Advertisement
E-Paper

নাট্যশালা

হয়তো তিনি উপলব্ধি করিয়াছেন মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে তিনি শুধু বিপক্ষ দলকেই নহে, তাঁহার অগণিত ভক্তকেও বিলক্ষণ ক্ষিপ্ত করিয়াছেন। ইতিমধ্যেই নিজের দেশেও প্রবল সমালোচিত তিনি। অথবা, ইহা নিছকই প্রচারকৌশল। কারণ, কোনও সংবাদমাধ্যম নহে, এক বিজ্ঞাপনী ভিডিয়োতে তিনি স্বীকারোক্তিটি করিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০

নাটকই করিয়াছেন ব্রাজ়িলের তারকা ফুটবলার নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)। নাটক, বিশ্বকাপের ময়দানে ব্রাজ়িলের খেলাগুলিতে। কিছু দিন পূর্বেই সমাপ্ত হইয়াছে বিশ্বকাপ ফুটবল। নেমারের দল ব্রাজ়িল সেমিফাইনালে উঠিতে পারে নাই। বেলজিয়ামের কাছে হারিয়া বিদায় লইয়াছিল। কিন্তু ব্রাজ়িল বা নেমারের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চাহিতে সম্ভবত অনেক বেশি আলোচিত হইয়াছে খেলা চলাকালীন তাঁহার অভিনয়। কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে পড়িয়া গিয়া পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টা, কখনও ভয়ঙ্কর আহত হইবার ভান করা, রেফারির সঙ্গে অযথা তর্ক— নাটুকেপনার তালিকাটি বড় কম নহে। সম্প্রতি নিজেই স্বীকার করিলেন, তিনি একটু ‘বাড়াবাড়ি’ই করিয়া ফেলিয়াছিলেন। প্রতিশ্রুতিও দিয়াছেন, ভবিষ্যতে নিজেকে শোধরাইবার।

অকস্মাৎ এ হেন স্বীকারোক্তির কারণ? হয়তো তিনি উপলব্ধি করিয়াছেন মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে তিনি শুধু বিপক্ষ দলকেই নহে, তাঁহার অগণিত ভক্তকেও বিলক্ষণ ক্ষিপ্ত করিয়াছেন। ইতিমধ্যেই নিজের দেশেও প্রবল সমালোচিত তিনি। অথবা, ইহা নিছকই প্রচারকৌশল। কারণ, কোনও সংবাদমাধ্যম নহে, এক বিজ্ঞাপনী ভিডিয়োতে তিনি স্বীকারোক্তিটি করিয়াছেন। ইতিপূর্বে বার বার সমালোচিত হইলেও তিনি মুখ খোলেন নাই। এখন বিজ্ঞাপনী ভিডিয়োতে নিজ কৃতকর্মকে স্বীকার করিয়া লইলেও প্রমাণিত হয় না, এ হেন অ-খেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য তিনি সত্যই আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। বিজ্ঞাপন অনেক কিছুই বলিয়া থাকে। কিন্তু উদ্দেশ্য যেখানে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ, সেখানে দাবিগুলির সত্যতা লইয়া রীতিমতো প্রশ্ন তোলা যায়। অতীতেও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা তাঁহাদের ভাবমূর্তিটিকে সুকৌশলে ব্যবহার করিয়াছেন বা করিতে বাধ্য হইয়াছেন পণ্যটিকে সফল ভাবে অনেকের কাছে পৌঁছাইয়া দিবার জন্য। ইহা বাজারনীতি। নেমার বিজ্ঞাপনে দেয় তাঁহার প্রতিশ্রুতিটি যথার্থ পালন করিবেন কি না, সময়ই বলিবে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ চমক জাগানো এবং দৃষ্টি আকর্ষণ— দুই-ই চমৎকার ভাবে সফল।

তবে প্রশ্ন, নেমারের নাটক লইয়াই বা এত বাড়াবাড়ি কেন? কিছু বাড়তি সুবিধা আদায়ের জন্য এমন নাটক তো নিতান্ত ছাপোষা জীবনেও প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে। রাজনীতিবিদরা যখন ভোটের প্রাক্কালে অতীতের ‘ভুল’ স্বীকার করিয়া লন বা গরিবের দুঃখে কাঁদিয়া ভাসান, তাহা নাটক অপেক্ষা কম কিসে? লাল কার্ড দেখিবার ভয় নাই বলিয়া তাহা তো গঙ্গাজলে শুদ্ধ হইয়া যায় না। দোষ যদি নেমার করিয়াই থাকেন, ইঁহারাও তবে সমান দোষী। বরং দোষের পাল্লা রাজনীতিবিদের অনেকটাই ভারী। কারণ এই নাটকে শুধুমাত্র শিল্ড পাওয়া-না পাওয়া নির্ভর করে না। আস্ত একটি গণতন্ত্রের ভাগ্যও এই মিথ্যা নাটকই গড়িয়া দেয়। আর দৈনন্দিনের ছোটখাটো নাটুকেরা? নমুনা তো অগুনতি। পরীক্ষার ভয়ে ছাত্র যখন পেটব্যথায় কাতর হয়, ভিড় বাসে কনুইয়ের ধাক্কা খাওয়া যাত্রী ট্রাকের ধাক্কায় আহত হইবার ভান করেন অথবা প্রেমিক যখন প্রেমিকার কাছে এক বার না দেখিলে মরিয়া যাইবার কথা বলেন— নাটকের মাপকাঠিতে তাঁহারাও কিছুমাত্র পিছনে থাকেন না। যেখানে অভীষ্টকে স্বাভাবিক উপায়ে পাওয়া যায় না, সেখানে অভিনয়ই দস্তুর। নেমারও তাহাই করিয়াছেন।

Neymar World Cup Reaction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy