Advertisement
E-Paper

বর্ণনায় মন দিলেই মানস-ভ্রমণ

বারো-তেরোশো বছর আগে পহ্লব রাজাদের সময় আজকের চেন্নাই শহর থেকে মাত্র ষাট কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরের পাথুরে এলাকায় যে আশ্চর্য শিল্পকীর্তি সৃষ্টি হয়েছিল, আজ তা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। মহাবলীপুরমের পাথর-খোদাই শিল্পনিদর্শন ভারতের পশ্চিম কূলের গুহামন্দিরগুলির থেকে কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে সাহেবদের নজর পড়ে এখানে, আর ১৭৮৮ থেকেই পঞ্চপাণ্ডবের রথ নামে লোককথায় পরিচিত শিল্পকীর্তির আলোচনা চোখে পড়ে।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০১

বারো-তেরোশো বছর আগে পহ্লব রাজাদের সময় আজকের চেন্নাই শহর থেকে মাত্র ষাট কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরের পাথুরে এলাকায় যে আশ্চর্য শিল্পকীর্তি সৃষ্টি হয়েছিল, আজ তা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। মহাবলীপুরমের পাথর-খোদাই শিল্পনিদর্শন ভারতের পশ্চিম কূলের গুহামন্দিরগুলির থেকে কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে সাহেবদের নজর পড়ে এখানে, আর ১৭৮৮ থেকেই পঞ্চপাণ্ডবের রথ নামে লোককথায় পরিচিত শিল্পকীর্তির আলোচনা চোখে পড়ে। সওয়া দুশো বছরে বহু আলোচিত এই পুরাকীর্তি নিয়ে সামগ্রিক তথ্য একত্র করে চমৎকার বই লিখেছেন প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌম্যেন পাল: মহাবলীপুরম/ ইতিহাস ও ঐতিহ্য (সিগনেট প্রেস/ একটি আনন্দ প্রকাশনা, ৩০০.০০)। সুপরিচিত কীর্তির বাইরে ছোটবড় অন্যান্য নিদর্শনেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন ওঁরা। ওঁদের বর্ণনার সঙ্গে এগোতে এগোতে মানস-ভ্রমণ হয়ে যায়, আর বেড়াতে যেতে চাইলে এমন বই নিশ্চয়ই হাতে রাখতে হবে। অজস্র রঙিন ছবিতে স্পষ্ট হয় শিল্পবৈশিষ্ট্য, আছে বেশ কয়েকটি দুর্লভ ছবিও।

আঠেরো বছরে চার বার দেশের নানা প্রান্তে ভ্রমণের পর দুর্গাচরণ রক্ষিত তাঁর ভারত-প্রদক্ষিণ বইটি প্রকাশ করেন ১৩১০ বঙ্গাব্দে। শ্যামপদ মণ্ডলের সম্পাদনায় দুষ্প্রাপ্য বইটি নতুন করে প্রকাশ করল ‘বলাকা’ (৩০০.০০)। সফল ব্যাবসায়ী দুর্গাচরণের দেখার চোখটি খেয়াল করার মতো, যেখানেই বেড়াতে গেছেন প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার সংবাদ সংগ্রহ করেছেন, অনেক খুঁটিনাটি তথ্য সহজ ভাবে বর্ণনার অনুষঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। উনিশ শতকের শেষ পর্বের এই ভারত ভ্রমণবৃত্তান্ত আজও আমাদের আকৃষ্ট করে।
লোক প্রকাশন অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পুনর্মুদ্রণ করেছে। প্রতাপাদিত্যকে নিয়ে এখনও কোনও প্রামাণিক জীবনীগ্রন্থ লেখা হল না, গৌরবগাথা প্রচারের আড়ালে প্রকৃত ইতিহাস অনেক ক্ষেত্রেই চাপা পড়ে থাকে। ১৩০৩ বঙ্গাব্দে সত্যচরণ শাস্ত্রী লেখেন মহারাজ প্রতাপাদিত্য। ‘প্রতাপাদিত্যের লীলাভূমি দেখিতে এবং উপকরণ সংগ্রহ করিবার জন্য’ তিনি সুন্দরবনে গিয়েছিলেন। লোককথা, ঘটককারিকা ইত্যাদির তথ্যও তিনি ব্যবহার করেন। বাঙ্গালীর বল থেকে সংযোজন সহ এই বইটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে (লোক, ২০০.০০)। পারসিক গ্রন্থ তাজকিরাতুল আওলিয়া-র ভাবানুবাদ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র সেন, তাঁর তাপসমালা ৬ ভাগে প্রকাশিত হয় ১৮৮০-’৯৫-এর মধ্যে। ৯৬ জন মুসলমান সাধক-সাধিকার জীবনবৃত্তান্ত ও বাণীর এই সংকলন দীর্ঘ দিন অমুদ্রিত ছিল। এ বার তারই ১-২ ভাগ একত্রে প্রকাশিত হল (তাপসমালা ১ম খণ্ড। লোক, ২০০.০০)।
বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির গবেষণায় সারা জীবন কাটিয়েছেন তৃপ্তি ব্রহ্ম। তাঁর অনেক লেখাই এখনও অগ্রন্থিত। বাংলার ইসলামি ধর্ম ও সংস্কৃতি এবং লোকায়ত ইসলাম নিয়ে তাঁর বাংলার ইসলামি সংস্কৃতি বইটি (লোক, ২০০.০০) নতুন করে প্রকাশিত হল প্রায় তিন দশক পর। বিষয়টিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার জন্য সংযোজিত হয়েছে কয়েকজন পিরের বিস্তারিত পরিচয়, ‘সুন্দরবনে ইসলাম’ শীর্ষক এম আব্দুল কাদের-এর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ, এবং মুহম্মদ মজিরউদ্দিন-এর লেখা ‘বাংলায় মিশনারী তৎপরতা এবং ইসলাম ও মহম্মদ (১৮০২-১৮৯২)’। দুই দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পির ফকিরের মাজার-দরগায় ছোটবড় ইসলামি ‘উরুস’ পরব ও বার্ষিক স্মরণ মেলা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তৃপ্তি আলোচনা করেছেন নানা ইসলামি ধর্মসম্প্রদায়, পিরের মেলা ও ধর্মসংগীত নিয়ে।

যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত দুই খণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন কেশবচন্দ্র ও সেকালের সমাজ বইটি। দ্বিতীয় খণ্ডে ছিল কেশবচন্দ্র সেন সংক্রান্ত বিবিধ সংবাদ ও আলোচনা। আর শিবনাথ শাস্ত্রী ১৯১০-এর মাঘোৎসবে দুটি বক্তৃতা দেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন শীর্ষকে। এই দুটি বক্তৃতা ও যোগেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় খণ্ডটি একত্রে প্রকাশিত হল (লোক, ২৫০.০০)। প্রকাশক ‘এক মলাটে দুটি বই’ সিরিজ শুরু করলেন এই প্রয়োজনীয় সংকলনটি দিয়ে।

Book review Mahabalipuram history culture soumen pal prosenjit dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy