Advertisement
E-Paper

সংশয়-কাঁটার মধ্যেই সস্তার টিকিট স্পাইসের

দিন তিনেক আগে টিকিটে ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে সস্তার বিমান সংস্থা এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য স্পাইসজেটও এ বার সেই পথে হাঁটছে। বাজারে পাঁচ লক্ষ সস্তার টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার উদ্যোগের ব্যাপারে প্রশ্ন না-থাকলেও স্পাইসজেটের চেষ্টা সফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ থাকছে। এবং সংশয় বা সমালোচনা দু’টোই আসছে অন্যান্য বিমান সংস্থা আর পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮

দিন তিনেক আগে টিকিটে ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে সস্তার বিমান সংস্থা এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য স্পাইসজেটও এ বার সেই পথে হাঁটছে। বাজারে পাঁচ লক্ষ সস্তার টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার উদ্যোগের ব্যাপারে প্রশ্ন না-থাকলেও স্পাইসজেটের চেষ্টা সফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ থাকছে।

এবং সংশয় বা সমালোচনা দু’টোই আসছে অন্যান্য বিমান সংস্থা আর পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাঁদের বক্তব্য, এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার এখনকার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের নিরিখে টিকিটে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানানসই। কিন্তু স্পাইসজেটের পরিস্থিতি মোটেই তত উজ্জ্বল নয়। সেই জন্যই এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার যে-উদ্যোগ নিয়ে কারও উচ্চবাচ্য নেই, সেখানে অনুরূপ চেষ্টার জন্য স্পাইসজেটের সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। অনুযোগ এবং প্রশ্ন উঠছে, এখনও তো মাঝেমধ্যেই স্পাইসের উড়ান বাতিল হচ্ছে। যাত্রীদের মনে স্পাইস নিয়ে যে-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা পুরোপুরি কাটেনি। সবে কলানিধি মারানের হাত থেকে ফের নিজের হাতে সংস্থার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন স্পাইসের প্রাক্তন মালিক অজয় সিংহ। ধীরে ধীরে যাত্রীদের বিশ্বাস অর্জনের প্রক্রিয়া চলছে। এই সময়ে দুম করে এত সস্তার টিকিট কেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি বিমান সংস্থার কর্তার ব্যাখ্যা, ধুঁকছে বলেই এক ধাক্কায় বাজার থেকে অনেকটা নগদ টাকা তুলে নিতে চাইছে স্পাইস। সস্তার টিকিট বিক্রি করে যদি কিছু যাত্রী পাওয়া যায়, কুমিরছানার মতো করে সেটা দেখানো হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। মালিকানা হাতবদল হলেও বাজারে যে-ধার আছে, এখনও তা শোধ করতে পারেনি স্পাইস। “তাই ওদের নগদ টাকার দরকার। আর তার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। লগ্নিকারীদের টানতে হলে দেখাতে হবে যে, সংস্থার উড়ানে পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে। সেই জন্যই যাত্রীর ভিড় দেখাতে সস্তার টিকিট ছাড়ার কৌশল,” পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বললেন বিমান সংস্থার কর্তা।

শুধু অন্যান্য বিমান সংস্থা নয়, সমালোচনায় মুখর হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতিও। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবি বলেন, “স্পাইসের দু’তিন মাসের আগাম টিকিটও কিনতে চাইছেন না অনেকে। যত সস্তাতেই দিক না কেন, জুনের টিকিট যাত্রীরা এখন কাটবেন কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।” সন্দেহ কেন? পঞ্জাবির ব্যাখ্যা, সাধারণ ভাবে যাত্রী-মানসিকতা হল, সফরের টিকিট হয়ে গেলে হোটেল এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বুকিং সেরে ফেলা। কিন্তু স্পাইসের যা অবস্থা, তাতে তাদের সস্তার টিকিটের উপরে ভরসা করে হোটেল এবং অন্য সব বুকিং করে ফেলার পরে যদি উড়ান বাতিল হয়ে যায়! তখন তো স্পাইস যাত্রী-পিছু ওই দেড় হাজার টাকাই ফেরত দেবে। কিন্তু হোটেলের টাকা মার যাবে। “সম্প্রতি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক যাত্রীর! সেই জন্যই স্পাইসের সস্তার টিকিট কতটা কী বিক্রি হবে, সংশয় থেকেই যাচ্ছে,” বললেন পঞ্জাবি।

টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে যাত্রীদের হয়রানির অভিজ্ঞতাও এই সংশয় সমর্থন করছে। কারণ, গত কয়েক মাসের ডামাডোলে বাতিল উড়ানের টাকা এখনও অনেকে ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে আঙুল উঠছে না। কারণ, তাদের সংস্থার পরিস্থিতি অন্য রকম। উড়ান চালানোর এলাকার দিক থেকেও এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার সঙ্গে তফাত আছে স্পাইসের। এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া কলকাতা থেকে উড়ান চালায় না। বেঙ্গালুরু থেকে কোচি, গোয়ার মতো কয়েকটি শহরে যাতায়াত করে। এই সব রুটে এক পিঠে ৭০০ টাকায় বিমান টিকিট দিচ্ছে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। সেই টিকিট কেনার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার। তাদের সস্তার টিকিটে এই বছরের ৩ অগস্ট থেকে ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিমানে চড়া যাবে। স্পাইসজেট কিন্তু অত দীর্ঘ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সস্তার টিকিট দিচ্ছে না। তাদের টিকিটে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। স্পাইসজেট জানিয়েছে, ১৪৯৯ টাকার মোট পাঁচ লক্ষ টিকিট ছাড়া হয়েছে। সেই টিকিট কাটা যাবে কাল, শনিবার রাত পর্যন্ত। কিন্তু টিকিট বিকোবে কি না, বিকোলেও শেষরক্ষা হবে কি না, সংশয় ও সমালোচনা তা নিয়েই।

তবে যাবতীয় সংশয়-সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে স্পাইসের এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের উড়ান এখন নিয়মিতই চলছে। বছরের এই সময়টায় এমনিতে যাত্রী কম হয়। তাঁর কথায়, “১৮৬ আসনের বিমানে বিশেষ ভাড়ার টিকিট পাওয়া যাবে বড়জোর ১২ থেকে ১৫টা। তাই পরিকল্পনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্ষতি কী?” ওই অফিসারের বক্তব্য, এই ধরনের অফার দিলে অনেকে ওয়েবসাইটে ঢোকেন। তখন সস্তার টিকিটের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি ভাড়ার টিকিটও বিক্রি হয়ে যায়। বিশ্বের সব সস্তার বিমান সংস্থাই এই মডেল মেনে চলে বলে তাঁর দাবি।

“সংস্থার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থায় টিকিট দেওয়ার এই ঘোষণা আত্মবিশ্বাসেরই প্রকাশ। এতে যাত্রীদের যেমন সুবিধে হবে, বিমান সংস্থারও হবে,” বলছেন স্পাইসজেটের (চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সঞ্জীব কপূর।

spicejet sunanda ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy