Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাত খিলানের চণ্ডীমণ্ডপে পুজো পান মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা

এ তল্লাটে মুখোপাধ্যায় বাড়ির নামডাক বহুদিনের। দুর্গাপুজো হতো খুব ধুমধাম করে। সাত খিলানের চণ্ডীমণ্ডপ। হ্যাজাক, ডে-নাইট আর গ্যাসের নরম আলোর আবহে হালুইকরের হাতের পাক দেওয়া খাবারের গন্ধে ম-ম করত গোটা বাড়িটা।

নাটমন্দিরে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।-নিজস্ব চিত্র।

নাটমন্দিরে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।-নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
জনাই শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

এ তল্লাটে মুখোপাধ্যায় বাড়ির নামডাক বহুদিনের। দুর্গাপুজো হতো খুব ধুমধাম করে। সাত খিলানের চণ্ডীমণ্ডপ। হ্যাজাক, ডে-নাইট আর গ্যাসের নরম আলোর আবহে হালুইকরের হাতের পাক দেওয়া খাবারের গন্ধে ম-ম করত গোটা বাড়িটা। চারদিন ধরে গ্রামবাসী আর অতিথি-অভ্যাগতের ভিড়ে গমগম করত চারদিক।

কালের নিয়মে সেই জৌলুসে ভাটা পড়েছে। তবে বংশ পরম্পরায় আজও অবশ্য পুজো হয়ে আসছে নিয়ম করে। দুর্গার আবাহনে এখনও সেজে ওঠে জনাইয়ের মুখোপাধ্যায় পরিবারের চণ্ডীমণ্ডপ। এ বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে চালু রয়েছে নানা কাহিনী। যার বভত্তিটাই গড়ে উঠেছে অনেকটাই স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আড়াইশো বছর আগে পূর্বপুরুষ কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পুজোর প্রচলন করেন। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। পরোপোকারী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। শ্রীরামপুরের চাতরায় কালীবাবুর শ্মশানঘাটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। পরিবারের উত্তরসূরী পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সলিসিটর। সংস্কৃতি জগতে তাঁর বিচরণ ছিল সর্বজনবিদিত। জনাইতে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় নাট্যচর্চা হত। চণ্ডীতলা থেকে জনাই যাওয়ার রাস্তাও তৈরি হয়েছে এই পরিবারের উদ্যোগে।

কথিত আছে, যেখানে চণ্ডীমণ্ডপটি তৈরি হয়, সেখানে বহুকাল আগে শ্মশান ছিল। দেবী অধিষ্ঠিতা পঞ্চমুণ্ডীর আসনে। একচালার প্রতিমা। ডাকের সাজ। বংশানুক্রমিক ভাবে একই পরিবারের লোকেরা ঠাকুর গড়ার দায়িত্ব পেয়ে আসছেন। অতীতে বিশাল পাত্রে নৈবেদ্য দেওয়া হত দেবীকে। ছিল ছাগবলির রেওয়াজ। কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। পুজো হয় বৈষ্ণবমতে। মাকে নিবেদন করা হয় নিরামিষ ভোগ। একদা আড়ম্বরের পুজো এখন অনেকটাই ফিকে। পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজের সূত্রে জনাইছাড়া। বাড়ির রংচটা, পলেস্তারা খসা দেওয়াল যেন তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। নাচঘরে ধুলো জমেছে বাদ্যযন্ত্রের উপরে। তবু বাতাসে আগমনীর সুর উঠলেই নড়ে চড়ে বসে মুখোপাধ্যায় পরিবার। জীর্ণ চণ্ডীমণ্ডপে রঙের পোঁচ পড়ে। পরিবারের সদস্যরা জানান, আড়ম্বর কমেছে। কিন্তু পুজোর নিষ্ঠায় তা কোনও প্রভাব ফেলেনি। যে প্রথা ও নিয়ম মেনে পুজো হতো , আজও তা পালন হয়ে আসছে।

পরিবারের বর্তমান সদস্য শিবপদ মুখোপাধ্যায় কলকাতার বাসিন্দা। ষাটোর্ধ্ব মানুষটি স্মৃতিচারণ করলেন, ‘‘দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এক সময় বাড়িতে হুলুস্থূল পড়ে যেত। অনেক পাত পড়ত বাড়িতে। সকলের খাওয়া শেষ হলে তবে বাড়ির লোক খেতে বসতেন। আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানাতে থাকত জনাইয়ের সুস্বাদু মনোহরা।

বিসর্জনেও বৈশিষ্ট্য ছিল এই পুজোয়। বিসর্জনের আগে লাঠি খেলা হত। আনা হতো পাকা লাঠিয়াল। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সরস্বতী নদী। বাড়ির পিছনে সরস্বতী নদীর ঘাট। কাঁধে চাপিয়ে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE