অরুণকুমার দাস
কাগজটি পঁচিশ বছর ধরে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তিনি। তাতে লেখা, ‘জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে গত ২১ জুলাই যে ভাবে আপনারা সংগ্রাম করেছেন, সে জন্য আপনাদের কাছে আমি অপূরণীয় ঋণে ঋণী হয়ে রইলাম।’ কাগজটির উপরে লেখা, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রদেশ যুব কংগ্রেস।’ তলায় প্রেরকের স্বাক্ষর— ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
অতি সাবধানে সেই ঝাপসা হয়ে আসা কাগজটিকে বের করে মুখের সামনে মেলে ধরলেন বছর সত্তরের অরুণকুমার দাস। হাবড়া কামারথুবার বাসিন্দা অরুণবাবু বলেন, ‘‘কেউ মনে রাখেনি। একুশে জুলাইয়ের সভায় কোনওবার ডাকও পাইনি।’’
একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এখন আর ঠিকমতো হাঁটতে-চলতে পারেন না। শুক্রবার সকালে নিজের ঘরে বসে বৃদ্ধ সে দিনের কথা বলছিলেন। জানালেন, ওই সময়ে কংগ্রেস করতেন। তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর প্রিয়। তাঁর ডাকেই সাড়া দিয়ে সে দিন মহাকরণ অভিযানে গিয়েছিলেন। হাবড়া থেকে গিয়েছিলেন ট্রেনে।
‘‘গোলমাল কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম লোকজনের ছোটাছুটি দেখে’’— বললেন অরুণবাবু। ‘‘আচমকাই গুলি চলতে শুরু। একটা গুলি পা ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যেই পুলিশের বন্দুকের বাট এসে পড়ল আমার মাথায়। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিলাম। পরে কারা যেন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’ এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর ছেলে অনুপ বলেন, ‘‘হাসপাতালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন বাবাকে দেখতে। তিনি বাবার মাথার ব্যান্ডেজ খুলে আঘাতের জায়গাটা দেখেছিলেন। পরে বাবাকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল।’’
নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরার পরে মমতার কাছ থেকে চিঠিটা পেয়েছিলেন তিনি। সেই স্মৃতিটুকু আঁকড়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘তখন খুব ভাল লেগেছিল।’’ এর পরে ফের সেই অভিমানী সুর— ‘‘সরকারে আসার পরে আমাকে একাবারও কেউ একুশে জুলাইয়ের সভায় ডাকল না।’’ সান্ত্বনা দেন ছেলে অনুপ। বলেন, ‘‘তুমি সুস্থ থাক। পুরনো কথা বার বার মনে করে কষ্ট পেয়ো না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy