Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Coronavirus

‘অক্ষত থাকুক করোনার বিরুদ্ধে লড়াই’, কাটল অক্ষয় তৃতীয়া

কিন্তু কোথায় কী! লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়িয়ে করোনাভাইরাসের বিপদ এ বারের মতো ভেস্তে দিল অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোও।

সোনার দোকানে শাটার নামিয়েই চলছে অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো। রবিবার, বাগুইআটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

সোনার দোকানে শাটার নামিয়েই চলছে অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো। রবিবার, বাগুইআটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৬
Share: Save:

প্রথম দফায় ২১ দিনের লকডাউন। উঠবে ১৪ এপ্রিল রাত ১২টায়। মার্চের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ঘোষণার পরেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, এ বছর পয়লা বৈশাখের হালখাতা আর হচ্ছে না। কিন্তু বছর শুরুর পুজো বলে কথা। অনেকেই তাই ঠিক করে নেন, পুজোটা তোলা থাক অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য। ওই দিনই খাতাপুজো করে ব্যবসায়িক সৌভাগ্যের অক্ষয় কামনা করা হবে। কথায় বলে, ‘ক্ষয় নেই যার, সেটাই অক্ষয়!’

কিন্তু কোথায় কী! লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়িয়ে করোনাভাইরাসের বিপদ এ বারের মতো ভেস্তে দিল অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোও। প্রতি বছর এই দিনে ভিড়ে থিকথিক করা বৌবাজারের সোনাপট্টি, বড়বাজারের ব্যবসায়িক মহল, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া রবিবার দিনভর কার্যত লোকশূন্যই রইল। কোথাও দোকানের গেট জুড়ে ঝুলল না ফুলের মালা, ঝোলানো হল না রঙিন বাতি। দেখা মিলল না মিষ্টির প্যাকেট হাতে হালখাতা সেরে বাড়িমুখী জনতার। বাগুইআটিতে আবার দেখা গেল, দোকানের শাটার নামিয়ে ভিতরে পুজো সারছেন মালিক। অন্য বার এই দিনে নাওয়া-খাওয়ার সময় না পাওয়া মিষ্টির ব্যবসায়ী থেকে ফুল বিক্রেতা— সকলেই বেশির ভাগ সময় কাটালেন ঘরবন্দি হয়েই। কয়েক পুরুষ ধরে যজমানি পেশায় যুক্ত মধ্য কলকাতার বাসিন্দা পুরোহিত রবি বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই দিনে আমার ধুতি-গামছা ধরে কী রকম টানাটানি চলে সেটাই আজ মনে পড়ছে। এ বার কয়েক জন চুপিসারে খাতা পুজো করে দিয়ে যেতে বলে রেখেছিলেন, তা-ই করেছি।’’

এমনই বদলে যাওয়া অক্ষয় তৃতীয়ার দুপুরে বৌবাজারে দেখা গেল, মাস্ক পরা নবতিপর বৃদ্ধকে নিয়ে হাজির হয়েছেন এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘বাবা সকাল থেকে জেদ ধরেছেন। বলছেন, দোকানে অন্তত একটা নতুন গণেশ পাততেই হবে। আর নতুন খাতা গণেশের পায়ে ছুঁইয়ে নিতে হবে। বাবার বয়স হয়েছে, কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না দেখে আসতে হয়েছে। পুজোটুকু সেরে চলে যাব।’’

আরও পড়ুন: প্রাক্তন ও বর্তমানের মুষ্টিবদ্ধ হাত পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ

ছেলে-বৌমা যখন গণেশ পাততে ব্যস্ত তখন দোকানের এক দিকে চেয়ারের হাতল শক্ত করে ধরে বসা নবতিপর দুলাল বণিক বলে চলেন, ‘‘আজ, বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া। বলা হয়, এই দিনে কারও মৃত্যু হলে তাঁর অক্ষয় স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে। এ দিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়েছিল। কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য দান করেছিলেন এ দিনই। কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হওয়ায় বৈভব-লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। খাতাপুজো এ কারণেই এত গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনেই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। তাই আজ, গঙ্গাস্নান করলে সব পাপ ধুয়ে-মুছে যায়, এমনটাই বলা হয়।’’ মাস্কের আড়াল থেকেই খানিক দম নিয়ে বৃদ্ধ বলে চলেন, ‘‘করোনাও ধুয়ে-মুছে যাবে এক দিন। কিন্তু পুজো বন্ধ রাখলে চলে নাকি!’’

একই দাবি বড়বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী নারায়ণ চৌধুরীর। মুখে মাস্ক পরা ঠাকুরমশাই আর ছেলেকে নিয়ে দুপুরে দোকানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। জানালেন, ছোঁয়াচ বাঁচাতে পুজোর কোনও বাজার করেননি। স্ত্রী আসতে চেয়েছিলেন, তাঁকেও বাড়িতে রেখে এসেছেন। কলেজ স্ট্রিটের শ্যামানন্দ সাহা জানাচ্ছেন, প্রতি বার পয়লা বৈশাখে পুজো করেন। এ বার লকডাউন উঠে যাবে ভেবে অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য মিষ্টি আর কয়েক হাজার ক্যালেন্ডার ছাপানোর বরাত দিয়ে রেখেছিলেন। মিষ্টি বাতিল করলেও ছাপানো ক্যালেন্ডার আর ফেরানো যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু কাকে ক্যালেন্ডার দেব?

হালখাতাই তো হল না।’’ রাজ্যের স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘অক্ষয় তৃতীয়াতেও কিছুই বদলাল না। বহু সোনার কারিগর এর পরে কাজ হারাবেন। গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি আমরা। তিনি আমাদের জন্য দ্রুত কোনও প্যাকেজ ঘোষণা না করলে ব্যবসা বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।’’

আরও পড়ুন: থানায় অভিযোগ, উদ্ধার কিশোরী পরিচারিকা

সুনসান গড়িয়াহাটে সদ্য পুজো সারা কাপড়ের দোকানের মালিক কমলেশ দত্ত বললেন, ‘‘কোনও মতে পুজো করলাম। ভাল ব্যবসার থেকেও অক্ষয় তৃতীয়ায় ঠাকুরের কাছে আরও বেশি চেয়েছি, রাজনীতি ছেড়ে করোনার বিরুদ্ধে সকলের এই লড়াই যাতে অক্ষত থাকে। তা হলেই জয় হবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE