Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Corona

‘করোনা নিয়ে ভাবছি না, আরও অনেক ঝুঁকি রয়েছে’

এ দিন দুপুরের হাতিবাগান বাজার দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে আগের দিনই আদালত পুজো নিয়ে এত বড় নির্দেশ দিয়েছে।

নির্বিকার: সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যের সব পুজোমণ্ডপকে কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। তার পরেও দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে চলছে দেদার কেনাকাটা। মঙ্গলবার (বাঁ দিকে) গড়িয়াহাট এবং (ডান দিকে) হাতিবাগানে।   ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নির্বিকার: সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যের সব পুজোমণ্ডপকে কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। তার পরেও দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে চলছে দেদার কেনাকাটা। মঙ্গলবার (বাঁ দিকে) গড়িয়াহাট এবং (ডান দিকে) হাতিবাগানে।   ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৭
Share: Save:

আদালতের নির্দেশের পরেও উৎসবে বেপরোয়া শামিল হওয়ার উৎসাহে ভাটা পড়ল না। গত এক সপ্তাহের মতোই মঙ্গলবার চতুর্থীর বিকেলেও দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে মাস্কহীন ক্রেতার ঢল নামল শহরের বাজারে। বেপরোয়া এক ক্রেতার আবার যুক্তি, “মণ্ডপে ঢুকে ঠাকুর দেখতে নিষেধ করেছে কোর্ট। রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে তো বাধা নেই।

পুজোয় বাইরে বেরোতে হলে নতুন পোশাক তো লাগবেই।” কিন্তু মুখের মাস্ক কানে ঝুলছে কেন? এর উত্তরে মিলেছে শুধুই হাসি। হাতিবাগান বাজারের এক পোশাক ব্যবসায়ী শঙ্কর পাল মানলেন, “সোমবারের রায়ের পরেও এ দিনের ভিড় আগের থেকে একটুও কমেনি। কেনাকাটা করতে এসে অনেকেই বলছিলেন, ঠাকুর দেখতে না পারলেও এ বার যা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নতুন পোশাক কিনে রাখা ভাল।”

এ দিন দুপুরের হাতিবাগান বাজার দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে আগের দিনই আদালত পুজো নিয়ে এত বড় নির্দেশ দিয়েছে। যে কোনও জমায়েতই সংক্রমণ বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করবে, তা মালুম হয়নি ক্রেতাদের মন্তব্য শুনেও। বার বার প্রচার সত্ত্বেও একটি বড় অংশের মানুষের মধ্যে যে অসচেতনতা এবং বেপরোয়া মনোভাব রয়ে গিয়েছে, তার উদাহরণ মধ্যমগ্রামের সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির আশঙ্কায় নিকাশি দফতরে ছুটি বাতিল

নিজের কোলের সন্তান সঙ্গীতাকে নিয়ে হাতিবাগানে পৌঁছে গিয়েছেন সেই মা। সঙ্গীতার মুখেও ছিল না মাস্ক। প্রশ্ন করায় সংযুক্তার বেপরোয়া জবাব, “করোনা নিয়ে ভাবছি না, জীবনে আরও অনেক ঝুঁকি রয়েছে।” ভিড়ের মধ্যে থেকেই মুখ বাড়ানো এক বিক্রেতা বললেন, “আদালতের নির্দেশের পরে ভেবেছিলাম আর বিক্রি জমবে না। কিন্তু মানুষ মেতে আছেন আনন্দে।”

এ দিন গড়িয়াহাট চত্বরের ভিড়ের পরিধিটা আবার গত চার দিনের হিসেবকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে জানালেন গড়িয়াহাট থানার পুলিশ আধিকারিকেরাই। বিকেল থেকে সেখানে বাড়তি পুলিশকর্মী নামিয়ে ভিড় সামলাতে হয়েছে। বজবজ থেকে আসা এক ক্রেতা সিগারেটে সুখটান দিয়ে বলে উঠলেন, “শেষ মুহূর্তে পুজো হবে। মানুষের আবেগকে আইন দিয়ে আটকানো যায় না। যে ভাবে জোর করে মাস্ক পরানো যায় না।”

ধর্মতলার মোড়ে ওয়াচটাওয়ার থেকে ভিড় দেখতে থাকা নিউ মার্কেট থানার পুলিশ আধিকারিকের আবার মন্তব্য, “এই ভিড়ের ছবি আদালত পর্যন্ত পৌঁছলে কোনও পুজোরই অনুমতি মিলবে না।”

দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাজারহাটের এক শপিং মলে বাজার করতে এসেছিলেন পিয়ালী রায়। তিনি বলেন, “পঞ্চমীতে ঠাকুর দেখতে যাব ভেবেছিলাম। কোর্টের নির্দেশের পরেই বদলেছি প্ল্যান। মণ্ডপে যদি ঢুকতে না-ই পারি তা হলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে লাভ কী? কিন্তু বাচ্চাদের নতুন জামা না হলে মন খারাপ হবে, তাই আসা।”

ভিআইপি রোড এলাকার একটি শপিং মলের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, আদালতের রায় শুনেও সেখানে ভিড়ের হেরফের হয়নি। মলের এক বিক্রেতা জানান, এ বার শেষ কয়েক দিনে বাজার একটু চাঙ্গা হয়েছে, এই যা। রায় শুনে ব্যবসায় ভাটা পড়বে ভেবে শঙ্কিত ছিলেন তাঁরা। এ দিন বেপরোয়া ক্রেতাদের দৌলতে সেই আশঙ্কা অনেকটাই দূর হল।

নিউ মার্কেট অঞ্চলের এক দোকানদারের অবশ্য দাবি, “পুলিশ আমাদের মাস্ক দিয়েছে। আমরা কষ্ট হলেও সেটা পরছি। অথচ বহু ক্রেতার মধ্যেই সচেতনতা নেই। ওঁদের জন্য আমাদের যে কী হবে! এ দিকে পেটের দায়ে ঘরেও বসে থাকতে পারব না। তাই এই ভিড় আশঙ্কা দূর করল, না কি বাড়াল সেটা সময় বলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona High Court Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE