Advertisement
E-Paper

চাঁদমারি

বাতিল হওয়া নোটের কত শতাংশ রিজার্ভ ব্যাংকে ফিরিয়া আসিল, তাহা যে ডিমনিটাইজেশনের সাফল্যের কোনও মাপকাঠি হইতেই পারে না, অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা করিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০

বাবুমহাশয়ের বাসনা ছিল, বন্দুকবাজ হিসাবে তাঁহার নাম ছড়াইয়া পড়ুক। নিষ্ঠাবান বাবু প্রত্যহ সকালে উঠিয়া দেওয়াল তাক করিয়া গুলি ছুড়িতেন। সঙ্গে থাকিত চাকর। দেওয়ালে গুলি লাগিবার সঙ্গে সঙ্গে সে তাহাকে কেন্দ্র করিয়া চাঁদমারি আঁকিয়া দিত। অরুণ জেটলিও চাঁদমারি আঁকিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন, নরেন্দ্র মোদীর নোটবাতিলের গুলিটি মোক্ষম বিঁধিয়াছে। বাতিল হওয়া নোটের কত শতাংশ রিজার্ভ ব্যাংকে ফিরিয়া আসিল, তাহা যে ডিমনিটাইজেশনের সাফল্যের কোনও মাপকাঠি হইতেই পারে না, অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা করিয়াছেন। কারণ, ৮ নভেম্বর রাত্রের ‘ধামাকা’টির লক্ষ্য নাকি ছিল কাহার হাতে কত নগদ আছে, তাহা দেখা; ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা; কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই; এবং, আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি। অতএব, বাতিল হওয়া নোটের ৯৯ শতাংশ রিজার্ভ ব্যাংকে ফিরিয়া আসিলেও নোট বাতিলের কর্মসূচি ব্যর্থ হয় নাই। চাঁদমারি আঁকিতে দৌড়াদৌড়ি জেটলিই আরম্ভ করিলেন, বলিলে তাঁহার প্রতি অন্যায় হইবে। গোলপোস্ট সরাইবার কাজটির সূচনাও নরেন্দ্র মোদীর হাতে, অথবা মুখেই। কখনও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কখনও নকল নোটের বিরুদ্ধে জেহাদ, কখনও কালো টাকার বিরুদ্ধে রণদামামা, তাঁহার কুনাট্যে নোট বাতিল বহুবিধ ভূমিকা পাইয়াছে। রিজার্ভ ব্যাংক জানাইল, নোট বাতিল আসলে মৃত সৈনিকের অভিনয় করিয়াছে। তবে, মরিবার পূর্বে ভারতীয় অর্থনীতিটিকেও মারিয়া গিয়াছে।

কোনও অর্থনীতিবিদ আজ অবধি নোট বাতিলকে একটি আর্থিক নীতি হিসাবে পেশ করেন নাই। কথাটি নরেন্দ্র মোদীও সম্ভবত জানিতেন। অন্তত, জানা উচিত ছিল। তবুও যখন তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন, অনুমান করা চলে, তাহার সম্ভাব্য সুফল সম্বন্ধে তাঁহার স্পষ্ট এবং সুবিবেচিত ধারণা ছিল। এ যাবৎ কাল তিনি যতগুলি লক্ষ্যের কথা বলিয়াছেন, নোট বাতিল তাহার কোনওটিই পূরণ করিতে পারে নাই। সন্ত্রাসবাদ পূর্ববৎ আছে— দুর্জনের মতে, দুর্নীতিও। নকল নোট আছে। ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়িয়া ফের কমিয়া গিয়াছে। করদাতার সংখ্যা ঠিক কত বাড়িয়াছে, তাহার কোনও নির্দিষ্ট হিসাব মিলে নাই। আয়কর আদায়ের পরিমাণ কতখানি বাড়িল, এবং নোট বাতিলের সহিত তাহার প্রত্যক্ষ সম্পর্কটি কোন পথে প্রতিষ্ঠিত হইল, নরেন্দ্র মোদীরা সেই উত্তরও দেন নাই। গত নয় মাসে থাকিবার মধ্যে আছে কেবল বিপুল অস্বচ্ছতা, গোপনীয়তা। এবং আছে ভুল বুঝাইবার চেষ্টা। জেটলির বক্তব্যটিই যেমন। রিজার্ভ ব্যাংকে টাকা ফিরিয়া আসিবার অর্থ, তাহা কাহারও না কাহারও ব্যাংকের খাতায় জমা পড়িয়াছে। ইহাই টাকা ফিরিবার একমাত্র পথ। অর্থাৎ, টাকার মালিকানা অপরিবর্তিতই আছে, বরং কালো টাকা সাদা হইয়া গিয়াছে। সব টাকা যদি ফিরিয়াই আসে, তবে তাঁহাদের হাতে শায়েস্তা হইলেন কে? অর্থনীতির ঘাড় ধরিয়া এই বিপুল ঝাঁকানি দেওয়ার পরিবর্তে কী পাওয়া গেল, সরকার যদি নয় মাস পরেও তাহা না বলিতে পারে, তবে বুঝিতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক চিন্তায় বিপুল গোলমাল ছিল।

দুর্জনে বলিতে পারে, চিন্তাটি অর্থনীতির ছিলই না। তাহা ছিল আদ্যন্ত রাজনীতি। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের পূর্বে বিরোধীদের হঠাৎ নগদহীন করিয়া দেওয়ার চাল। এবং, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলিয়া ছাতি চাপড়াইবার আরও একটি অবকাশ তৈরি করা। তিনি কেন নোট বাতিল করিয়াছিলেন, এত দিনেও নরেন্দ্র মোদী যখন সেই প্রশ্নের কোনও সুনির্দিষ্ট এবং যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দিতে পারেন নাই, তখন এই অভিযোগগুলি মান্যতা পায় বইকি। আর, যে দেশের লোক এই বিপুল ধ্বংসলীলাকে অগ্রাহ্য করিয়া নোট বাতিলের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর মাহাত্ম্য খুঁজিয়া পায়, সেই দেশটিকে লইয়াও উদ্বেগ গভীরতর হয়।

demonetisation Arun Jaitley Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy