Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

দৃশ্যের জন্ম হয়

শেষে ‘সহ-পাঠ’ অংশে সম্পাদকের আলোচনা ভারতের চলচ্চিত্র চর্চা বিষয়ে। আর শুরুতেই এ-বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর প্রাসঙ্গিকতা খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন তরুণ মজুমদার গৌতম ঘোষ নবনীতা দেব সেন।

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সিনেমা/ ছায়ার মায়ার বিচিত্র রহস্য

নরেন্দ্র দেব/ সম্পা: দেবীপ্রসাদ ঘোষ

৫০০.০০

লালমাটি

দেশ তখন পরাধীন, পশ্চিমি অভিঘাতে সিনেমা এসে পৌঁছেছে আমাদের দরজায়, কিন্তু কারিগরি-প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি শিল্পমাধ্যমকে আত্মস্থ করা যথেষ্ট দুরূহ ছিল। অল্প যে ক’জন এগিয়ে এসে দায় তুলে নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র চর্চার, তাঁদের মধ্যে নরেন্দ্র দেব (১৮৮৮-১৯৭১) আজও শিরোধার্য এবং স্মৃতিধার্য। চিত্রনাট্য-বিষয়ক একটি প্রবন্ধে তিনি লিখছেন ‘‘আসল চিত্রনাট্য যা তা নাটক বা উপন্যাসের কাছ থেকে কোনো রকম ঋণ গ্রহণ করতে চায় না। তার লক্ষ্য হচ্ছে ছবিকেই ভাষার স্বরূপ করে নিলে আপনার নব নব বিচিত্র কল্পনা বিকাশ করে তোলা সম্ভব।’’ মুখ্যত সাহিত্যসাধক হওয়া সত্ত্বেও শিল্প-সংস্কৃতির অন্য মাধ্যমগুলিতেও যোগ দিয়েছিলেন স্বচ্ছন্দে, প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক ‘বায়োস্কোপ’-এর অন্যতম পরিচালক ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে এ-বইয়ের সম্পাদক দেবীপ্রসাদ ঘোষের মন্তব্য ‘‘নরেন্দ্র দেব সেই বাঁকের মানুষ, যাঁর হাতে ইতিহাসের জরুরী দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।’’ ১৯৩৪-এ প্রথম প্রকাশের চুরাশি বছর পর বইটির বর্তমান সংস্করণে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে লেখকের বেশ কিছু প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। শেষে ‘সহ-পাঠ’ অংশে সম্পাদকের আলোচনা ভারতের চলচ্চিত্র চর্চা বিষয়ে। আর শুরুতেই এ-বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর প্রাসঙ্গিকতা খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন তরুণ মজুমদার গৌতম ঘোষ নবনীতা দেব সেন।

আমার নাই বা হলো পারে যাওয়া

জ্যোতির্ময় দত্ত/ সম্পা: প্রভাতকুমার দাস

৩৫০.০০

অন্বয়

‘‘ধিক, জ্যোতি ধিক। পৃথিবীতে আছি আমি ২৬ বছর। এখনও হল না কোনও বিস্ফোরণ, আগুনের ঝড়।’’— ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় এই কবিতা যিনি লিখেছিলেন, সেই জ্যোতির্ময় দত্ত এখন ৮২ বছরে। কিন্তু কলমচি, ‘কলকাতা’ পত্রিকার স্রষ্টা, পালতোলা নৌকোয় বঙ্গোপসাগরে পাড়ি দেওয়া, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মরিচঝাঁপির চরে পৌঁছে যাওয়া, জরুরি অবস্থায় কারারুদ্ধ সাংবাদিক জ.দকে কি বয়সের হিসাবে আঁটানো যায়? এই বই তাই নিছক এক সাংবাদিকের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড নয়। বাঙালি কী ছিল, তার প্রত্নস্বাক্ষর। সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘‘স্টেটসম্যান ছাড়লেন কেন?’’ উত্তর এল, ‘‘দেয়ার প্রেফার্ড স্টাইল অব প্রোজ ওয়াজ সো বোরিং।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজে জ্যোতিদের সেই ব্যাচ। অমর্ত্য সেন, সুখময় চক্রবর্তী, বরুণ দে। এই বই পড়তে পড়তে যেন ক্রমাগত চোখের সামনে দৃশ্যের জন্ম হয়। কখনও কানে আসে দীপক মজুমদারের ব্যারিটোন স্বরে ‘‘ও চাঁদ, চোখের জলে লাগল জোয়ার’’, চোখের সামনে দেখা যায় ব্রড স্ট্রিটে ‘ফিরে এসো চাকা’র কবি বিনয় মজুমদারের মানসিক অসুস্থতা। ফিল্টারহীন চারমিনার সিগারেট আজ অলভ্য, কিন্তু এখনও যেন গল্‌ফ ক্লাব রোডে দন্তহীন মাড়িতে একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যান প্রয়াত হামদি বে। দেখা দিলেন চিনিকলের কর্মী, ডাকাবুকো ভোলানাথ দত্ত। আর এলেন বুদ্ধদেব বসু। জ্যোতি নিজেকে প্রচ্ছন্নে রেখে আসল কথাটা জানাননি। কন্যা মীনাক্ষীর সঙ্গে তাঁর বিয়েতে বুদ্ধদেব বসুর প্রধান আপত্তি ছিল দুই জায়গায়। এক, পাত্র বেকার। দুই, সে পাত্রীর থেকে বয়সে এক বছরের ছোট। কিন্তু সেই ঠান্ডা যুদ্ধের দিনেও বুদ্ধদেব জ্যোতির কবিতা ছাপছেন নিজের সম্পাদিত পত্রিকায়। আর কি কখনও বাংলা ভাষা পাবে এমন সাহিত্যমনস্ক সম্পাদক! ফেলে আসা সময়ের স্রোত আর মানুষগুলিকে ধরার জন্য তাই অচিরে এই আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড জরুরি।

শতবর্ষের সেরা সওগাত

সম্পা: সফিউন্নিসা

৫০০.০০

মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স

জাগো বঙ্গবাসী!/ দেখ, কে দুয়ারে/ অতি ধীরে ধীরে করে করাঘাত।/ ...কুসুম তুলিয়ে/ ডালা ভরে নিয়ে এসেছে ‘‘সওগাত’’।— অগ্রহায়ণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ, প্রথম সংখ্যাতেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কবিতা ছেপে চমকে দিয়েছিলেন বাংলার মুসলমান সমাজের প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা ‘সওগাত’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন। প্রায় একশো বছর আগে যখন বাঙালি মুসলমান সমাজের একটা বড় অংশ অশিক্ষা আর অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন নাসিরুদ্দীনের ‘সওগাত’ যে ব্যতিক্রমী একটি পত্রিকা, তা বলতে দ্বিধা করেননি বিশিষ্টরা। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘সওগাত নামটি চমৎকার। রুচিবোধ প্রশংসার যোগ্য।’’ প্রথম সংখ্যাতেই লিখেছিলেন জলধর সেন থেকে শুরু করে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানকুমারী বসু, কুমুদরঞ্জন মল্লিক প্রমুখ। দশকের পর দশক ধরে প্রকাশিত হওয়া ‘সওগাত’-এর পাতায় পাতায় ধরা রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। অখণ্ড ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পরাধীন দেশের বিচিত্র অধ্যায়। দেশভাগ, তার প্রাক্কালে উদ্ভূত পরিস্থিতি, স্বাধীন ভারতের সমাজচিত্র এবং খণ্ডিত হওয়া নতুন একটা দেশের সামাজিক অবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE