Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Thakurnagar

চাঁদা তুলে চালু হল মহিলাদের কোয়রান্টিন কেন্দ্র

জনা দশেক মহিলাকে ৭০ জনেরও বেশি পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল ঠাকুরনগরের শিমুলপুর আনন্দপাড়া নরহরি বিদ্যাপীঠে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০১:৩৪
Share: Save:

পানীয় জল ও খাবারের অভাব, শোয়ার অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ছিলই। কিন্তু আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল যে, কোয়রান্টিন কেন্দ্রে মহিলাদের রাখা হচ্ছে পুরুষ পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে। ব্যবহার করতে হচ্ছে একই শৌচালয়। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। সেই সমস্যা মেটাতেই তৎপর হন উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের কিছু যুবক-যুবতী। তাঁদের উদ্যোগে তৈরি হয় মহিলাদের পৃথক কোয়রান্টিন কেন্দ্র।

জনা দশেক মহিলাকে ৭০ জনেরও বেশি পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল ঠাকুরনগরের শিমুলপুর আনন্দপাড়া নরহরি বিদ্যাপীঠে। ভেলোর থেকে অস্ত্রোপচার করিয়ে ফিরে সেখানে ছিলেন মিতা গোলদার ও তাঁর মা রীতা চক্রবর্তী। মিতার কথায়, ‘‘দু’টি শৌচালয়ে পুরুষদের পিছনে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।’’ বিষয়টি জানতে পেরে আশিস, ভুলো, সুনীল, শিবেশ, প্রিয়ন্তির মতো স্থানীয় যুবক-যুবতীরা গাইঘাটা ব্লকের বিডিওর কাছে সমস্যার সমাধানের জন্য আবেদন করেন। প্রথমে কয়েক জন মহিলাকে বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু কয়েক জনকে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেন স্থানীয় মানুষ। এর পরে বিডিও-কে মেয়েদের স্কুলে আলাদা কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেন ওই ছেলেমেয়েরা। কিন্তু প্রশাসন জানিয়ে দেয়, অনুমতি দিলেও সব কিছুর দায়িত্ব নিতে হবে ওই ছেলেমেয়েদেরই। তাতে রাজি হয়ে যান আশিস, প্রিয়ন্তিরা।

তাঁরা জানান, বন্ধ থাকায় বেশ নোংরা হয়ে ছিল ঠাকুরনগর উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় চত্বর। রবিবার সকালে তাঁরা স্কুলে ঝাঁট দেন। অ্যান্টিসেপটিক তরল দিয়ে স্কুল জীবাণুমুক্ত করা হয়। ভাড়া করে আনা হয় জেনারেটরও। এর পরে সেখানে অ্যাম্বুল্যান্সে করে মহিলাদের নিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। মহিলাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন দলেরই সদস্য অপূর্ব। ঠাকুরনগরে নিজের মোমোর দোকানে রান্না করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। চাদর, মশারির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেরাই কিনেছেন ওই তরুণ-তরুণীরা। সহায়তা করেছেন স্থানীয় কয়েক জনও।

তাঁদের কাজ নিয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এর থেকে ভাল খবর আর হতে পারে না। সব কাজ প্রশাসনের পক্ষে করা সম্ভব হয় না। ওই তরুণেরা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা প্রশংসনীয়।’’ পটনা থেকে ফিরে ওই স্কুলে মা ও বছর তিনেকের মেয়েকে নিয়ে রয়েছেন পূজা বিশ্বাস নামে এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার পূজা বলেন, ‘‘ওঁরা না থাকলে কোথায় যেতাম কে জানে! মেয়ের জন্য দুধের ব্যবস্থাও করেছেন ওঁরা।’’ ওই যুবক-যুবতীদের পক্ষে আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতেও তো মা-বোনেরা রয়েছেন। তাই এই সমস্যার কথা জানতে পেরে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thakurnagar Quarantine Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE