গান-রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে যত চর্চা, ততটা কি হয় গায়ক ও কণ্ঠশিল্পী রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে? এই প্রশ্নই বইটির মূল ভাবনা। পীতম সেনগুপ্ত তুলে ধরেছেন সেই রবীন্দ্রনাথকে, ভাল গায়কের পাশাপাশি যিনি তাঁর মতে আজকের ভাষায় এক অসামান্য ‘বাচিক-শিল্পী’ও। কলকাতার সভা-সমাবেশে ‘রবিবাবুর গান’ শোনানোর অনুরোধ-উপরোধ সততই আসত যুবা রবীন্দ্রনাথের কাছে, আবার তাঁর কণ্ঠে আবৃত্তি ও বক্তৃতাও শ্রোতারা শুনতেন মুগ্ধ বিস্ময়ে। এই সব কিছুই ধরা আছে সেকালের নানা বিশিষ্টজনের রচনায়, আর জোড়াসাঁকোর নিজস্ব বৃত্তের গায়ক রবীন্দ্রনাথের কথা তো ঠাকুরবাড়ির নানা সদস্যের স্মৃতিকথাতেও মেলে। নানা সময়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেও বলেছেন-লিখেছেন নিজের গান গাওয়া নিয়ে: কখনও তাতে মিশে আনন্দ, প্রচ্ছন্ন গর্ব, শেষের দিকে গলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুঃখও। একেবারে ছোটবেলায় তাঁর গান শেখার যে পর্ব, সেই সময় থেকে শুরু করে ব্রাহ্মসমাজের অনুষ্ঠানে, কলকাতা বা তার আশপাশে, বাংলা ও বাংলার বাইরে নানা জায়গায়, বিদেশের মাটিতেও গায়ক রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত তথ্য বুনে বুনে পূর্ণাঙ্গ একটি রচনার অবয়ব দিয়েছেন লেখক এ বইতে। অনেক তথ্যই হয়তো বা জানা, অনেক গল্পও পরিচিত, তবে দু’মলাটের মধ্যে এই সব ধরে দেওয়ার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতে হয়। এই খেদও জাগে মনে, সত্যিই অল্প যেটুকু রবীন্দ্রকণ্ঠ ধরা আছে রেকর্ডে, তার বাইরে রয়ে গেলেন না-পাওয়া এক বিরাট রবীন্দ্রনাথ!
কণ্ঠ-জাদুকর রবীন্দ্রনাথ
পীতম সেনগুপ্ত
৩৫০.০০
মায়া বুকস
বাংলা ভাষায় এক কালে শিশু-কিশোরপাঠ্য গল্প-উপন্যাস-রূপকথা-নাটক অর্থাৎ সাহিত্যই নয়, লেখা হত বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে বইও। সহজ ঝরঝরে ভাষায় লেখকেরা বুঝিয়ে দিতেন আর্কিমিদিস থেকে আইজ়াক নিউটন বা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন ও কৃতি, বিজ্ঞানে তাঁদের অবদান। সেই ধারাটিকে মনে করিয়ে দেয় এই বইটি। স্মার্ট পেপারব্যাক, আর্ট পেপারে ঝকঝকে ছাপা, পাতায় পাতায় সাদা-কালোর গায়ে রঙিন ছবি, ছোটদের হাতে পড়লে মনোযোগ কাড়তে বাধ্য। আর ‘গুণবিচারি’? বিজ্ঞানের জগৎটাও পুরুষতান্ত্রিক, কাজের ও কাজের বাইরের নানা বাধাবিপত্তি ঠেলে, মেধা ও মনের জোরে বহু নারী-বিজ্ঞানী অগণিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার উপহার দিয়েছেন পৃথিবীকে— তাঁদেরই সাত জনের জীবনকৃতি এখানে দু’মলাটে। মেরি কুরির কথা তবু তো বহুচর্চিত, কিন্তু আধুনিক বায়োকেমিস্ট্রির ভিত্তি গড়ে দেওয়া মড লেয়োনোরা মেনটেন, মহাকাশের রহস্য উন্মোচন করা জ্যোতির্বিজ্ঞানী সিসিলিয়া হেলেন পেন, উপন্যাস ও একাধিক চলচ্চিত্রের উপজীব্য হয়ে ওঠা গণিতজ্ঞা সোফিয়া কোভালেভস্কায়া, কুষ্ঠরোগ চিকিৎসার ওষুধ আবিষ্কারের অগ্রপথিক অ্যালিস অগাস্টা ব্যল-দের কত জন জানি? প্রতিটি লেখার শেষে লেখক যুক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট নারী-বিজ্ঞানীদের ‘টাইমলাইন’— আসলে জীবনপঞ্জি— রঙে রেখায় ছবিতে আকর্ষণীয়। ছোটদের বিজ্ঞানে আগ্রহ বাড়বে— এমন বই হাতে পেলে।
যত তারা তব আকাশে: বিজ্ঞান-বিশ্বে
নারী (পর্ব ১)
সিদ্ধার্থ মজুমদার
৩৪৯.০০
হ য ব র ল
সাহেবদের হাতে দার্জিলিং পত্তনের ইতিহাস নিয়ে বই আর লেখাপত্রের অভাব নেই, তবে তার সিংহভাগই হয় সাহেবদের বা সাহেবি ইংরেজিতে লেখা। বাংলায় সে কাল-এ কাল মিলিয়ে লেখালিখি যৎসামান্য, সেও অনেকটা স্মৃতিচিত্রণে মোড়া। হিমালয়ের অনুপম নিসর্গ আর একদা-সাহেবিয়ানার ঔপনিবেশিক খোয়ারি যেন ভাঙতেই চায় না, আর তারই আড়ালে থেকে যায় দার্জিলিং ও সংলগ্ন বিরাট অঞ্চলের প্রকৃত অধিবাসী যাঁরা, সেই জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষের কথা। রাজশাহী বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির সদস্য, সুপণ্ডিত গবেষক নলিনীকান্ত মজুমদার কিন্তু একশো বছর আগেই ভেবেছেন ও লিখে গেছেন এঁদের নিয়ে। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে প্রকাশিত সেই বাংলা বইটিই বেরোল একশো বছর পরে, নতুন করে। প্রথমাংশে শতাব্দীপ্রাচীন দার্জিলিং অঞ্চলের নানা জায়গার ভ্রমণ-ভূগোলের তথ্য, তার পরে লিখেছেন নেপালি খাস ছৈত্রী গোর্খা লেপচা তিব্বতি জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষের জীবন, উৎসব, বিবাহ, ধর্ম, খাওয়াদাওয়া, শবসৎকার-সহ নানা প্রথা ও রীতি নিয়ে। সম্পাদক দেবরাজ ভট্টাচার্যের শুরুর ধরতাইটুকু প্রয়োজনীয়, অল্প কথায় তিনি ধরিয়ে দিয়েছেন দার্জিলিং অঞ্চলে অধিবাসী ও অভিবাসী দুই মানুষেরই ইতিহাসসূত্রগুলি।
দার্জিলিংএর পার্বত্য জাতি
নলিনীকান্ত মজুমদার,
সম্পা: দেবরাজ ভট্টাচার্য
২৫০.০০
পত্রলেখা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)