Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

বিশ্বাস বনাম বিজ্ঞান: একটি ইতিহাস

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

বিশ্বাস বনাম বিজ্ঞান: একটি ইতিহাস

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় (‘বুনিয়াদি শিক্ষার আশ্চর্য মডেল’, ৩-৮) লিখেছেন, ‘সেই উনিশ শতকের মহাপণ্ডিতরা কেউ কেউ সনাতন ভারতের সর্বজ্ঞ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কতই না দাবি করেছেন।’ এ প্রসঙ্গে বলতেই হয় যে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠজন হলেন স্বনামধন্য বাগ্মী শশধর তর্কচূড়ামণি (১৮৫০-১৯২৮)। ফরিদপুরের সুসন্তান হলেও উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বহরমপুরের জুবিলি টোলে শিক্ষকতা ও পরবর্তীতে প্রয়াণসূত্রে এই শহরের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোত জড়িয়ে রয়েছেন। যাঁর সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘আমি দ্বিতীয় বার চাঁদ দেখলাম। ...দিন দিন বৃদ্ধি পাবে’। সেই বৃদ্ধি এমনই হয়েছিল যে জনসাধারণের পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর বচনমুগ্ধ হয়েছিলেন। কলকাতায় সাহিত্যসম্রাটের বাড়িতে অনুষ্ঠিত রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় সাহিত্য বৈঠকে তিনি ধর্মালোচনার প্রসার করতে পেরেছিলেন। ১৮৮৪ সালের মে মাসে অ্যালবার্ট হল-সহ কলকাতার নানা স্থানে আয়োজিত তাঁর বক্তৃতামালার প্রথম দিনে বঙ্কিমই সভাপতিত্ব পূর্বক সর্বসমক্ষে চূড়ামণির আনুষ্ঠানিক পরিচয়দান করেছিলেন। এখানেই শেষ নয়, তাঁর ভাষণ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথকে উদ্বুদ্ধ করে বঙ্কিম বলেছিলেন, ‘শুনিবেন, তাহাতে জিনিস আছে’।

এই মুগ্ধতা যে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সে সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বকবি ‘কিন্তু শীঘ্রই দেখিতে পাইলাম বঙ্কিমবাবুর admiration বড় বেশি দিন স্থায়ী হইল না। কৃষ্ণচরিত্র রচয়িতার সহিত তর্ক-চূড়ামণির মিলন স্থায়ী হইতে পারে না’। এমনকী প্রথম দিন দুয়েক ধর্মসভায় যাওয়ার পর বঙ্কিম আর সে-মুখো হননি। তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে ঘনিষ্ঠজন চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বলেছিলেন, ‘কয় দিন তাঁর বক্তৃতা শুনিতে গিয়াছিলাম। এ রূপ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে কতকগুলি অসাড় লোকে নাচিয়া ধরাকে সরা জ্ঞান করিতে পারে, কিন্তু ওতে কোনও স্থায়ী ফল হইতে পারে না। মালা, তিলক, ফোঁটা ও শিখা রাখায় যে ধর্ম ট্যঁাকে, আর ওইগুলির অভাবে যে ধর্ম লোপ পায়, সে ধর্মের জন্য দেশ এখন আর ব্যস্ত নহে। তর্কচূড়ামণি মহাশয় ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, তিনি এখনও বুঝিতে পারেন নাই যে, নানা সূূত্রে প্রাপ্ত নূতন শিক্ষার ফলে দেশ এখন উহা অপেক্ষা উচ্চ ধর্ম চায়। কী হইলে এ দেশের সমাজ-ধর্ম এখন সর্বাঙ্গসুন্দর হয়, সে জ্ঞানই এঁদের নাই। তাই যা খুশি তাই বলিয়া লোকের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত?’

এরই মধ্যে বঙ্গবাসী পত্রিকায় চূড়ামণি বঙ্কিম ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন সম্পর্কে লিখলেন, ‘ইঁহারা আমার শিষ্য হইয়াছেন’। চটে গিয়ে বঙ্কিম নবজীবন পত্রিকায় লিখলেন ‘ধর্ম জিজ্ঞাসা’ প্রবন্ধ, যা পরে ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত ‘ধর্মতত্ত্ব। প্রথম ভাগ। অনুশীলন’ গ্রন্থে পরিমার্জনপূর্বক অন্তর্ভুক্ত হয়। আবার ১৮৮৪-’৮৫ সালেই চূড়ামণির বক্তৃতার সংকলন ‘ধর্ম্মব্যাখ্যা, ১ম খণ্ড’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁদের মতবিরোধ সুস্পষ্ট হয় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লিখনে ‘চূড়ামণি বলিলেন, যদি হিন্দু হইতে চাও, খাদ্যাখাদ্য বিচার করো, ত্রিসন্ধ্যা করো, নিত্যস্নানী নিরামিষাশি হও তবে তো হিন্দু হবে’। বঙ্কিমবাবু বলিলেন, ‘তাহা নহে, আমরা অখাদ্যও খাইব, হিন্দুও হইব’। সমসাময়িক কালে বঙ্কিম ‘প্রচার’ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘হিন্দুধর্ম’ প্রবন্ধ, যেটি তাঁর মরণোত্তর কালে প্রকাশিত ‘দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম’ গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়। তাতে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘পণ্ডিত শশধর তর্কচূড়ামণি মহাশয় যে হিন্দুধর্ম প্রচার করিতে নিযুক্ত, তাহা আমাদের মতে, কখনওই টিকিবে না এবং তাঁহার যত্ন সফল হইবে না’।

অবশ্য বঙ্কিমের অন্তরঙ্গ চন্দ্রনাথ বসু শশধরমুগ্ধতায় লিখেছেন, ‘তিনি যেমন বলিলেন ধৃ ধাতু হইতে ধর্ম্ম, অর্থাত্‌ যাহা ধারণ করে তাহাই ধম্মর্র্ অমনি আমার সকল সংশয় দূর হইল, বিশ্বে যা যা কিছু আছে সকলই ধম্মের্র্র অন্তর্গত দেখিলাম।’ জনশ্রুতি প্রচলিত আছে যে, এই প্রতিক্রিয়াকে ব্যঙ্গ করেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সোনার তরী’ কাব্যভুক্ত ‘হিং টিং ছট’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘সাধু সাধু সাধু’ রবে কাঁপে চারি ধার,/সবে বলে‘পরিষ্কার অতি পরিষ্কার’/দুর্বোধ যা-কিছু ছিল হয়ে গেল জল,/শূন্য আকাশের মতো অত্যন্ত নির্মল’। এ ছাড়াও ‘হাস্যকৌতুক’ ভুক্ত ‘আর্য ও অনার্য’ রচনায় তিনি আর্যদের হাই তোলার সময় তুড়ি দেওয়া, আর্যকন্যার মাটিতে পাখা ঠোকার মধ্যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বপ্রতিষ্ঠাকামিতার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গবাণ হেনেছিলেন।

সায়ন্তন মজুমদার।বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

দু’জনের প্রতিবাদে

অধ্যাপক নীতি নায়ারের প্রবন্ধে (‘ইংরেজি তো এখন...’, ৭-৮) আর একটি মূল্যবান তথ্য সংযোজন করতে চাই। জাতীয় ভাষা সম্পর্কে হিন্দি-ইংরেজি বিতর্ক বিষয়ে ভারত সরকার মুম্বইয়ের তদানীন্তন মুখমন্ত্রী বি জি খের-এর সভাপতিত্বে ২১ জন সদস্যকে নিয়ে ১৯৫৫-র জুন মাসে একটি অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯৫৬-র অগস্ট মাসে রিপোর্ট দাখিল করে ও ইংরেজির বদলে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করে। কিন্তু দু’জন সদস্য এই সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং পি সুব্বারায়ান। এই সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আবার তুমুল বিতর্ক শুরু হয় এবং সমস্ত ব্যাপারটা অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে যায়। এখনও যে ইংরেজিকে সম্পূর্ণ ভাবে হঠিয়ে হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হয়ে ওঠেনি তার পিছনে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং পি সুব্বারায়ানের অবদান অনস্বীকার্য।

মোহিত রায়। গ্রিনপার্ক, বর্ধমান

বিষ্ণুপুরের রাস্তা

বাঁকুড়া জেলার মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরে পর্যটকদের যাতায়াত লেগেই থাকে। শীতকালে এই শহরে খুব সুন্দর মেলা হয়। তা দেখতে অন্য রাজ্য, এমনকী বিদেশ থেকেও অনেক পর্যটক আসেন। স্থানীয় মানুষ এই পর্যটন শিল্পের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। শহরের বেশ কিছু রাস্তা দীঘর্র্ দিন বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। পর্যটকরা যে রাস্তা দিয়ে মন্দির দেখতে আসেন তা জলকাদাতে ভরে গেছে। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দলমাদল কামান দেখতে দলমাদল রোড দিয়ে যেতে হয়। রাস্তাটি জায়গায় জায়গায় ডোবার আকার নিয়েছে। শ্যাম রায়, লালজি, কালাচাঁদ, ছিন্নমস্তা, রাধামাধব মন্দিরে রাস্তা খারাপের জন্য যাতায়াত করা মুশকিল।

বীরেন সরকার।অরবিন্দ নগর, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE