সুব্রত রায়
সহারা মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি জে এস খেহর। তাঁকে এবং বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণনকে নিয়ে তৈরি বেঞ্চই লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত না-দেওয়ার অভিযোগে সহারা কর্ণধার সুব্রত রায়কে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। ওই বেঞ্চেরই নির্দেশ ছিল, ১০ হাজার কোটি টাকা জামিন না-দিলে ছাড়া হবে না সুব্রতবাবুকে। এমনকী জেলে পাঠানোর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুব্রতবাবুর করা আবেদন আসলে আদালতের উপর ইচ্ছাকৃত ভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা বলে তীব্র ভর্ৎসনাও করে বেঞ্চ। এ বার তারই অন্যতম সদস্য খেহর এই মামলা থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় এবং অপর বিচারপতি রাধাকৃষ্ণন সদ্য অবসর নেওয়ায়, মামলাটির বিচারের জন্য নতুন বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সহারা মামলা নিয়ে যাতে তাঁর বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাত বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না-ওঠে সে জন্যই খেহরের এই সিদ্ধান্ত।
বস্তুত এই মামলা নিয়ে তাঁদের বেঞ্চ যে প্রবল চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে, আগেই তা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণন। এমনকী সহারার মতো মামলা সামলাতে যে ধৈর্য ও সময় লাগে, তাতে বিচারপতিদের ‘অতিমানব’ হতে হবে বলেও গত ৬ মে-র শুনানিতে মন্তব্য করে ক্ষুব্ধ বেঞ্চ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে দিনই এই মামলা থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে চিঠি লেখেন খেহর। এই চাপের কারণেও খেহরের সরে দাঁড়ানো অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৬ মে প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার কাছে নিজের আর্জি জানিয়ে চিঠি লেখেন খেহর। প্রধান বিচারপতির সামনে অবশ্য তা পেশ করা হয় পরের দিন। তার পরই সুপ্রিম কোর্টে চলা সহারা মামলার শুনানির জন্য নতুন একটি বেঞ্চ গড়ার বিষয়ে মত দেন লোঢা।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ তাঁকে জেলে পোরার যে নির্দেশ দিয়েছিল রাধাকৃষ্ণন ও খেহরের বেঞ্চ, তা ন্যায়বিচার ছিল না এই অভিযোগে তুলেই মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। এমনকী এই নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আনেন তিনি। সংস্থা যে বিচারপতি বদল চাইছে, কিছু ক্ষেত্রে সে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়। ৬ মে শুনানিতে বেঞ্চ বলেছিল, “এই সব অভিযোগের যৌক্তিকতাই নেই। সুব্রতবাবু যা বলেছেন, সেটি আসলে তাঁর খুব হিসেব করে খাড়া করা এক মানসিক প্রতিরোধ। একে কড়া ভাবে প্রত্যাখ্যান করাই উচিত।” পাশাপাশি সহারা কর্তাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বেঞ্চ বলেছিল, “আদালতের নির্দেশ না-মানার অর্থ আইনের শাসনের মূলে আঘাত করা। যার উপর গোটা বিচার ব্যবস্থাটাই দাঁড়িয়ে। আর কেউ তা না-মানলে, সেই নির্দেশ জোর করে মানতে বাধ্য করানো ও প্রয়োজনে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতাও আদালতের রয়েছে।” আইনি যুদ্ধে সহারার একের পর এক কৌশলে অসন্তুষ্ট বেঞ্চ সে দিন লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তারা বার বার আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেছে বলেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy