Advertisement
E-Paper

কাত্যায়নীর সন্ততি

স্বাধীন ভারতে সাক্ষরতার হার বাড়িয়াছে, কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়িয়াছে জনসংখ্যাও। তাই নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা সে ভাবে কমে নাই। আজ আঠাশ কোটিরও অধিক ভারতীয় নিরক্ষর। বিশ্বের ৩৭ শতাংশ নিরক্ষর মানুষ ভারতীয়, ১১ শতাংশ চিনের নাগরিক। শিক্ষা পাইবার সম্ভাবনা যে সকল সূচকে নির্ণীত হয়, তাহার সব কয়টিই ছিল এমন দেশে কাত্যায়নী আম্মার বিরুদ্ধে।

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
সাক্ষরতা প্রকল্পের পরীক্ষায় কাত্যায়নী আম্মা।

সাক্ষরতা প্রকল্পের পরীক্ষায় কাত্যায়নী আম্মা।

ছিয়ানব্বই বৎসরে সাক্ষর হইলেন কাত্যায়নী আম্মা। কেরলের পালাক্কড় জেলার এই বৃদ্ধা সরকারি সাক্ষরতা প্রকল্পের পরীক্ষায় বসিয়া পাশ করিলেন। তিনি ব্যতিক্রমী মানুষ, সন্দেহ নাই। এই বৃদ্ধা যে কেবল বার্ধক্যের জড়তা অতিক্রম করিয়াছেন তাহাই নহে। লিখিতে পড়িতে পারিবার আজন্ম-লালিত ইচ্ছা নিজের চেষ্টায় পূর্ণ করিয়াছেন। আবার তিনি ভাগ্যবতীও। ভারতে গড় আয়ু আটষট্টি বৎসর, নিরক্ষর, দরিদ্র মানুষদের আয়ু আরও অনেক কম। কাত্যায়নী আম্মা দীর্ঘজীবী হইয়াছেন বলিয়া অক্ষরপরিচয় হইয়াছে। ইহাও তাঁহার সৌভাগ্য যে, তিনি বাস করেন কেরলে, যে রাজ্যটি সাক্ষরতার হারে সর্বোচ্চ স্থানে রহিয়াছে, নারী শিক্ষাতেও তাহার স্থান শীর্ষে। উত্তরপ্রদেশ কিংবা বিহারে জন্মাইলে সম্ভবত তাঁহাকে নিজের নাম নিজের হাতে এক বারও না লিখিয়াই পৃথিবী হইতে বিদায় নিতে হইত। যে ভাবে চলিয়া গিয়াছেন তাঁহার প্রজন্মের অধিকাংশ মহিলা। তাঁহার জন্ম হইয়াছিল পরাধীন ভারতে। তখন সাক্ষরতার হার ছিল ১২ শতাংশ, একশো জন ভারতীয়ের অষ্টাশি জনই ছিলেন নিরক্ষর। স্বাধীনতা তাঁহাদের অধিকাংশকে নিরক্ষরতা হইতে মুক্তি দিতে পারে নাই।

স্বাধীন ভারতে সাক্ষরতার হার বাড়িয়াছে, কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়িয়াছে জনসংখ্যাও। তাই নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা সে ভাবে কমে নাই। আজ আঠাশ কোটিরও অধিক ভারতীয় নিরক্ষর। বিশ্বের ৩৭ শতাংশ নিরক্ষর মানুষ ভারতীয়, ১১ শতাংশ চিনের নাগরিক। শিক্ষা পাইবার সম্ভাবনা যে সকল সূচকে নির্ণীত হয়, তাহার সব কয়টিই ছিল এমন দেশে কাত্যায়নী আম্মার বিরুদ্ধে। তিনি মহিলা, গ্রামবাসী, দরিদ্র। ভারতে দরিদ্র মহিলাদের পূর্ণ সাক্ষর হইতে আরও অর্ধ শতক লাগিবে, বলিতেছেন বিশেষজ্ঞরা। দলিত বা আদিবাসী হইলে অক্ষরপরিচয়ের সম্ভাবনা আরওই কম। আদিবাসী মহিলাদের অর্ধেকের অধিক আজও নিরক্ষর। এই প্রান্তবাসী, নিরক্ষর মানুষদের মধ্যে স্কুলছুট কিশোরকিশোরী হইতে বৃদ্ধবৃদ্ধা, সকলেই রহিয়াছেন। কর্মজীবনের অধিকাংশটাই তাঁহারা নিরক্ষরতার বিপন্নতা লইয়া কাটাইবেন। ইহাতে তাঁহাদের উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হইবে, দেশও দরিদ্র হইবে।

এই সঙ্কট কাহারও অজানা নহে। অথচ প্রাপ্তবয়স্কের সাক্ষরতার প্রতি সরকার উদাসীন। আশির দশকে জাতীয় সাক্ষরতা মিশন কিছু প্রাধান্য পাইয়াছিল। অতঃপর সর্ব শিক্ষা মিশন স্কুলশিক্ষার উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ টানিয়াছে, বয়স্কশিক্ষা অবহেলিত হইতেছে। মোদী সরকার নব-নামাঙ্কিত ‘সাক্ষর ভারত’ প্রকল্পে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়াছিল। অতঃপর বরাদ্দ কমিয়াছে। বর্তমান আর্থিক বৎসরের বরাদ্দ তিনশো কুড়ি কোটি টাকা। অথচ বয়স্ক সাক্ষরতার প্রয়োজন কমে নাই, বরং বাড়িতেছে। তাহার প্রথম কারণ, শিশুরা স্কুলছুট হইবার হার এখনও অতি উচ্চ। ইহাদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষাও সম্পূর্ণ করে নাই। দ্বিতীয়ত, স্কুলশিক্ষার মান মন্দ। যাহারা প্রাথমিক সম্পূর্ণ করিয়াছে, তাহাদের প্রায় অর্ধেক লিখিতে-পড়িতে শেখে নাই। তৃতীয়ত, নিরক্ষর অথবা প্রায়-নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কের বিপুল সংখ্যা। মানবসম্পদের এই বিপুল অপচয় কোনও দেশ বহন করিতে পারে না। কাত্যায়নী আম্মা দেখাইলেন, তাঁহাদের শিখিবার ইচ্ছা কম নয়, সুযোগ কম।

Education Literacy Kerala Katyayani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy