Advertisement
E-Paper

‘মেয়েদেরও মতামত আছে?’

তারা কৌশল মূলত সাংবাদিক। তাই গবেষণার একটা কাঠামো থাকলেও, তাঁর মূল কাজটি আখ্যানধর্মী।

স্বাতী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১ ০৫:২২

হোয়াই মেন রেপ: অ্যান ইন্ডিয়ান আন্ডারকভার ইনভেস্টিগেশন
তারা কৌশল
৩৯৯.০০
হার্পার কলিন্স

দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডের পর স্পষ্ট হয়েছিল, ধর্ষণকে বহু ভারতীয় পুরুষ ‘অপরাধ’ মনে করে না। অপরিচিত একটি মেয়েকে ক্ষতবিক্ষত করেও ধর্ষক স্বচ্ছন্দে ফিরে যায় অভ্যস্ত জীবনে, যেন কিছুই হয়নি। এই বইয়ে এক পুরুষ বলে, ধর্ষণ কী, তা সে জানে না। মেয়েরা ‘না’ বলা সত্ত্বেও যৌনসম্পর্ক করলে তা ধর্ষণ, তা শুনে পুরুষটির উত্তর, “মেয়েরা সব সময়ে হ্যাঁ-ই বলে।” এই লোকটির নামে একাধিক গণধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এমন ন’জন পুরুষের কথা রয়েছে এই বইতে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ লেখক পেয়েছেন নানা সূত্রে। নিজের পরিচয় গোপন করে, চলচ্চিত্র বানানোর প্রস্তুতির অছিলায় লেখক এদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। কথা বলেছেন আশেপাশের মানুষদের সঙ্গেও। শ্রেণি-ধর্ম-রাজ্য নির্বিশেষে কী ধরনের চিন্তার বশবর্তী ধর্ষণ-প্রবণ পুরুষেরা, তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।

তারা কৌশল মূলত সাংবাদিক। তাই গবেষণার একটা কাঠামো থাকলেও, তাঁর মূল কাজটি আখ্যানধর্মী। সমাজবিজ্ঞানের চোখে তাত্ত্বিক দিকটি দুর্বল লাগতে পারে, কিন্তু ধর্ষণকে ‘স্বাভাবিক’ মনে করার যে সূত্রগুলি উঠে আসে ধর্ষকদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন থেকে, গবেষকদের কাছে তা নিঃসন্দেহে মূল্যবান। ইতিপূর্বে আর এক গবেষক, মধুমিতা পান্ডে, একশো জন সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়ে এমনই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, মেয়েদের সম্মতির প্রশ্ন কোনও বিষয়েই ওঠে না, তাই যৌন সম্পর্কেও তার অপেক্ষা কেউ করে না। এমনকি রাষ্ট্রও বালিকা বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু বিবাহিত নাবালিকার সঙ্গে সঙ্গমকে ধর্ষণ বলতে রাজি নয়। ধর্ষণ আজও এক ধূসর এলাকা।

লেডি ড্রাইভার
সম্পা: জয়াবতী শ্রীবাস্তব
৩৫০.০০
ঋত প্রকাশন

পনেরো বছরে প্রেম, ষোলো বছরে বিয়ে। মামুদার মা ছ’হাজার টাকা আর নাকের ফুল দিতে পেরেছিল শুধু। সেই থেকে শ্বশুরবাড়িতে গঞ্জনার শুরু, কন্যা হওয়ার পর গায়ে হাত তুলল বর। মেয়ের বয়স যখন বারো, তখন মারধর, তালাবন্দি করে রাখা আর সইতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে ঘর ছাড়ল মামুদা। আয়া সেন্টারে নাম লেখানো, মায়ের চায়ের দোকানে হাত লাগানো। এ গল্প পরিচিত। মোড় ঘুরল এর পর। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেয়েদের গাড়ি চালাতে শেখায়, ড্রাইভারের কাজ দেয়, জেনে সেখানে নাম লেখাল মামুদা। সেই নির্যাতিত গৃহবধূ আজ ‘লেডি ড্রাইভার’। নিজের রোজগারে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছে সে, মেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছে।

ভারতের নানা শহরে এমন চোদ্দোটি মেয়ের পেশাদার গাড়িচালক হয়ে ওঠার কাহিনি নিয়ে এই বই। গাড়ি চালানোর ট্রেনিং নিতে এসে তারা শিখেছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কথা বলা, চলাফেরা, আয়-ব্যয়ের হিসেব আর সঞ্চয় করা, সবই। অনেকে মাতৃভাষা ছাড়াও এখন সড়গড় হয়ে উঠেছে হিন্দি, ইংরেজিতে। পুলিশ এবং আইনের সাহায্য নিতে শিখেছে। ড্রাইভিং মেয়েলি পেশা নয়, ট্রেনিং নিয়েও বেশ কিছু মেয়ে টিটকিরি আর হিংস্রতা সইতে না পেরে কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আবার মামুদার মতো অনেকে রয়েও গিয়েছে। তাদের কেউ আজ নিজে ট্যাক্সি কিনে ভাড়া খাটাতে চায়। কেউ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কারও বা স্বপ্ন, একটি মেয়েকে দত্তক নেবে। জীবনের স্টিয়ারিং এই মেয়েদের হাতে।­

book review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy