Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Editorial news

চমক নয়, রোগের চূড়ান্ত দাওয়াই খুঁজে বার করাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত

এই প্রশ্নেও কেউ দ্বিমত হবেন না সম্ভবত, অতএব একটা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার পড়েছিল।

রোগীর সঙ্গে নিজস্বী তুলে উপস্থিতির প্রমাণ দেওয়ার মধ্যে যে অসম্মানের বোধ রয়েছে, তা রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালে ক্ষতিই শেষ পর্যন্ত রোগীরই।

রোগীর সঙ্গে নিজস্বী তুলে উপস্থিতির প্রমাণ দেওয়ার মধ্যে যে অসম্মানের বোধ রয়েছে, তা রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালে ক্ষতিই শেষ পর্যন্ত রোগীরই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের সরকারি চিকিৎসকেরা এই মুহূর্তে আজব এক একুশে আইনের প্যাঁচে পড়েছেন। সে প্যাঁচের শেষে না থাকে শ্যাম, না থাকে কুল। সরকারি বিধি জারি হয়েছে, চিকিৎসকদের উপস্থিতির প্রমাণ দিতে রোগীদের সঙ্গে নিজস্বী তুলে যথাস্থানে পৌঁছতে হবে। নিজস্বী নেই, তো হাজিরাও নেই। এ পোড়া দেশে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মারধরের ক্রমাগত ঘটনার পরে চিকিৎসকদের সম্মান যেটুকু সমাজে অবশিষ্ট ছিল, সেটুকুও এ বার হরণ হওয়ার উপক্রম। যে কোনও ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তের পিছনে যেমন একটা মহতী উদ্দেশ্যের মোড়ক থাকে, এ ক্ষেত্রেও তেমনই একটা যে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। একটা যথাযথ পটভূমিকাও যে নেই তা-ও বলা যাবে না। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতির হার এমনই নগণ্য হয়ে যেতে বসেছিল, যা এককথায় উদ্বেগজনক। চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে, রোগীর সংখ্যাও বিপুল, শুধু যা নেই তা হল চিকিৎসক— এমন অবস্থায় প্রান্তিক মানুষের জন্য পরিস্থিতিটা কতটা দুঃসহ হয়ে উঠতে পারে, তা বলার অবকাশ রাখে না। সরকারি চিকিৎসকদের গাফিলতি যে সেখানে ষোলোআনাই, এই প্রশ্নেও কেউ দ্বিমত হবেন না সম্ভবত, অতএব একটা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার পড়েছিল।

প্রশ্নটা হল ব্যবস্থার ধরন নিয়ে। রোগীর সঙ্গে নিজস্বী তুলে উপস্থিতির প্রমাণ দেওয়ার মধ্যে যে অসম্মানের বোধ রয়েছে, তা রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালে ক্ষতিই শেষ পর্যন্ত রোগীরই। প্রশ্ন উঠতে পারে, দিনের পর দিন কামাই করেও যাঁদের লজ্জার উদ্রেক হয় না, তাঁদের আর নতুন করে কী লজ্জা হবে এই নিজস্বীকে ঘিরে? সে প্রশ্নও পরের, তার আগে সরকারের তরফে এহেন নির্দেশ আদৌ আসবে কেন, প্রশ্নটা সেখানেই।

এহেন সিদ্ধান্তের মধ্যে বলিউডি চমকের গন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবিক সমাধানের সূত্র কতটা রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রের ন্যূনতম পরিকাঠামো উন্নতি অথবা সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোর সংস্কার না করে এই ধরনের পপুলিস্ট কিছু সিদ্ধান্ত সাময়িক তালি অর্জনে সক্ষম হতে পারে। রোগের চূড়ান্ত দাওয়াই কখনই হতে পারে না। দেশ জুড়েই নানান ক্ষেত্রে এই চমক দেওয়ার রাজনৈতিক প্রবণতা যত তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়, ততই এ দেশের মঙ্গল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: রোগীর সঙ্গে সেলফি তুলে উপস্থিতির প্রমান দিতে হবে ডাক্তারদের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE