Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিশ্রুতি পূরণের অপেক্ষায় চরমেঘনা

সন্ধ্যার পরে সীমান্তের গেট বন্ধ হলেই নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে কাটাতে হয় চরমেঘনার বাসিন্দাদের।

সন্ধ্যার পরে সীমান্তের গেট বন্ধ হলেই নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে কাটাতে হয় চরমেঘনার বাসিন্দাদের।

সন্ধ্যার পরে সীমান্তের গেট বন্ধ হলেই নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে কাটাতে হয় চরমেঘনার বাসিন্দাদের।

কল্লোল প্রামাণিক
চরমেঘনা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

ভোট আসে, ভোট যায়। বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীদের দেওয়া হাজারো প্রতিশ্রুতির পরেও সমস্যার মধ্যেই থাকতে হয় হোগলবেড়িয়ার চরমেঘনার মানুষদের।

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এই জনবসতি। সন্ধ্যার পরে সীমান্তের গেট বন্ধ হলেই নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে কাটাতে হয় চরমেঘনার বাসিন্দাদের। লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার পরে তাঁদের প্রশ্ন, তাঁরা কবে সীমান্তের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

গ্রামের বাসিন্দা শুভেন্দু বিশ্বাস জানান, দুই বাংলা ভাগ হওয়ার সময় বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার প্রায় ২০০ একর জমি মাথাভাঙা নদীর পশ্চিম দিকে ভারতের দিকে পড়ে যায়। এখন যেটা চরমেঘনা গ্রাম। অপর দিকে, ভারতের প্রায় ৩০০ একর জমি মাথাভাঙার পূর্ব দিকে রয়ে গিয়েছিল, বর্তমানে যেটা বাংলাদেশের জামালপুর বলে পরিচিত। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলেও সেই তালিকায় চরমেঘনার নাম ছিল না। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দেওয়া চিঠি এনে এলাকার সাংসদ জানিয়ে দেন, ৩১ জুলাই রাত থেকে এই গ্রামকেও ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। গ্রাম যখন ভারতের মধ্যেই, তখন গ্রামের মানুষের দাবি, কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে গ্রামকে ঢোকানো হোক। তার পরে আড়াই বছর কেটে গেলেও সেই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। এখনও গ্রামের সবাইকে ভোটের পরিচয়পত্র বিএসএফের কাছে জমা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এলাকাবাসীর বক্তব্য, সীমান্তের এই সমস্যার সমাধান তো গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বা বিধায়ক করবেন না। দিল্লিতে দরবার করে এলাকার সাংসদকেই এটা করতে হবে। সেই কারণে অন্য নির্বাচনের থেকে সাংসদ নির্বাচন চরমেঘনার মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ ওই এলাকার ফাল্গুনী মাহাত বলেন, “প্রায় আড়াইশো পরিবারই তফসিলি জাতি ও জনজাতির। অথচ বেশির ভাগ মানুষের তফসিলি উপজাতির সার্টিফিকেট নেই। বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও তা পাওয়া যায়নি।’’ তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে চাকরির ক্ষেত্রে ওই সার্টিফিকেট খুব প্রয়োজন। আর তা না পাওয়ার কারণে অনেকে পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। বছর দশেক আগেও গ্রামে রাস্তা, বিদ্যুৎ— কিছুই ছিল না।

২০১১ সালে গ্রামে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে। বছর দুয়েক আগে গ্রামে যাওয়ার রাস্তাও পাকা হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের গেট পেরনোর সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ভোটের প্রচারে এসে সব দলের প্রার্থীরা কথা দিলেও ভোট পেরিয়ে গেলে গ্রামে কারও পা পড়ে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকার বিদায়ী সাংসদ সিপিএমের বদরুদ্দোজা খান বলেন, “চরমেঘনার বিষয়ে দিল্লিতে বার বার জানানোর পরে দু’দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করতে নতুন করে পিলার তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে সুযোগ পেলে বেড়া দেওয়ার কাজ করা হবে।”

মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করার ফলে সীমান্তের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। সে দিক দিয়ে আগের থেকে ভাল আছেন চরমেঘনার মানুষ।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, সীমানা নির্ধারণ করে ওই গ্রামের বাইরে দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা দলীয় ভাবে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতর ও বিদেশ দফতরে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE