Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

মুড়ি খেয়ে চার দিন, টুইটারে জানিয়ে মিলল রসদ

কাজের সূত্রে বিহার থেকে কলকাতায় আসা ওই শ্রমিক পরিবারগুলির একটির সদস্য রাহুল শর্মা টুইট করে নিজেদের দুর্দশার কথা জানান।

এই টুইটেই সাড়া মেলে।

এই টুইটেই সাড়া মেলে।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৮
Share: Save:

চার দিন ধরে শুকনো মুড়িই ছিল সম্বল। এক জনের নয়, পাঁচটি পরিবারের। মোট কুড়ি জন সদস্যের সাত জনই তিন থেকে তেরো বছর বয়সি ছেলেমেয়ে। পরিবারের মহিলাদের এক জন আবার গত ডিসেম্বরেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মায়ের ভরসা যেখানে শুকনো মুড়ি, সেখানে চার মাসের শিশুর পেট ভরে কী ভাবে!

খিদে মেটাতে অগত্যা বন্ধু হল সোশ্যাল মিডিয়া। কাজের সূত্রে বিহার থেকে কলকাতায় আসা ওই শ্রমিক পরিবারগুলির একটির সদস্য রাহুল শর্মা টুইট করে নিজেদের দুর্দশার কথা জানান। এর পরেই শনিবার সকালে হাতে পেয়ে যান চাল, ডাল ও আলু। আপাতত কয়েক দিন এতে চলে গেলেও পরে কী হবে ওঁদের জানা নেই।

কয়েক বছর ধরে বাঁশদ্রোণী লাগোয়া রানিয়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে পাঁচটি শ্রমিক পরিবার। তাঁদের কেউ কাঠের মিস্ত্রি, তো কেউ মার্বেল পাথরের কারখানায় কাজ করেন। ভাগলপুর থেকে আসা ওই শ্রমিকদের সঙ্গেই থাকে পরিবার। করোনার আতঙ্কে কাজ বন্ধ হতেই দেশের বাড়িতে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আচমকা লকডাউন ঘোষণা হতেই আটকে পড়েন সবাই।

আরও পড়ুন: ‘দূরে বাড়ি হলে এখানেই থাকুন’, আর্জি আইডি-র

হাতের জমানো পুঁজি শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ২১ দিনের লকডাউনে। দ্বিতীয় দফার লকডাউনের শুরু থেকেই প্রায় অভুক্ত পরিবারগুলির ভরসা ছিল, যদি কেউ রেশন দেন তাদের। একটি সংস্থা থেকে এলাকার বেশ কিছু পরিবারকে সপ্তাহের রেশন দিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু রাহুল যখন বাকি পরিবারের ছেলেদের নিয়ে সেখানে পৌঁছন, তত ক্ষণে সব শেষ। শেষমেশ টুইটার আর ফেসবুকের সাহায্য নিয়ে জানালেন নিজেদের অবস্থার কথা।

বিহারের এক আরজেডি নেতা রাহুলের সেই পোস্টটি রিটুইট করেন এবং তাতে এ রাজ্যের সরকার, কলকাতা পুলিশ এবং বিহারের কয়েক জন আরজেডি নেতাকে ট্যাগ করেন। তাতেই সাড়া মেলে। রাহুল জানালেন, টুইট পড়ে এক নেতাই এ রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কথা জানান। এর পরেই শনিবার সকালে স্থানীয় পুলিশের তরফে প্রতিটি শ্রমিক পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, আলু এবং ৫০০ মুসুর ডাল দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: উপসর্গ মিলল ২ জনের, বাইপাসের ধারে ১৫ হাজার মানুষের বস্তি কোয়রান্টিনে

দাদা অমর, বৌদি এবং দুই ভাইপো-ভাইঝিকে নিয়ে সস্ত্রীক একটি ঘরে ভাড়া থাকেন রাহুল। তাঁদের মতোই আরও চারটি পরিবার পাশে থাকে। পাড়ার মুদির দোকানে টাকা না মেটানোয় জিনিস পেতে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু যেখানে কাজ করেন সেই ঠিকাদার? কোনও সাহায্য করেননি? রাহুল জানান, লকডাউন ঘোষণা হতেই মেদিনীপুরে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছেন ঠিকাদার। যাওয়ার আগে অবশ্য এক হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাতেই গত কয়েক দিন চলেছে। রাহুল বলেন, ‘‘স্থানীয় যাঁরা সাহায্য করেন, তাঁদের থেকে কিছু পাওয়ার আশা ছিল। কিন্তু সেখান থেকেও খালি হাতে ফেরার পরে আর উপায় ছিল না। মঙ্গল থেকে শুক্রবার মুড়ি খেয়েই থাকতে হয়।’’

খিদের জ্বালায় কাহিল হয়ে পড়ছিল বাচ্চাগুলো। এর পরেই টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজেদের দুর্দশার কথা জানান রাহুল। সেটা পড়েই পটনার এক আরজেডি নেতা ১৭ এপ্রিল কলকাতা পুলিশের ইস্ট ডিভিশনের টুইটারে তা জানান।

রানিয়া বারুইপুর পুলিশের অধীনে হওয়ায় ইস্ট ডিভিশন বিষয়টি বারুইপুর পুলিশকে জানায়। এতে তো চলে যাবে কয়েকটা দিন। তার পরে কী হবে? সেটাই ভাবাচ্ছে পরিবারগুলিকে।

পাশাপাশি চিন্তা আরও। বাইপাস সংলগ্ন পঞ্চান্নগ্রামে আটকে আছেন রাহুলের বৃদ্ধ বাবা উদয় শর্মা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাহুলের মা এবং দুই ভাইবোন। তাঁদেরও রসদ ফুরিয়ে এসেছে। কী ভাবে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছবে, সেটাই বুঝতে পারছে না সম্বলহীন পরিবারটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE