Advertisement
E-Paper

শিকড় থেকে নিরাময় জরুরি

বছরের পর বছর শিশুপাচার চলেছে একটা নার্সিংহোম থেকে। কোনও প্রত্যন্ত প্রান্তে বা লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও পাণ্ডবর্জিত খণ্ডে অবস্থান নয় নার্সিংহোমটার। কেউ কিছুই টের পেলেন না, এমনটা মেনে নেওয়া যাবে কী ভাবে?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
ষোলো বছর ধরে সর্বসমক্ষে জালিয়াতির সৌধের উপরে দাঁড়িয়ে থাকল একটা প্রতিষ্ঠান। কেউ কিছু টেরই পেলেন না! ফাইল চিত্র।

ষোলো বছর ধরে সর্বসমক্ষে জালিয়াতির সৌধের উপরে দাঁড়িয়ে থাকল একটা প্রতিষ্ঠান। কেউ কিছু টেরই পেলেন না! ফাইল চিত্র।

নজরদারিতে এবং প্রশাসনিক বুনটে কতখানি ফাঁক থাকলে এমনটা ঘটা সম্ভব! জনবহুল একটা শহরের ততোধিক জনবহুল বাজারে তথা ব্যস্ত সড়কের ধারে একটা নার্সিংহোম চলছিল ষোলো বছর ধরে। কেউ জানতেনই না, নার্সিংহোমটা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদনই পায়নি। কেউ জানতেনই না, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নেই, নেই দমকল বিভাগের অনুমতি। শিশু পাচার চক্র ফাঁস হওয়ার পরে সামনে এল একের পর এক কেলেঙ্কারি। জানা গেল, নার্সিংহোমের প্রধান চিকিত্সক হিসেবে যাঁকে চিনতেন, তিনি আসলে হাতুড়ে। জানা গেল, নার্সিংহোমের বাইরে যে সব চিকিত্সকদের নামের বোর্ড ঝুলত, তাঁরা সবাই ওখানে চিকিত্সা করতেন না। এক দিন-দু’দিন নয়, এক মাস-দু’মাস নয়, এক বছর-দু’বছর নয়— ষোলো বছর ধরে সর্বসমক্ষে জালিয়াতির সৌধের উপরে দাঁড়িয়ে থাকল একটা প্রতিষ্ঠান। কেউ কিছু টেরই পেলেন না! নাগরিক কতটা সুরক্ষিত বোধ করবেন এ কাণ্ড জানার পরে?

বছরের পর বছর শিশুপাচার চলেছে একটা নার্সিংহোম থেকে। কোনও প্রত্যন্ত প্রান্তে বা লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও পাণ্ডবর্জিত খণ্ডে অবস্থান নয় নার্সিংহোমটার। কেউ কিছুই টের পেলেন না, এমনটা মেনে নেওয়া যাবে কী ভাবে? চোর-ডাকাত বা দুষ্কৃতী-তোলাবাজ ধরা পড়ুক বা না পড়ুক, তাদের প্রতিটা গোষ্ঠীর প্রতিটা সদস্যের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় আলাপ-পরিচয় থাকে বলে ‘নিন্দুকরা’ দাবি করেন। কেন এই আলাপ-পরিচয়, কেনই বা দুষ্কৃতীদের ধরতে না পারা, তা নিয়েও ওই ‘নিন্দুকরা’ নানা তত্ত্বের অবতারণা করেন। সে সব প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা আজ যদি না-ও করি, তা হলেও কি কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন যে, পুলিশ কিছুই জানত না? আর যদি বিশ্বাস করতেই হয়, তা হলে পুলিশের দক্ষতা বা গোয়েন্দা বাহিনীর পারদর্শিতা নিয়ে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন উঠে যাবে না কি?

ষোলো বছর ধরে প্রশাসনের নানা বিভাগই বা কী করছিল? ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন ছিল না। দূষণ এবং দমকল সংক্রান্ত ছাড়পত্র ছিল না। প্রশাসনের তরফে যদি ন্যূনতম নজরদারির বন্দোবস্ত থাকত, তা হলে অশোকনগরের এই বনানী নার্সিংহোম চলা তো দূরের কথা, খুলতই না। যাবতীয় ছাড়পত্র এবং যাবতীয় অনুমোদন নিয়ে নার্সিংহোমটা যদি খুলত, তা হলে অনেক রকম দুরভিসন্ধির পথ গোড়াতেই বন্ধ হয়ে যেত, বছরের পর বছর বিপজ্জনক ভাবে গর্ভপাত করানো এবং শিশুপাচার চালিয়ে যাওয়া যেত না।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: বনানী-তে প্রসূতিদের দেওয়া হত ভুয়ো প্রেসক্রিপশন, আধার কার্ড!

জালিয়াতিগুলো রোখার জন্যই তো কোনও প্রতিষ্ঠান খোলার আগে এত রকম প্রক্রিয়াগত ধাপ পেরনোর বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু বন্দোবস্ত অনুযায়ী সব কিছু চলছে কি না, বৈধ বন্দোবস্তটাকে এড়িয়ে কোনও কিছু ঘটছে কি না, বন্দোবস্তটাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও অবকাশ রয়েছে কি না, বন্দোবস্তটার মধ্যে কোনও ফাঁক রয়েছে কি না— এসব দিকে নিরন্তর নজর না রাখলে সবই জলে যায়। যে ভাবে জলে গিয়েছে অশোকনগরে।

আরও পড়ুন: বহু তরুণীর আনাগোনা ছিল ‘বনানী’তে

বনানী নার্সিংহোমে এত দিন ধরে যে অবৈধ কারবার চলছিল, এ বার তা থামবে হয়তো। নার্সিংহোম যাঁরা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সাজাও হবে হয়তো। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ এবং বেআইনি কার্যকলাপ চলতে পারল কী ভাবে, তারও খোঁজ নেওয়া দরকার। প্রশাসনিক গাফিলতি ছাড়া বছরের পর বছর সর্বসমক্ষে একটা অবৈধ প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়াটা তো সম্ভব নয়। সেই প্রতিষ্ঠানে বসে ততোধিক বেআইনি কারবার যে ভাবে দিনের পর দিন চলেছে বলে জানা যাচ্ছে, পুলিশ-প্রশাসন কর্তব্যে অটল থাকলে সেই কারবারও কি চলা সম্ভব ছিল?

কারা কর্তব্যে অটল ছিলেন না? কারা গাফিলতিটা করলেন? কারা অন্যায়ের সঙ্গে গোপনে আপোস করেছিলেন? খুঁজে বার করা দরকার তাঁদেরও। না হলে সমস্যার শিকড়ে কিছুতেই পৌঁছতে পারব না।

Newsletter Banani Nursing Home Sex Determination Illegal Abortion Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Ashoknagar child trafficking শিশুপাচার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy