Advertisement
E-Paper

সন্তানসম?

যে শিক্ষকরা কর্মসমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিতে এত বড় একটি পরিবর্তন রাতারাতি, এবং কোনও যথার্থ প্রয়োজন ছাড়াই, সাধন করিবার সিদ্ধান্ত লইয়া বিষয়টিকে অকারণ সঙ্কটে টানিয়া আনিয়াছেন, তাঁহাদের দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:২০

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা অনশন করিয়া ঠিক করিলেন না ভুল করিলেন, তাহা লইয়া আলোচনার অন্ত নাই। রাজনৈতিক দুনিয়ার দাদা এবং দিদিরা তো নিজ নিজ স্বার্থচক্র অনুসারে মতামত বিতরণ করিতেছেনই, নাগরিক সমাজেও ইহা লইয়া বিস্তর তর্কবিতর্ক। তর্ক অস্বাভাবিক নহে। এই আন্দোলন কতখানি যুক্তিযুক্ত, আন্দোলনের পথ হিসাবে অনশন কতখানি সমর্থনযোগ্য, এ সব নিশ্চয়ই আলোচনার বিষয়। অনশন নামক অস্ত্রটি কখন এবং কোথায় ব্যবহার করা উচিত বা উচিত নয়, তাহা এই ছেলেমেয়েরা বুঝেন না— এমন মতের পক্ষে ও বিপক্ষে সওয়ালজবাব চলিতেই পারে। তবে কিনা, পাশাপাশি আর একটি কথা উঠে। এই তরুণদের সহিত যথাযথ আলোচনার চেষ্টা হইয়াছে কি? উপাচার্য বলিয়াছেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁহার সন্তানসমান। শিক্ষক পিতৃসম— কথাটি শিশুপাঠ্য বইতেও লেখা থাকে। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যাহাতে দ্রুত অনশন ভাঙিতে পারে, তাহার জন্য উপাচার্য ও অন্য শিক্ষকরা কি যথেষ্ট তৎপর হইয়াছেন? যে কর্মসমিতির বৈঠক মঙ্গলবার হইতে পারে, তাহা সোমবার হইতে পারিল না কেন? বস্তুত, এমন একটি ক্ষেত্রে, ‘পুত্রকন্যাসম’ অনশনকারীদের মুখ চাহিয়া রবিবারে বিশেষ বৈঠক করা চলিত না কি? তাহাতে কর্মসমিতির মহামান্য সদস্যদের ছুটি মার খাইত, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের উপবাস ভঙ্গের একটি সম্ভাবনা তৈয়ারি করা যাইত। এই বিলম্বের পিছনে প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবনিকাশ থাকিতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যবিধির অজুহাত থাকিতে পারে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অনশন যাহাতে শেষ হয়, সে জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থাই জরুরি। অন্তত তাহার জন্য সর্বতো ভাবে চেষ্টা করা জরুরি। তেমন তৎপরতার কোনও লক্ষণ যাদবপুরে দেখা গেল না। মৌখিক সমবেদনার অতিরিক্ত কোনও সংবেদন কিংবা সমমর্মিতার ছায়াও মিলিল না।

উপাচার্য-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কি ভুলিয়া গিয়াছেন যে এই ছেলেমেয়েদের বয়সটি কেবল জেদের বয়স নয়, উদ্‌ভ্রান্তিরও বয়স, যাহা কাটানো অভিভাবকের কাজ। উপাচার্য ও তাঁহার সহকর্মীরা সেই কাজে ব্যর্থ। কে তাঁহাকে ব্যর্থ ‘ভাবিতেছে’, তাহার শব্দালঙ্কৃত বিচার ছাড়িয়া, রাজনৈতিক যোগবিয়োগ ভুলিয়া, ইহাই প্রকৃত সত্য। আচার্য মহাশয়কেও বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সক্রিয় হইতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে অন্তত মানবিক তাড়নায় আর একটু সক্রিয়তা দেখাইয়া তিনি অনশন ভাঙাইবার চেষ্টা করিতে পারিতেন না কি? বস্তুত, পরিব্যাপ্ত অসংবেদনশীলতাই কি যাদবপুরের বেদনার্ত দৃশ্যগুলির স্রষ্টা নহে? অনশনক্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের কেহ হাসপাতালে ভর্তি হইতেছে, কাহাকেও চার-পাঁচ জন মিলিয়া ধরাধরি করিয়া বহন করিতেছে। এমন দৃশ্য যাহাতে তৈয়ারি না হয়, তাহার জন্য প্রাণপাত চেষ্টাই শিক্ষকদের কর্তব্য ছিল। সেই কর্তব্য অনুধাবনের জন্য ‘পিতৃসম’ হইবার প্রয়োজন নাই, ‘মানবসম’ হইলেই চলে। কিন্তু মানবিকতার দাবিও বোধ করি ইদানীং অপূরণীয়।

যে শিক্ষকরা কর্মসমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিতে এত বড় একটি পরিবর্তন রাতারাতি, এবং কোনও যথার্থ প্রয়োজন ছাড়াই, সাধন করিবার সিদ্ধান্ত লইয়া বিষয়টিকে অকারণ সঙ্কটে টানিয়া আনিয়াছেন, তাঁহাদের দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক। ছাত্রছাত্রীরা সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ভুল পথে আন্দোলন চালাইয়া থাকিতে পারে, কিন্তু আন্দোলনের মূল দায়টি তো তাহাদের নহে। মূল দায় কর্মসমিতির সংখ্যাগুরুদের। তাঁহাদের কেহ কেহ ভুলভাল ইংরেজিতে সম্মানিত শিক্ষাগুরুদের অপমান করিবার সময় পাইলেন, ছাত্রছাত্রীদের কাছে আসিয়া এবং পাশে বসিয়া তাহাদের সহিত আলোচনা করিতে পারিলেন না? অহংয়ে বাধিল? না কি, রাজনীতির হিসাবে?

Jadavpur University student movement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy