Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
East West Metro

নতুন করে ফাটল একাধিক বাড়িতে, ক্ষোভ ও আতঙ্ক বাড়ছে বৌবাজারে

মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে যদিও ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেন, তাঁদের কতটা কী ক্ষতি হয়েছে, সে সব না জেনেই বলা হচ্ছে চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

ক্ষোভ ও আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

ক্ষোভ ও আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৩
Share: Save:

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলেন।মেট্রো কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকের আশ্বাস দিলেন। চিঠি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষও। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ কোনও ভাবেই কমল না। বরং সোমবার নতুন করে বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ক্ষোভের পাশাপাশি তাঁদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

শনিবার রাতেই হঠাৎ করে বৌবাজার এলাকার বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। গৌরী দে লেন, দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেন এলাকার মাটির নীচ দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের সুড়ঙ্গ যাওয়ার কথা। জানা গিয়েছে, বোরিংয়ের কাজ করার সময় ভূগর্ভ থেকে জলস্রোত বার হতে শুরু করে। আর সেই জলস্রোতের আঘাতে মাটি নরম হয়ে যাওয়াতেই বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। কয়েক বাড়ির একাংশ ভেঙেও পড়ে। এ দিন সকাল থেকে জল বন্ধ করার চেষ্টা করেন ইঞ্জিনিয়াররা। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, নতুন করে বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত সেখানকার বাসিন্দারা। শেষমেশ কি বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে তাঁদের, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

এ দিন বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গিয়ে আশ্বাস দেন, ‘‘জিনিসপত্র বা নথিপত্র নিয়ে চিন্তা করবেন না। নথি যদি হারিয়ে যায়, আমি বানিয়ে দেব।’’ এতেও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কমেনি। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে যদিও ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেন, তাঁদের কতটা কী ক্ষতি হয়েছে, সে সব না জেনেই বলা হচ্ছে চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী সব কিছুর আগে জীবনকে রাখছেন বটে, কিন্তু জিনিসপত্র-টাকাপয়সা বাদ দিয়ে তো আর জীবন চলে না!

আরও পড়ুন: ধরাই পড়েনি জলস্তর! মেট্রোর মাটি পরীক্ষার গলদেই বউবাজারের এই বাড়ি বিপর্যয়​

এই কাটা ঘায়ের মধ্যেই নুনের ছিঁটে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ঘটনা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর এ দিন দুপুরে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির থাকার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যে বাড়িগুলির ক্ষতি হয়েছে, তা সারিয়ে দেওয়া হবে। যেগুলি ভেঙে পড়েছে, তৈরি করে দেওয়া হবে সেগুলিও। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগেরই অভিযোগ, তাঁদেরকে মূল চিঠির একটা ফোটোকপি দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা নেই, কত দিনের মধ্যে বাড়ি মেরামত করে দেওয়া হবে বা ভেঙে পড়া বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। নীল কমল দাস নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘একে কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে ছাড়া আর কী বলব বলুন তো! ফোটোকপি করা এই কাগজের কী মূল্য আছে? আর যদি ধরেনিই ওই কাগজ সত্যি, তা হলে কোনও কিছুরই তো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই সেখানে। আমাদের অবস্থার কোনও পরিবর্তনের আশা ওই চিঠিতে অন্তত দেখতে পাচ্ছি না।’’

ফলে প্রতি মুহূর্তেই ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা মতিলাল সাউ জানান, ‘‘এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। সঙ্গে কিচ্ছু নিয়ে আসতে পারিনি। টাকা-পয়সা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, মূল্যবান জিনিসপত্র, বাড়িতেই সব পড়ে রয়েছে। সাতসকালে এলাকায় কী হচ্ছে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ চারদিক ঘিরে রেখেছিল। ঢুকতে দেয়নি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’

গৌরী দে লেনের বাসিন্দা হৃদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতাও একই রকম। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আজও কিছু বাড়িতে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। এখান দিয়ে সুড়ঙ্গ নিয়ে গেলে যে আমাদের ক্ষতি হবে, ইঞ্জিনিয়াররা তা আগে থেকে বুঝতে পারেননি কেন? এখন এর দায় কে নেবে?’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের চিঠি।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: শোভনদের ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টায় মুকুল, আজ রাতে দিল্লিতে বৈঠক তিনমূর্তির​

তবেসর্ব ক্ষণ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রাজ্য সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাশেই গোয়েঙ্কা কলেজ। সেখানে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চালু হয়েছে আপদকালীন নম্বর ৯৪৩২৬১০৪৭২, যাতে বিপদ বুঝে ফোন করতে পারেন সাধারণ মানুষ এবং‌ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়। এ দিন কন্ট্রোল রুমে বসে পরিস্থিতি তদারকি করেন এলাকার বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ অফিসাররাও। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তাঁরা।

ঘর ছেড়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। বৌবাজারে বেশ কিছু সোনার দোকানও বন্ধ রয়েছে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের না হয় অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কত দিন দোকান বন্ধ রাখতে হবে? নির্দিষ্ট করে কিছুই তো বলা হচ্ছে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE