খাওয়া-দাওয়া করুন সামলে। ছবি সাটারস্টক
কাঁসার থালার চারপাশে সাজানো হরেক রকম ব্যঞ্জন। যত্নে বোনা নরম আসনে জামাই বাবাজীবনেরা বসে আয়েস করে তারিয়ে তারিয়ে রসাস্বাদন করতেন শাশুড়িমা-সহ আপনজনেদের রান্না অসাধারণ সব পদ। ধরন বদলে গেলেও সেই ট্র্যাডিশন বজায় আছে আজও। আজকের অনেক আধুনিক শাশুড়িমা সপরিবার সন-ইন-ল’কে নিয়ে সপরিবার ভূরিভোজ সারেন নামীদামি রেস্তরাঁয়। বাড়িতে পঞ্চব্যঞ্জন রান্নার ব্যাপারেও কম যান না অনেকেই। কারও পছন্দ বাঙালি খানা, কারও বা চিনে অথবা জাপানি। যে খাবারই পরিবেশন করুন বা খান না কেন, বুঝে না খেলেই সুস্থ শরীর ব্যস্ত হবে।
ওজন বুঝে ভোজন করুন
একটা পুরনো প্রবাদ আছে, ‘জামাইয়ের জন্যে মারে হাঁস, বাড়ি শুদ্ধ খায় মাস’। আগেকার দিনের যৌথ পরিবারে জামাইকে উপলক্ষ্য করে বাড়িতেই এলাহি আয়োজন করা হত। কিন্তু সকলেই তার ভাগ পেত। আজও তা ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল না রাখলে আনন্দের অনুষ্ঠান নিরানন্দে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একসঙ্গে অনেকটা না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খেলে বদহজমের ভয় থাকে না। জামাই হোক বা শ্বশুর অথবা পরিবারের অন্যরা, খিদে না পেলে খাবেন না। আর খাবার খাওয়ানোর জন্য জোর জবরদস্তি করবেন না। ইলিশ, চিংড়ি সমেত আরও মাছ, সঙ্গে মটন— নানা ধরনের গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খেলে বদহজমের ঝুঁকি থাকে। শরীরে অস্বস্তি হয়, পরের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় থাকে। শুধু জামাই-ই নয়, বাড়ির সবাই এর জন্যেই এই পরামর্শ।
রেড মিট এড়িয়ে চলুন। ছবি: সাটারস্টক
যে সব খাবার বর্জনীয়
অল্পস্বল্প সব খাবারই খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বেশি তেলে রান্নার গ্রেভি খেলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির আশঙ্কা থাকে। ডুবো তেলে ভাজা এক পিস খেতে পারেন। বেশি হলেই সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফিশ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই একটার বেশি একেবারেই নয়। নিরামিষ ভাজা, অর্থাৎ কুমড়োফুল বা বক ফুলের বড়া অথবা পটল ভাজাও যে খুব উপকারি তা কিন্তু নয়। জিব ভালোবাসলেও পরিপাকতন্ত্র খুব অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নিরামিষ আমিষ মিলিয়ে অল্প পরিমাণে খেলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। ফ্রায়েড রাইস বা লুচির পরিবর্তে সাদা ভাত ভাল। সবক’টি গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খেতে হলে পরিমাণে অল্প খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বোতলবন্দি কোলা জাতীয় পানীয়ের পরিবর্তে লেবুর শরবৎ অনেক বেশি ভাল। কোল্ড ড্রিঙ্কসে এক দিকে বাড়তি ক্যালোরি, অন্য দিকে ব্লাড সুগার বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
ঘণ্টাখানেক পর জল খেয়ে অ্যাসিডিটি এড়ান
খেতে বসে জলপান বেশির ভাগ মানুষের অভ্যেস। ভরপেট খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে জলপান করা উচিত। নইলে অ্যাসিডিটি ও হজমের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার ওভার ইটিং-এর পর বাড়তি জলপানে বমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুকনো খাবার গলায় আটকে গেলে এক ঢোক জল চলতে পারে। কিন্তু ঢকঢক করে একগাদা জল খেলে হজমের সমস্যার ঝুঁকি থাকে। ভরপেট খেয়ে অসুবিধে হতে পারে মনে হলে কোল্ড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে দু’চামচ অ্যান্টাসিড খেতে পারেন। প্রয়োজন মনে করলে সকালে চা খাওয়ার পর প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ৪০ মিলিগ্রাম খেয়ে নিতে পারেন। দরকার হলে রাত্তিরেও একটা ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।
সঙ্গে থাকুক দরকারি ওষুধ। ছবি: সাটারস্টক
সিগারেট ও অ্যালকোহল বাদ
ধুমপায়ীদের অনবরত বলা সত্ত্বেও তাঁরা নেশা ছাড়তে পারেন না। জামাই ষষ্ঠীর দিন শাশুড়ি মায়ের অনারে ধূমপান থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। ভূরিভোজের সঙ্গে নিকোটিন সমেত একগাদা রাসায়নিকের প্রভাবে শারীরিক অসুবিধের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বাড়তি প্রোটিন হজমে সমস্যা হতে পারে। জামাইষষ্ঠীর দিন মদ্যপান খুব কমন না হলেও অনেক অত্যাধুনিক জামাই চাইতেই পারেন। এতে কিন্তু বিপদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।
সুগার আর লিপিডের সমস্যা থাকলে বুঝে খান
আপাতসুস্থ অল্প বয়সী জামাই বাবাজীবনদের সঙ্গে মাঝবয়সী জামাইরাও উৎসব পালন করেন। এঁদের অনেকেই কালের নিয়মে হাইপ্রেশার, সুগার বা রক্তে বাড়তি লিপিড নিয়ে বিব্রত। অনেকের আবার ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা। “খেয়ে নাও, একদিন বৈ তো নয়,” এই কথা মানতে গেলে বিপদে পড়ার ঝুঁকি অনেক। আনন্দ উৎসবের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে অন্যদের বিব্রত করবেন না। শরীর বুঝে খাবার খান। আর রেস্তরাঁয় খেতে গেলে অনেক সময় চাইনিজ খাবারে থাকা আজিনামটো থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। চাইনিজ ফুড সিনড্রোম এড়াতে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। রেস্তরাঁয় অনুরোধ করুন আজিনামাটো বাদ দিয়ে রান্না করার। জামাই ষষ্ঠীর আনন্দে মাতুন, কিন্তু সাবধান হতে ভুলবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy