুরুতে আইআইটি স্টেপের কাউন্টার থেকেই চা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কলকাতার বাজার না ধরে খড়্গপুর থেকে কেন বিপণন শুরু? কর্তৃপক্ষের দাবি, বিপণনের খবর ইতিমধ্যেই অনেকে জেনে গিয়েছেন। শুরুতেই সর্বত্র জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। বিজয়বাবুর কথায়, “আমরা যে পরিমাণ চা উৎপন্ন করি তার বেশির ভাগটাই গবেষণার কাজে লাগে। তার বাইরে বড় জোর বছরে ৪-৫ কুইন্ট্যাল বিক্রি করতে পারব। তাই আইআইটি-র বাইরেও চা চাষ বৃদ্ধি না করা গেলে বড় বাজারে জোগান দেওয়া কঠিন।” যদিও ইতিমধ্যেই আইআইটি-র প্রযুক্তি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৩-৪টি জায়গায় চা চাষ শুরু করেছে কয়েকটি সংস্থা। সেখানে ৭-৮ একর জমিতে চাষ হচ্ছে।

বিজয়বাবু বলেন, “আমি চাইছি অযোধ্যা পাহাড় থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত পতিত জমিতেই চা চাষ হোক। শুধুমাত্র গবেষণার উপরে আস্থা রেখে সহজে কেউ রাজি হচ্ছেন না। বাজারে চাহিদা থাকলে তবে সকলে উৎসাহিত হবেন। যে কারণে বিপণনে উদ্যোগী হই। কিন্তু বাজারে ছাড়ার আগেই চারদিক থেকে এত চাহিদা দেখছি যে, তা পূরণ করতে পারব না ভেবে খারাপ লাগছে। তাই চাষ বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। অনেকের সঙ্গে কথাও হয়েছে।”

চলতি মাসের শেষের দিকেই আইআইটি স্টেপের কাউন্টার থেকেই এই চা পাওয়া যাবে বলেও সৌমেনবাবু জানিয়েছেন। সংস্থাটি রেজিস্টার্ড হলেও ব্র্যাণ্ড নামটির এখনও রেজিস্ট্রেশন নেই। সৌমেনবাবু বলেন, “ব্র্যাণ্ড নামের রেজিস্ট্রেশন পেতে সময় লাগবে। তার আগেই শুরু করে দিতে চাইছি। তবে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি, এ নামে কোনও ব্র্যাণ্ড নেই। পরে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেব।”

ছবি দু’টি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।

suman ghosh green tea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy