Advertisement
E-Paper

সাবধান

কিন্তু নিরাপদে গাড়ি চালাইবার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির এই প্রয়াস সম্পর্কে জানিয়া দুনিয়ার মানুষ কী বলিবেন? যে কোনও সভ্য দেশের নাগরিক নিয়ম মানিয়া গাড়ি চালাইয়া থাকেন।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:৩০

সচেতনতার যে কোনও রূপ উদ্যোগ, তাহা নূতন হউক বা পুরাতন, সব সময়েই স্বাগত, বিশেষত ভারতের ন্যায় দেশে— যাহা জ্ঞানের নিরিখে হয়তো বা অগ্রগতির পথে, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানের নিরিখে ভিন্ন বস্তু। কাণ্ডজ্ঞান বাড়াইতে সচেতনতার বিশেষ প্রয়োজন। এ রাজ্যে কোনও কোনও বিষয়ে সচেতনতা বাড়াইবার ব্যাপারে সরকার কিয়দংশে সফল। যেমন কন্যাশ্রী প্রকল্প। বাল্যবিবাহ কমাইতে এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে এই প্রয়াস হয়তো কিছুটা সাফল্য অর্জন করিয়াছে। এই প্রয়াস বিশ্বদরবারে বন্দিতও হইয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী যারপরনাই খুশি হইয়াছেন। এবং হয়তো বা এই খুশির রেশ বজায় রাখিবার বাসনায় তিনি অপর একটি প্রকল্পকে বিশ্ববন্দিত করিবার উদ্দেশ্যে উদ্যোগী হইয়াছেন— ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ বা ‘সামলে চালাও প্রাণ বাঁচাও’ কর্মসূচি। অর্থাৎ কিনা নিয়ম মানিয়া গাড়ি চালাইবার সচেতনতা। নিত্য দুর্ঘটনার বাড়াবাড়ি রোধেই এই উদ্যোগ। সাধু উদ্যোগ।

কিন্তু নিরাপদে গাড়ি চালাইবার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির এই প্রয়াস সম্পর্কে জানিয়া দুনিয়ার মানুষ কী বলিবেন? যে কোনও সভ্য দেশের নাগরিক নিয়ম মানিয়া গাড়ি চালাইয়া থাকেন। কারণ তাঁহারা স্বাভাবিক বুদ্ধিতেই নিজের এবং অন্যের প্রাণের মূল্য অনুধাবন করিতে পারেন। যাহা হয় পশ্চিমবঙ্গের চালক-বর্গের এক বিরাট অংশেরই অজ্ঞাত, অথবা তাঁহারা এতই অকুতোভয় যে তাঁহাদের নিকট মৃত্যু নিতান্তই একটি ঘটনা মাত্র। প্রাণ বাঁচাইতে সামলাইয়া গাড়ি চালাইবার এমন আশ্চর্য প্রচার অভিযান দেখিয়া সভ্য দেশের নাগরিকরা অবাক হইয়া যাইবেন না তো? যাহা দাঁত মাজিবার ন্যায় নিত্যকর্ম, তাহাকে যদি সচেতনতার পুরিয়ায় ভরিয়া আত্মস্থ করাইতে হয়, তবে তাহা বিস্ময় উদ্রেক করিতে পারে বইকি। অতএব শঙ্কা হইতেই পারে, এমন উদ্যোগ শেষ অবধি বিশ্বের হাটে আপন হাঁড়ি ভাঙিবার প্রদর্শনীতে রূপান্তরিত না হয়!

শঙ্কা আরও আছে। এই উদ্যোগে প্রভাবিত হইয়া যদি বিশ্বের সভ্য দেশের মানুষজন এই প্রাণ বাঁচাইয়া গাড়ি চালাইবার উদ্যোগটি স্বচক্ষে দেখেন, তবে তাহা অধিকতর সমস্যা ডাকিয়া আনিবে না তো? তাঁহারা দেখিবেন, এ রাজ্যের খাস রাজধানীতে গাড়ি-চালকরা প্রায়শই বেপরোয়া গাড়ি চালান, যত্রতত্র ট্রাফিক আইন অমান্য করেন। চালক তথা আরোহীরা সিট-বেল্ট বাঁধাকে কিংবা হেলমেট পরাকে সম্মানহানি হিসাবে গণ্য করেন। এমনকী বাইক-আরোহীর নিজের হেলমেট থাকিলেও সঙ্গী শিশুটির হেলমেট থাকে না। স্কুলের শিশুদের, স্কুলের সামনে হর্ন বাজাইবেন না, নিয়ম মানিয়া চলুন ইত্যাদি ট্রাফিক আইন লেখা প্ল্যাকার্ড লইয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে হয়। এহ বাহ্য। ট্রাফিক আইন অমান্য করিবার পর ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ দিয়া কড়া আইন হইতে নিস্তার— এমন দুর্নীতি দেখিতে বিশ্বের লোক ডাকিয়া আনা কি খুব সম্মানের হইবে? সরকারি হিসাবে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচিতে নাকি পথ দুর্ঘটনার মাত্রা পনেরো শতাংশ কমিয়াছে। কিন্তু বিশ্বের দরবারে প্রচারে নামিবার আগে শতাংশটি আরও কিছুটা বাড়াইয়া লওয়াই বোধহয় নিরাপদ হইবে। পরের দরজার সম্মুখে শোভাযাত্রা বাহির করিবার পূর্বে নিজের ঘরটি নিকাইয়া পরিপাটি করিবার প্রতি মনোনিবেশ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Safe Drive Save Life Road Security Accident সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy