Advertisement
E-Paper

আপনারে ছাড়া

অমিত শাহ একা নহেন। সঙ্ঘ পরিবারের কর্তা মোহন ভাগবত স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো সম্মেলনের বক্তৃতার ১২৫ বৎসর উদ্‌যাপনের আনন্দে হিন্দুদের সঙ্ঘবদ্ধ হইবার ডাক দিলেন, কারণ একতাই বল।

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২০
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। —ফাইল ছবি

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। —ফাইল ছবি

যখন ‘আখলাক’ ঘটিয়াছিল, তখনও আমরা ভোটে জিতিয়াছিলাম। যখন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পুরস্কার ফিরাইয়া দিতেছিলেন, তখনও আমরাই জিতিয়াছিলাম। এই বারও আমরাই জিতিব, বিরোধীরা যতই হরেক প্রশ্ন তুলুক না কেন।’’ বক্তার নাম অমিত শাহ। কোনও ভণিতা নাই, রাজনৈতিক মুখ রক্ষার দায়টুকুও নাই, সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠিয়া দেশের নেতা সাজিবার ভড়ং নাই। সপাট বলিয়া দেওয়া— যিনি যে কামান দাগিতে চাহেন, দাগুন; গণতন্ত্রের মহানিধন দেখিয়া যাঁহার চোখের জলে ভাসিয়া যাওয়ার, যান। কিন্তু রাজধর্ম পালন করিবার মতো নাটকের পুনরাবৃত্তিতে তাঁহারা নিতান্তই নারাজ। অমিত শাহ সংশয়ের অবকাশ রাখেন নাই। রাজস্থানের মন্দিরে দাঁড়াইয়া সে দিন তিনি বুঝাইয়া দিলেন যে গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা তাঁহার নাই। তাহার দিনকয়েক পূর্বে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে অভিনন্দন জানাইয়াছিলেন ভিনরাজ্যে পুলিশ পাঠাইয়া মেধাজীবীদের গ্রেফতার করিবার জন্য। কাজটিতে যে শুধু দেশের নাগরিক সমাজই বিক্ষুব্ধ, তাহা নহে। শীর্ষ আদালতও কঠোর ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করিয়াছে এবং পাঁচ অভিযুক্তকে পুণে পুলিশের হেফাজতে পাঠাইতে অসম্মত হইয়াছে। অমিত শাহ বিলক্ষণ তাহা জানেন। জানিয়াও তিনি সজ্ঞানে অভিনন্দন জানাইলেন ফডণবীসকে, ‘আর্বান নকশাল’দের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য। অনুমান করা চলে, তিনি বুঝাইতে চাহিয়াছেন, নাগরিক সমাজ হউক বা শীর্ষ আদালত, গণতন্ত্রের কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দায় তাঁহার নাই। কারণ, তাঁহারা নির্বাচনে জিতেন।

অমিত শাহ একা নহেন। সঙ্ঘ পরিবারের কর্তা মোহন ভাগবত স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো সম্মেলনের বক্তৃতার ১২৫ বৎসর উদ্‌যাপনের আনন্দে হিন্দুদের সঙ্ঘবদ্ধ হইবার ডাক দিলেন, কারণ একতাই বল। সেই আহ্বানে তিনি হিন্দুদের সিংহের সঙ্গে তুলনা করিবার প্রকারান্তরে মুসলমানদের প্রতি অতি কুরুচিকর উক্তি করিলেন। স্বামীজিকে আলোচনার বাহিরেই রাখা ভাল, কারণ তাঁহার নিকট হিন্দুত্ব বা ধর্ম, এই শব্দগুলি যে অর্থ বহন করিত, মোহন ভাগবতরা সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্য হইতে বহু আলোকবর্ষ দূরে। কেবল ইহাই উল্লেখ্য যে, মনের গভীরে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে যে কদর্য ভাব ভাগবতরা পুষিয়া রাখেন, তাহা খোলসা করিতে এখন তাঁহাদের দ্বিধামাত্র হয় না। প্রকাশ্যে এই কথাগুলি বলিতে তাঁহারা ভয় পান না। কারণটি অনুমানযোগ্য। তাঁহারা নির্বাচনে জিতেন।

অমিত শাহদের ঔদ্ধত্য, মোহন ভাগবতদের নিঃসঙ্কোচ কদর্যতা ভারতীয় রাজনীতিতে আক্ষরিক অর্থেই অ-ভূতপূর্ব। কেন এই ঔদ্ধত্য, সেই কারণটি লইয়া তাঁহারা রাখঢাক করেন না। তাঁহারা ভোটে জিতেন। তাঁহাদের হাতে গণতন্ত্র বেআব্রু হইলেও, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি চূড়ান্ত লাঞ্ছিত হইলেও তাঁহাদের সমর্থকদের কিছু আসে-যায় না। ভোটে যে তাঁহারা জিতেন, তাহা সত্য— মহম্মদ আখলাকের মৃতদেহের উপর দাঁড়াইয়াই উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হইয়াছেন। গুজরাত হইতে অসম, উত্তরাখণ্ড হইতে কর্নাটক, যেখানেই মানুষ তাঁহাদের ভোট দিয়াছেন, গোসন্ত্রাস হইতে বুদ্ধিজীবীহত্যা, দলিত নিধন হইতে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি, সব জানিয়াই দিয়াছেন। আজ অমিত শাহরা যে আপনারে ছাড়া কাহাকেও কুর্নিশ না করিবার ঔদ্ধত্য দেখাইতে পারেন, তাঁহাদের সেই সাহস দিয়াছেন ভারতের জনসাধারণ। গণতন্ত্রের শ্বাস রুদ্ধ হইলে যে অমিত শাহদের হাত থেকে বাঁচিবার পথ তাঁহাদেরও থাকিবে না, আড়াল খুঁজিবার মতো কোনও বর্ম তাঁহাদেরও থাকিবে না, এই কথাটি অন্ধ ভক্তদের বুঝাইবে কে?

Amit Shah Lynching BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy