Advertisement
E-Paper

ঘুমের মধ্যেই ভাইয়ের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিল নেশাড়ু দাদা!

পুলিশ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনজামাম ও রোহন দুজনেই নিষিদ্ধ মাদক নিতেন নিয়মিত। দাদা ওয়াসিম তাঁদের একটি দোকান করে দিয়েছিলেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য। একটি টোটোও কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু নেশার তোড়ে কোনও কিছুই টেকেনি।

তণ্ময় দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০১:১১
হত্যাকাণ্ড: খুনে ব্যবহৃত হাঁসুয়া খুঁজতে অভিযুক্তকে নিয়ে তল্লাশি পুলিশের। (ইনসেট) নিহত রোহন বাসীর। শনিবার নলহাটিতে। নিজস্ব চিত্র

হত্যাকাণ্ড: খুনে ব্যবহৃত হাঁসুয়া খুঁজতে অভিযুক্তকে নিয়ে তল্লাশি পুলিশের। (ইনসেট) নিহত রোহন বাসীর। শনিবার নলহাটিতে। নিজস্ব চিত্র

নেশাগ্রস্ত দাদার হাতে খুন হতে হল ভাইকে। শনিবার নলহাটি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডল পাড়ার এই ঘটনা ফের সামনে আনল এলাকায় নিষিদ্ধ মাদকের রমরমা কারবারের ছবিটা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম রোহন বাসীর (১৯)। বাধা দিতে গিয়ে জখম হন নিহতের আরেক দাদা ওয়াসিম বাসীর। সারাদিন চোর পুলিশ খেলার মতো ছুটোছুটির পরে অভিযুক্ত ইনজামাম বাসীর আত্মসমর্পণ করেছেন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত হাঁসুয়াটি। পুলিশ নিহতের দেহটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়।

পুলিশ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনজামাম ও রোহন দুজনেই নিষিদ্ধ মাদক নিতেন নিয়মিত। দাদা ওয়াসিম তাঁদের একটি দোকান করে দিয়েছিলেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য। একটি টোটোও কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু নেশার তোড়ে কোনও কিছুই টেকেনি। শুক্রবার রাতে একই ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন ইনজামাম ও রোহন। শনিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ওয়াসিমের আর্তনাদ শুনে ছুটে যান প্রতিবেশীরা। স্থানীয়েরা জানান, ওয়াসিম রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছিলেন। আর তাঁর মা মাধুরী বিবি চিৎকার করছিলেন। ঘরের মধ্যে বিছানায় ধড় থেকে মাথা ছিন্ন অবস্থায় রোহনের দেহ পড়েছিল। প্রতিবেশীরাই ওয়াসিমকে নলহাটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। তদন্তকারীরা জানান, পরিবারের সকলকে খুন করার চেষ্টা করেছিলেন অভিযুক্ত। ঘরে রাখা হাঁসুয়ার কোপে ভাইয়ের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন তিনি। কেটে ফেলেছিলেন ভাইয়ের হাত। বাধা দিতে গেলে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন দাদাকে। এরপর মাধুরী বিবির ঘরের দরজাও ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। চিৎকার চেঁচামেচিতে দোতলা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান তিনি। মাধুরী বিবির আরেক ছেলে বছর চারেক আগে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইনজামাম ও রোহন দুজনেই নিষিদ্ধ মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। প্রায়ই অশান্তি হতো তাঁদের পরিবারে। প্রতিবেশীরা বাধা দিলেও লাভ হয়নি। ওয়াসিম সরকারী কর্মচারী। দুই ভাই নেশার জন্য দাদার কাছে নিয়মিত টাকা চাইতেন। দাদার খুলে দেওয়া দোকানের সব মালপত্র বিক্রি করে দুই ভাই নেশা করেন কিছুদিন। এরপরে টাকা ফুরিয়ে গেলে আবার অশান্তি বাধে। তখন ওয়াসিম দুই ভাইকে একটি টোটো কিনে দেন। কিন্তু তাতে নেশা কমেনি। পুলিশ জানিয়েছে, দিনভর তল্লাশির পরে ইনজামাম থানায় আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি খুনে ঘটনা স্বীকার করেন এবং পুরো ঘটনাটির বর্ণনা দেন বলেও জানিয়েন জেলা পুলিশের এক কর্তা। পুলিশ প্ৰথমে তাঁকে নলহাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়ির কাছে কবরস্থানে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যান ইনজামাম। কবরস্থানের বাঁশঝাড় থেকে হাঁসুয়া ও একটি গামছা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: সম্পত্তির লোভে জীবিত মামীকে ২০ বছরের ‘মৃত’ বানিয়ে ফেলল ভাগ্নী !

এই বাড়িতেই দাদার সঙ্গে থাকতেন নিহত তরুণ। শনিবার নলহাটিতে। নিজস্ব চিত্র

মাধুরী বিবি বলেন, ‘‘নিজের ভাইকে ইনজামাম এরকমভাবে মেরে ফেলবে ভাবতে পারছি না। আমার ঘরের দরজায় ও লাথি মারছিল আমাকে খুনের জন্য এতটাও ভাবিনি। টাকার জন্য প্রায়ই মারত আমায়। ভেবেছিলাম সেই জন্যই ভোরে আমার দরজায় লাথি মারছে। ভয়ে দরজা খুলিনি। দরজা খুললে ছেলেটা আমাকেও মেরে ফেলতো!’’

Murder Crime Death Drug Addiction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy