Advertisement
E-Paper

লজ্জা

নিছক সমাপতনে এত জোর থাকিতে পারে না। কেহ বলিতেই পারেন, মোদীর আমলে যে অসহিষ্ণুতা কার্যত রাষ্ট্রীয় বৈধতা অর্জন করিয়াছে, গোসন্ত্রাস তাহারই অন্যতম ফল। এই অসহিষ্ণুতাও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞার পথ বাহিয়াই আজ একটি প্রশাসনিক প্রশ্নেও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ভিন্ন ভারতের উপায় নাই।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

যাহা নিতান্তই প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল, তাহার রূপরেখা নির্ধারণের কাজটি কেন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চকে করিতে হয়? গোরক্ষক বাহিনী বা অন্য কোনও সংগঠিত গুন্ডাবাহিনীর সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করিবার যে পদ্ধতি প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্থির করিয়া দিয়াছে, তাহার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্নের উত্তর নরেন্দ্র মোদীকে দিতেই হইবে। অবশ্য, তাহারও পূর্বে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করা বিধেয়— এই সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের জন্য কংগ্রেসের প্রতিনিধিকে কেন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হইতে হইল? কারণটি স্পষ্ট। গত চার বৎসরে বিরোধীদের সহিত সংলাপের কোনও পরিসর নরেন্দ্র মোদী তৈরি করিতে পারেন নাই। দেশ জুড়িয়া বিপুল নৃশংসতা চলিতেছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাহার নিন্দাও করেন নাই, এই সমস্যার সমাধানসূত্র সন্ধানের প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের শরিকও করিতে চাহেন নাই। গণতন্ত্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এই মর্মান্তিক অবজ্ঞাই সুপ্রিম কোর্টকে বিরোধীদের এবং সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা করিয়া তুলিয়াছে। পাশাপাশি এই কথাটিও বলা প্রয়োজন যে গোসন্ত্রাসের প্রশ্নটি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার নহে। প্রশ্নটি দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়ার। ২০১০ হইতে ২০১৭ অবধি যতগুলি গোসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার মধ্যে মাত্র দুইটি বাদে সবই ঘটিয়াছে ২০১৪ সালের মে মাসের পর। নিছক সমাপতনে এত জোর থাকিতে পারে না। কেহ বলিতেই পারেন, মোদীর আমলে যে অসহিষ্ণুতা কার্যত রাষ্ট্রীয় বৈধতা অর্জন করিয়াছে, গোসন্ত্রাস তাহারই অন্যতম ফল। এই অসহিষ্ণুতাও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞার পথ বাহিয়াই আজ একটি প্রশাসনিক প্রশ্নেও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ভিন্ন ভারতের উপায় নাই।

প্রশাসনের কর্তব্য কী, আদালতকে কেন সেই তালিকা করিয়া দিতে হয়? কারণটি এত বেশি চর্চিত যে তাহার পুনরুল্লেখ হয়তো বাহুল্যই হইবে। তবুও, কারণটি আরও এক বার বলা প্রয়োজন। আদালতকে হস্তক্ষেপ করিতে হয়, কারণ এই বিপুল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাক্ষী হইয়াও প্রশাসন কার্যত নিষ্ক্রিয়। অনুমান করা চলে, সেই নিষ্ক্রিয়তা সরকারের অনুমোদনহীন নহে। সরকার গোসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহে না বলিয়াই প্রশাসন কাজটি করিয়া উঠিতে পারে না। শীর্ষ আদালতের নির্দেশগুলি এই অর্থে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি সুকঠোর তিরস্কারও বটে। কিন্তু, আশঙ্কা হয়, নরেন্দ্র মোদী সেই তিরস্কার গায়ে মাখিবেন না। আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি টুইটারে যে প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছেন, তাহাতে শব্দের খেলা আছে, ভারত সম্বন্ধে গালভরা কথা আছে, কিন্তু লজ্জাবোধ নাই। আশঙ্কা, এই প্রশাসনিক ব্যর্থতার মধ্যে যে লজ্জিত হওয়ার কারণ আছে, প্রধানমন্ত্রী তাহা দেখিতে পান নাই।

আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিজেপির তরফে একটি প্রতিক্রিয়া মিলিতেছে: গোসন্ত্রাস ঠেকাইতে নূতন আইনের প্রয়োজন নাই। বর্তমান আইনেই সেই ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। কথাটি একশত দশ শতাংশ খাঁটি। আদালত যে কর্মপদ্ধতি বলিয়া দিয়াছে, তাহা যেমন যে কোনও প্রশাসনের কাণ্ডজ্ঞানের অন্তর্গত হওয়ার কথা, তেমনই গোসন্ত্রাস নামক বিশেষ গোত্রের হিংস্রতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অবকাশ বর্তমান আইনেই আছে। এবং, প্রশ্ন এখানেই। দেশের অধিকাংশ রাজ্যই এখন বিজেপি-শাসিত। গোসন্ত্রাসের ঘটনাও মূলত সেই রাজ্যগুলিতেই ঘটিতেছে। বর্তমান আইন ব্যবহার করিয়া তাহা নিয়ন্ত্রণের কার্যত কোনও চেষ্টাই সেই রাজ্যগুলিতে চক্ষে পড়িল না কেন? নূতন আইন তৈরি হইলেও যে পরিস্থিতি পাল্টাইবে, সেই ভরসা কোথায়? মূল কথা রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তাহা থাকিলে নূতন আইনের প্রয়োজন হইত না, আদালতের হস্তক্ষেপেরও নহে। গোসন্ত্রাস ঠেকাইবার পথ সরকারই খুঁজিয়া পাইত। কিন্তু, ‘অচ্ছে দিন’-এ তাহা দুরাশামাত্র।

Death Cow vigilante Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy