Advertisement
E-Paper

রক্ত বদল ইনফোসিসে, রাশ বহিরাগতের হাতে

তেত্রিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ছাড়া অন্য কারও হাতে রাশ যাচ্ছে ইনফোসিসের। এই প্রথম ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন না এন আর নারায়ণমূর্তি কিংবা তাঁর ছয় বন্ধুর কেউ। ১৯৮১ সালে পুণেতে ইনফোসিস গড়া শুরু করেছিলেন যাঁরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০২:০৬
ব্যাটন বদল। বিশাল সিক্কা (বাঁ দিকে) এবং এন আর নারায়ণমূর্তি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

ব্যাটন বদল। বিশাল সিক্কা (বাঁ দিকে) এবং এন আর নারায়ণমূর্তি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

তেত্রিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ছাড়া অন্য কারও হাতে রাশ যাচ্ছে ইনফোসিসের। এই প্রথম ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন না এন আর নারায়ণমূর্তি কিংবা তাঁর ছয় বন্ধুর কেউ। ১৯৮১ সালে পুণেতে ইনফোসিস গড়া শুরু করেছিলেন যাঁরা।

বৃহস্পতিবার শীর্ষ নেতৃত্বে আমূল বদলের ঘোষণা করল ইনফোসিস। জানাল, নতুন কর্ণধার (সিইও-এমডি) হচ্ছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করা বিশাল সিক্কা। ঘুরে দাঁড়াতে জার্মান বহুজাতিক স্যাপ-এর এই প্রাক্তন চিফ টেকনোলজি অফিসারের উপরই ভরসা রাখছে নারায়ণমূর্তিদের হাতে গড়া সংস্থা। এই প্রথম বাইরে থেকে আসা সিইও-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চিফ অপারেটিং অফিসারের দায়িত্ব বর্তাচ্ছে সংস্থারই ইউ বি প্রবীণের হাতে।

একই সঙ্গে পদ থেকে সরে যাচ্ছেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতারা। এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরছেন খোদ এন আর নারায়ণমূর্তি। ফিরে যাচ্ছেন এমেরিটাস চেয়ারম্যানের আলংকারিক পদে। সংস্থা ছাড়ছেন তাঁর ছেলে রোহন মূর্তিও। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করা যে রোহনকে এগ্জিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, বিলুপ্ত হচ্ছে এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যানের পদ। নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হচ্ছেন কে ভি কামাথ। প্রথম বার অবসরের সময় যাঁর হাতে ইনফোসিস সঁপে গিয়েছিলেন নারায়ণমূর্তি।

যে পদে সিক্কা আসছেন, সেখান থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন বর্তমান এমডি-সিইও এস ডি শিবুলাল। এগ্জিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান থাকছেন না এস গোপালকৃষ্ণনও। নারায়ণমূর্তির মতোই সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে আসছেন এই দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। যা দেখে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল মনে করছে, ঘুরে দাঁড়াতে এ বার আক্ষরিক অর্থেই নতুন রক্ত আমদানি করছে ইনফোসিস। কার্যত বদলে ফেলছে নেতৃত্বের ডিএনএ-ই।

২০১১ সালে নারায়ণমূর্তির অবসরের পর পায়ের তলার জমি আলগা হয়েছিল ইনফোসিসের। সাধারণত সংস্থার পূর্বাভাসের দিকে বরাবর সাগ্রহে তাকিয়ে থাকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ও শেয়ার বাজার। কিন্তু নিজেদের সেই পূর্বাভাস মেলাতেই হিমসিম খাচ্ছিল তারা। কমছিল মুনাফার হার। বাজারের দখল ছিনিয়ে নিচ্ছিল টিসিএস, কগনিজ্যান্ট, উইপ্রোর মতো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরা। টানা এক দশক যে সংস্থার শেয়ার দরের রকেট গতিতে উত্থান চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জে সময় ভাল যাচ্ছিল না তাদেরই। এই অবস্থায় ২০১৩-র মে মাসে অবসর ভেঙে ফিরে সংস্থার রাশ ধরেন ৬৭ বছরের নারায়ণমূর্তি। এই কামব্যাক ইনিংসে পাঁচ বছর সময় চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল সে ভাবে ফেরেনি। বরং মাঝের এই সময়ে সংস্থা ছেড়েছেন ১১ জন শীর্ষ স্তরের কর্তা। ফলে অনেকেই মনে করছেন, এই সব কারণে ক্রমশ চাপ বাড়ছিল নারায়ণমূর্তিদের উপর। কারও কারও মতে, ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতার ফিরে আসা যদি অ্যাপলের স্টিভ জোবসের মতো সংস্থা ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর কারণে হয়, তবে বিদায় মাইক্রোসফটের বিল গেটসের মতো। নতুন নেতৃত্বকে জায়গা করে দিতে।

নারায়ণমূর্তির অবশ্য দাবি, তাঁর মূল কাজ ছিল যোগ্য উত্তরাধিকারীর সন্ধান আর ভবিষ্যতের ভিত গড়ে যাওয়া। তা করে যাচ্ছেন তিনি। এ বার নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পড়বেন বইপত্র। তাঁর সরস মন্তব্য, “সিক্কা মানে টাকা। তাই বিশাল সিক্কা মানে অনেক টাকা। ইনফোসিসের যা দরকার।” সিক্কা বলছেন, “প্রথম কিছু দিন সংস্থা সম্পর্কে জানতেই কাটবে। তারপরে কাজে হাত।”

সিক্কা প্রসঙ্গে নারায়ণমূর্তির অভিমত, তিনি উদ্ভাবনকারী, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। অনেকের মতে, নয়া বরাত পেতে মার্কিন মুলুকের এই পরিচিত মুখ সুবিধা দেবে ইনফোসিসকে। সিক্কাও বলেছেন, এ বার থেকে অনেকটা সময় বেঙ্গালুরুতে এলেও ক্যালিফোর্নিয়াতেই থাকবেন তিনি। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে কোনও কর্পোরেট পরিচিতি নেই। পরিচয় স্বামী- বাবা-বন্ধু-চিন্তাশীল-উদ্ভাবকের। ঘুরে দাঁড়াতে এই সিক্কার উপরই আস্থা রাখছে ইনফোসিস।

infosys ceo and md vishal sikka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy