এক ধাক্কায় সেনসেক্সের ৩৫৮.৮৯ পয়েন্ট উত্থান। এবং ২২,৭০২.৩৪ অঙ্কে দৌড় শেষ করে উচ্চতার নয়া শৃঙ্গে পা রাখা। বুধবারের শেয়ার বাজার লগ্নিকারীদের মুখে আরও একপ্রস্ত হাসি ফোটালো এ ভাবেই। যার প্রধান কারণ ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের (আইএমএফ) আশা জাগানো পূর্বাভাস।
যদিও ডলারের সাপেক্ষে টাকার দর এ দিন ৩ পয়সা নেমেছে। এক ডলার দাঁড়ায় ৬০.১৪ টাকা। এর কারণ, গত মার্চে হওয়া বৈঠকের খুঁটিনাটি তথ্য বুধবারই প্রকাশ করার কথা মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের। বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই সমস্ত তথ্য ভারতের পক্ষে কতটা ভাল হবে, তা নিয়ে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের ফলেই পড়েছে টাকা।
সেনসেক্সের দৌড় অবশ্য এখন চলবে বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। এ দিন অনেকেই মন্তব্য করেন যে, মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি কেন্দ্রে নয়া সরকার গড়লে সেনসেক্স ২৪,০০০ ছাড়াতে পারে। তবে তার পরই আসবে বাজারে সংশোধনের পালা। কারণ তাঁদের মতে, সূচক ওই উচ্চতায় পৌঁছলে মুনাফা ঘরে তোলার এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না বহু লগ্নিকারীই।
যদিও এ দিন বাজার বাড়ায় হাত ছিল মূলত আইএমএফের পূর্বাভাসেরই। মঙ্গলবার তারা বলেছিল, ২০১৪-এ ভারতের বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৫.৪%। এটাই বিনিয়োগকারীদের আরও চাগিয়ে তোলে। পরে বুধবার বিশ্বব্যাঙ্কও পূর্বাভাস দেয় যে, ২০১৪-১৫ সালের বৃদ্ধি ৫.৭% ছোঁবে বলে। তাদের মতে, এর প্রথম কারণ, টাকার দাম এখন যেখানে, তাতে রফতানি বাড়বে। যা প্রসারিত করবে বৃদ্ধির পথ। আর দ্বিতীয় কারণ আগামী দিনে এ দেশে আরও বড় বড় লগ্নি প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার সম্ভাবনা। তবে বুধবারও শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিল বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিই।
বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে সানা ফার্মা ও টাটা স্টিলের মতো সংস্থারও বড় ভূমিকা আছে। বস্তুত জাপানি ওষুধ সংস্থা দায়িচি স্যাঙ্কিও-র হাত থেকে র্যানব্যাক্সি কেনার কথা ঘোষণার পর থেকেই উঠছে সান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর শেয়ার দর। সংস্থাটির ৬.৯১% উত্থানও সেনসেক্সের পারদ চড়াতে সাহায্য করেছে। আবার নিউজিল্যান্ডে টাটা স্টিলের একটি শাখাকে সেখানকারই এক ইস্পাত সংস্থা স্টিল অ্যান্ড টিউব কিনে নিতে চলেছে বলে খবর প্রকাশ হয় বুধবার। যার জেরে এ দিন টাটাদের সংস্থাটির দর বেড়ে যায় ৩ শতাংশের বেশি।
বিএনকে ক্যাপিটাল মাকের্টস-এর এমডি অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, “আইএমএফের ওই পূর্বাভাস করায় বিশেষ ভাবে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। এখন তারা যেটা চায় তা হল, কেন্দ্রে একটা স্থায়ী সরকার। এ ব্যাপারে ওই সব সংস্থা মোদীর উপরেই বাজি ধরেছে। কারণ, লোকসভা ভোট যত এগোচ্ছে, ততই মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির নির্বিঘ্নে সরকার গড়ার মতো আসন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।”
বাজারের উত্থান নিয়ে একই রকম আশাবাদী স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখও। কমলবাবুর কথায়, “কেন্দ্রে মোদী-সরকার গঠিত হলেই সূচকের একটা বড় লাফ দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সেনসেক্স ছাড়িয়ে যেতে পারে ২৪ হাজারের ঘরও। নিফ্টি ৭৩০০। তবে তার পরই কিন্তু বাজারে সংশোধন আসবে বলে আমার ধারণা। মুনাফা টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ নেবে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।”
তবে সংশোধনের পর বাজারের আবার ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশেজ্ঞদের বড় অংশ। কারণ, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পড়াতে কংগ্রেস সরকার যে সব পদক্ষেপ করেছে, তার সুফল চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে থেকে পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি অনেকেরই ধারণা, এ বারও যদি বর্ষা ভাল হয়, তা হলে দেশের আর্থিক অগ্রগতির হার সন্তোষজনক হবে। আর এই সমস্ত কিছুরই ভাল প্রভাব শেয়ার বাজারে উপর পড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যার নিট ফল সূচকের লম্বা দৌড়ের রাস্তা আরও প্রশস্ত হওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy