Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

মনের গভীরে জমে থাকা ইচ্ছে, কল্পনা

এই ধরনের প্রতিভাবান শিল্পী, যাঁরা মোটামুটি যে-কোনও মাধ্যমে সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারেন, তাঁদের প্রায়ই একটা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। যেহেতু তাঁরা সব সময়েই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানা শিল্পের রাস্তায়, কোনও রাস্তাতেই প্রগাঢ় নৈপুণ্য তাঁদের ধরা দেয় না।

মুক্তি: অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত ‘দ্য ভার্স অব লাইন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

মুক্তি: অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত ‘দ্য ভার্স অব লাইন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে সুবিমলেন্দু বিকাশ সিংহের একক প্রদর্শনীর শিরোনাম, ‘দ্য ভার্স অব লাইন’— অর্থ রেখার ছন্দ, পদ্য এবং কবিতা। শিল্পীর বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। আমাদের মনের ছোট ছোট ইচ্ছে, কল্পনা যখন প্রকাশের পথ না পেয়ে মনের গভীরে তিল তিল করে পলিমাটির মতো জমতে থাকে, তখন সেই কঠিন পাথরকে মুক্তি দেওয়ার বা স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনার পথই হচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে ক্যাথারসিস্ বা আবেগস্ফুরণ। শিল্পী সুবিমলেন্দু এই ক্যাথারসিস পান তাঁর রেখাচিত্রের মাধ্যমে। তাঁর অভিজ্ঞতা সুবিস্তীর্ণ। জীবনে আড়াই হাজারেরও বেশি রেখাচিত্র তিনি এঁকেছেন। এ ছাড়া তিনি সব সময়েই নতুন কিছু করতে ইচ্ছুক। এই শিল্পী এনামেল বা কলাইয়ের বাসনের ওপর ছবি আঁকেন। দেওয়াল ইত্যাদির ভিজে প্লাস্টারের ওপরেও জলরঙে আঁকা, যার নাম ফ্রেস্কো বা দেওয়াল-চিত্র, সেই ছবি আঁকেন। ক্যানভাসে রেখাচিত্রের সঙ্গে রং ব্যবহার করেন এবং ভাস্কর্য সৃষ্টি করেন। তাঁর প্রতিভা বহুমুখী। শিল্পকে যেন তিনি নানা ভাবে, বিভিন্ন দিক থেকে, নানা ভাষায় অনুভব করতে চান। আরও দক্ষতা অর্জন করতে চান।

এই ধরনের প্রতিভাবান শিল্পী, যাঁরা মোটামুটি যে-কোনও মাধ্যমে সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারেন, তাঁদের প্রায়ই একটা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। যেহেতু তাঁরা সব সময়েই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানা শিল্পের রাস্তায়, কোনও রাস্তাতেই প্রগাঢ় নৈপুণ্য তাঁদের ধরা দেয় না। শিল্পী সুবিমলেন্দু যদি শুধুই তাঁর রেখাচিত্রে নিজেকে বেঁধে রাখতে পারতেন, তবে সেটা হয়তো তাঁকে সাফল্যের চরম শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারত।

শিল্পী সুবিমলেন্দুর বইগুলিতে চিত্রকলা সম্বন্ধে তাঁর গভীর বোধ ও জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর রেখাচিত্রে রেখার মধ্য থেকে প্রকাশ পায় কখনও একটি কুকুর, কখনও গাছগাছালি। প্রায়শই বেরিয়ে আসে নারীমূর্তির বিভিন্ন রূপ। কখনও সে স্নানরতা। কখনও সেই লাস্যময়ী চলেছে অজানা নাগরের সন্ধানে। রেখার ওপর তাঁর দক্ষতা লক্ষণীয় এবং তিনি সূক্ষ্মতা থেকে কঠিন এবং তার পর কঠিনতম রেখায় সুন্দর সাবলীল একটি ভঙ্গিমা সৃষ্টি করে তবেই নিজেকে প্রকাশ করেন। এই কাজগুলো বেশ মনোরম। রেখাচিত্রগুলো শিল্পীর কলমের বা তুলির ছোঁয়ায় যেন প্রাণবন্ত, জীবন্ত হয়ে ওঠে। সেগুলো যেন এক-একটি কবিতা।

শমিতা বসু

মাতিয়ে দিল শিশুরাই

জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়

একদল শিশুশিল্পী মন মাতিয়ে দিল বড়দেরও। শিশির মঞ্চে ‘ছন্দক’ নৃত্য প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। শিশুশিল্পীরা লোকনৃত্যের আঙ্গিকে ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ বা ‘যা যা বেহায়া পাখি’ গান দুটির সঙ্গে নৃত্যের তালে-তালে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। এরাই যখন ‘ঠাকুর জামাই এল বাড়িতে’ বা ‘বম বম বোলে’ গানের সঙ্গে নাচল, তখন তাদের নৃত্যজ্ঞান ও পারদর্শিতায় অবাক হতে হয়। ছোটদের একটি নৃত্য ‘শ্রীকৃষ্ণের মাখন চোরি’-তে কৃষ্ণবেশী স্নেহা চক্রবর্ত়ী তার নৃত্য প্রদর্শনে যেন দর্শকদেরও মন চুরি করে। ছোট্ট ‘ক্লাউন’-এর বেশে মাধুর্যর নৃত্য চোখ এড়ায়নি।

এ দিন কিশোরী শিল্পীদের কত্থক, ওড়িশি ও লোকনৃত্যের আঙ্গিকে পরিবেশিত নৃত্যগুলিও মন্দ নয়। তানিশা মাল, সুমনা মুখোপাধ্যায়, অঙ্কিতা নস্কর প্রশংসা পাবেন। রবীন্দ্রনৃত্যের পরিবেশনায় শিশু ও কিশোরী শিল্পীদের কোনও কোনও নৃত্যে দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট।

আবিরা সিংহের আবৃত্তি ছিল শ্রুতিমধুর। এ দিনের অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন সুমনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজেও নৃত্যশিল্পী। তাঁর বেশ কয়েকটি উপস্থাপনা দর্শকমনে দাগ কেটেছে।

তবুও মনে থাকে

কাশীনাথ রায়

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত হল সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ-সন্ধ্যা। শুরুতেই ছিল পূরবী শিল্পী সংস্থা ও রবি-অঙ্গনের সমবেত সঙ্গীত। গানগুলি সুগীত। অনুষ্ঠানে একক যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করলেন অরুণাভ চট্টোপাধ্যায় (সেতার) ও শিশুশিল্পী মেঘ সেন (কি-বোর্ড)। গানের অনুষ্ঠানের শিল্পীরা ছিলেন দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপরেখা চট্টোপাধ্যায় ও রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমার্ধে গানের ফাঁকে শব্দ প্রক্ষেপণ যন্ত্রের অসহযোগিতা বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল। তবুও শ্রীরাধার ‘এমন দিনে’ ও অগ্নিভর গান ‘তিমির অবগুন্ঠনে’ শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন দেবাশিস বসু।

শুনছ ভানুসিংহ

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে মঞ্চস্থ হল ভানুসিংহের পদাবলি অবলম্বনে নৃত্যালেখ্য ‘শুনছ ভানুসিংহ’। পরিচালনায় থাঙ্কমণি কুট্টি। অংশগ্রহণে ছিলেন তাঁর ছাত্রীরা। এ দিন রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে পরিবেশিত হয় ভরতনাট্যম। থাঙ্কমণি এই প্রথম ভরতনাট্যম নৃত্যের শৈলীতে এই পরিকল্পনা করেছেন। অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন সোমনাথ জি কুট্টি। রচনা শুভদীপ চক্রবর্তীর। নৃত্য পরিবেশনে ছিলেন ঝিনুক, মৌমিতা, সেঁজুতি, তানিয়া, ইলিনা, মৌমিতা, মহুল, জয়িতা, বামালি, সুজা, তৃষ্ণা, অঙ্কিতা, শ্রেয়শী, অর্পিতা প্রমুখ। শ্রোতারা উচ্ছ্বসিত প্রংশসা করেন।

অনুষ্ঠান

সম্প্রতি বেহালা শরৎ সদনে ‘আজীব দাস্তান’ নাটকটি প্রযোজনা করেছিল কলকাতা বহুমুখী। দেবদাস ঘোষের নির্দেশনায় অভিনয় করেছেন রূপঙ্কর, অনসূয়া, চৈতালি, সঞ্জীব, বিপ্লব, মধুমিতা, চন্দ্রাণী প্রমুখ। আলো মনোজ প্রসাদের, আবহ দিশারী চক্রবর্ত়ীর। মঞ্চসজ্জায় সন্দীপ ভট্টাচার্য।

অক্ষৌহিনী নাট্য সংস্থার দ্বাদশতম প্রযোজনা ‘মান-হুঁশ’ নাটকটি সম্প্রতি প্রদর্শিত হল গিরিশমঞ্চে। এই প্রযোজনা একটি সঙ্গীতমুখর, কৌতুকময় ও বিজ্ঞানধর্মী নাটক। নাটকটিতে বেশ নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। কলাকুশলী মোট একুশ জন। নাটক, নির্দেশনা ও অভিনয়ে সঞ্জীব নস্কর।

বাংলা অ্যাকাডেমিতে ‘অমিতশ্রুতি’ আয়োজন করেছিল একটি সুন্দর আবৃত্তি-সন্ধ্যা। যার শিরোনাম ছিল ‘দোঁহারে দেখেছি দোঁহে’। এ দিন অনুষ্ঠানের মূল শিল্পী ছিলেন মমতা মুন্সি ও দেবাংশু মুন্সি। অনুষ্ঠানটি নিবেদিত হয় চারটি পর্যায়ে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের

‘দূরের পাল্লা’ কবিতার নির্বাচিত অংশের যৌথ নিবেদনে মমতা ও দেবাংশু শ্রোতাদের নজর কাড়েন এবং যথেষ্ট প্রশংসিত হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE