Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
NRS

ছ’মাসের শিশু কোলে বাবার আর্তি, ‘ছেলেটাকে বাঁচান’, জুনিয়র ডাক্তাররা বলে দিলেন, ‘এখানে কিছু হবে না’

বুধবার এনআরএস-সহ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

ছোট্ট ছেলেকে কোলে নিয়ে শেখ নজরুল ও তাঁর স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

ছোট্ট ছেলেকে কোলে নিয়ে শেখ নজরুল ও তাঁর স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ১৭:২০
Share: Save:

ছ’মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে এমার্জেন্সির দিকে এগোচ্ছিলেন এক দম্পতি। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতেই দেখেন এমার্জেন্সি বন্ধ। একমাস আগে ছোট্ট শিশুটির মলদ্বারে অপারেশন হয়েছিল। এ দিন পরিস্থিতি হঠাৎ খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে ছুটে আসেন বীরভূমের বাসিন্দা শেখ নজরুল ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তাঁরা কোনও চিকিৎসা পরিষেবাই পেলেন না এনআরএস-এ।

ছোট্ট শিশুটির মুখে কথা ফোটেনি এখনও। শুধু কেঁদে চলেছে। আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে ওই দম্পতির। চিকিৎসা পরিষেবা না পেলে ছেলেটার কী হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন। উদ্বেগে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে শেখ নজরুলের আকুতি, ‘দেখুন আমার ছেলেটা শুধু কেঁদেই চলেছে। মলদ্বার ফুলে আরও লাল হয়ে গিয়েছে। ওর কি চিকিৎসা হবে না?’ তবে শেষ পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে ‘না’-ই শুনতে হল তাঁকে।

বুধবার এনআরএস-সহ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এমনকি জরুরি বিভাগেও ডাক্তার মিলছে না। তার জেরে নজরুলের মতোই উদ্বেগ নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে হাজার হাজার রোগী এবং তাঁদের পরিবারকে।

আরও পড়ুন: রাজ্য জুড়ে অচলাবস্থা জারি, হাসপাতালে অমিল আউটডোর পরিষেবা, চূড়ান্ত নাকাল রোগীরা​

এনআরএস চত্বরে গাছের তলায় মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন সিরাজুল মোড়ল। তিনি হাবড়ার বাসিন্দা। তাঁর ১৪ বছরের মেয়ে তুহিনা খাতুন ভুল করে কীটনাশক খেয়ে ফেলেছিল। রবিবার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তুহিনাকে। কিন্তু তার পর থেকেই অচলাবস্থা। সিরাজুলের অভিযোগ, ‘মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছে কি না, ডাক্তারবাবুদের কাছ থেকে জানতে পারছি না। সেই রবিবার থেকে এনআরএস-ই আমাদের ঘর-বাড়ি হয়ে গিয়েছে। ডায়ালিসিস শুরু হয়েছে বলে শুধু জানতে পেরেছিলাম। এখন মেয়ে কেমন আছে বলতে পারছি না।’

রেললাইনের ওভারব্রিজে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যায় কালিকাপুরের বাসিন্দা, বছর ১২-র ইশিকা মণ্ডলের। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু এ দিন ইশিকার বাবা অর্ধেন্দু মণ্ডলকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, ‘অন্যত্র নিয়ে যান মেয়েকে। হাত প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। এর পর আর চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারব কি না, বলতে পারছি না।’ তাই আতঙ্ক এবং উদ্বেগে ইশিকাকে নিয়ে অন্য হাসপাতালের দিকে রওনা হলেন অর্ধেন্দুবাবু।

এনআরএসের মতোই কলকাতার এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, সর্বত্র একই ছবি ফুটে উঠেছে। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা আসছেন ঠিকই, কিন্তু কর্মবিরতির জন্য চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। অন্যত্র যে যাবেন তারও উপায় নেই। কারণ কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলিতেও একই অবস্থা।

মেয়ে ইশিকার সঙ্গে অর্ধেন্দু মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: বিজেপির মিছিলে জলকামান, গ্যাস, লাঠি, স্তব্ধ মধ্য কলকাতা, নেতারা বললেন রাজ্যে গণতন্ত্র নেই​

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায় ভাইয়ের স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসেছিলেন রামপুরহাটের বাসিন্দা নাসের খান। দু’দিন আগে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বটে, কিন্তু বার বার নাসেরকে ডেকে বলা হচ্ছে, রোগীকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাতে অন্যান্য রোগীর পরিবারের মতোই তাঁর আক্ষেপ, ‘এ সব কি হচ্ছে রাজ্যে? আমরা কি চিকিৎসা পাব না?’

এএনআরএস-এর মেন গেটে এখনও তালা ঝুলছে। বন্ধ এমার্জেন্সি বিভাগও। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও তালা ঝুলছে। এ দিন এসএসকেএম-এ গিয়ে সেখানকার আউটডোর-সহ জরুরি বিভাগও বন্ধ থাকতে দেখা যায়।। গুরুতর আহত অবস্থায় বহু রোগী এলেও, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। একই ছবি দেখা গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও। সেখানেও কর্মবিরতিতে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা এবং তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়।র ডাক্তাররাও। তার ফলে স্বাস্থ্য সঙ্কটে ভুগছেন রাজ্যবাসী।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE