Advertisement
০২ মে ২০২৪
West Bengal Lockdown

নিয়মের রকমফেরে ধোঁয়াশা লক্ষ্মণরেখায় বন্দি শহরে

বালিগঞ্জের একটি পরিবারের গৃহকর্ত্রী তথা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এক মহিলা কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে চরম সতর্কতার পদক্ষেপে কসুর করেনি গড়িয়াহাটের পুলিশ।

গণ্ডিবদ্ধ: বন্ধ রয়েছে বালিগঞ্জ প্লেসের রাস্তায় ঢোকা-বেরোনো। (ডান দিকে) বন্ধ উত্তর কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিট। মঙ্গলবার, সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

গণ্ডিবদ্ধ: বন্ধ রয়েছে বালিগঞ্জ প্লেসের রাস্তায় ঢোকা-বেরোনো। (ডান দিকে) বন্ধ উত্তর কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিট। মঙ্গলবার, সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

টালার ওলাইচণ্ডী রোডে সদ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মী এক করোনা-রোগী। তবে ওই চত্বরের বাসিন্দাদের পুরোপুরি গৃহবন্দি রাখা হয়নি। ঘন বসতিপূর্ণ তল্লাটের অপরিসর রাস্তায় স্থানীয় পুরকর্তা থেকে পুলিশ-প্রশাসন, সকলেই পরিচ্ছন্নতা-বিধির প্রচার চালিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এলাকা দূষণমুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, দক্ষিণের বালিগঞ্জ প্লেসের একটি অংশে কিন্তু পুলিশি ব্যারিকেড পেরিয়ে কার্যত মাছিটিরও গলার জো নেই।

বালিগঞ্জের একটি পরিবারের গৃহকর্ত্রী তথা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এক মহিলা কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে চরম সতর্কতার পদক্ষেপে কসুর করেনি গড়িয়াহাটের পুলিশ। কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছে থোক টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। ফোনে কোনও প্রয়োজনের খবর জানতে পারলে যাতে টাকার জন্য কিছু না-আটকায়। আনাজ বা মাছওয়ালারাও ভ্যান নিয়ে হাজির হচ্ছেন ব্যারিকেডের ও-পারে। পারস্পরিক দূরত্ব-শৃঙ্খল রেখে দরকারি জিনিসটি নিচ্ছেন ঘেরাটোপের বাসিন্দারা। কোথায় কী করতে হবে, তা ছকে ফেলেছে দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি থানা। উত্তরে আবার সর্বত্র স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ অবশ্য শহরের সব ঘেরাটোপের জন্য বাঁধাধরা নিয়মে বিশ্বাসী নন। তাঁর কথায়, ‘‘জরুরি দরকার ছাড়া মানুষের বেরোনো বন্ধ করাই লক্ষ্য। তবে একেবারে ভিড়ে ঠাসা ঘিঞ্জি এলাকায় সাহায্য করতে চাইলেও সে ক্ষেত্রে পুলিশেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।’’

আরও পড়ুন: দিনভর দৌড়ে বেড়িয়েও শূন্য অনলাইন অর্ডারের ঝুলি

বালিগঞ্জে করোনা-পজ়িটিভ ওই চিকিৎসকের পরিবার পুরোপুরি গৃহবন্দি থাকায় তাঁদের পাশে কী ভাবে দাঁড়ানো হবে, তার সমাধানে পুলিশের মুশকিল-আসান হয়ে দেখা দিয়েছেন পড়শিরাই। ওই বাড়িতে আছেন মহিলার স্বামী (তিনিও ডাক্তার), তাঁর বৃদ্ধা মা এবং দুই নাবালক সন্তান। গোড়ায় পুলিশ চেয়েছিল, ওই পরিবারটি কোনও টাকা দিলে তা প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় নিয়ে স্যানিটাইজ় করে কেনাকাটা হোক। ওই বাড়ির উল্টো দিকের বাসিন্দা রীতা মিত্র এগিয়ে এসে বলেছেন, ওঁদের কাছ থেকে টাকা পরে নিলেও চলবে। কখনও গৃহকর্তা অনলাইনে মুদির দোকানে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দরকারি জিনিস ব্যারিকেডের ধারে দাঁড়িয়ে হাতে নিয়ে বাড়ির সামনে রেখে আসছেন রীতাদেবী। কখনও বা তিনি নিজেই তা কিনে পড়শির বাড়ির সামনে কাগজ পেতে রেখে ফোন করে দিচ্ছেন।

তবে পারস্পরিক সহায়তার এই চেষ্টা ফলপ্রসূ হওয়াটা নির্ভর করছে বাসিন্দাদের সচেতনতার উপরেও। মুদিয়ালি বা হাজি মহসিন রোডের ঘেরাটোপে টালিগঞ্জ থানার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মানুষের সঙ্কটে দারুণ সফল। দু’টি এলাকাতেই করোনা-রোগী পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশি উদ্যোগে পারতপক্ষে বেরোনোর দরকারই পড়ছে না বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ার কাছে অনাথ দেব লেনে আবার সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত বাজারে যাওয়ার ছাড় রয়েছে। স্থানীয় বস্তিবাসী এক ব্যক্তি কোভিড ১৯-আক্রান্ত হওয়ার পরে অবশ্য গলিতে ঢোকার একটি বাদে সব রাস্তায় ব্যারিকেড। স্থানীয় এক তরুণী জানালেন, মোবাইল অ্যাপে আনাজপাতি আমদানির পরেও ডেলিভারি বয়কে লক্ষ্মণরেখার ও-পারে দাঁড় করিয়েই সব নিতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: স্মৃতিতে মন্বন্তর, করোনার ত্রাণে দান বৃদ্ধ-বৃদ্ধার

নিউ আলিপুরে এক করোনা-রোগীর হদিস মেলার পরেও উদ্যোগী হয়ে বাসিন্দাদের বাজার করার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে পুলিশ। শ্যামপুকুরের একটি এলাকায় অশীতিপর বাবার ওষুধের জন্য হন্যে হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। নলিন সরকার স্ট্রিট এলাকার অপরিসর রাস্তাটি ঘিরে ফেলতে হয়েছে হাসপাতালে আয়ার কাজ করা এক মহিলার করোনা হওয়ার পরে। বিপদে-আপদে পুলিশই ভরসা। তবে এই ঘেরাটোপ থেকে কবে মুক্তি, এখনও পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি পুর প্রশাসনের কাছ থেকে। সাধারণত, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে নতুন করোনা-রোগী চিহ্নিত না হলে এলাকাটির অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলা যায়। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন’-এর অধিকর্তা মধুমিতা দুবের মতে, ‘‘সময়টা ধৈর্য ধরার। আতঙ্কিত না-হওয়ার। প্রশাসনের তরফেও সেটাই বোঝানো হচ্ছে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE