বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী কে জে আলফনস উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি পাঠাইয়াছেন, কড়া পদক্ষেপের জন্য। আর এক মন্ত্রী মহেশ শর্মা বলিয়াছেন, ইহা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। কিন্তু লজ্জা ও দায়িত্বের বিষয়টি কতখানি তাঁহাদের উপর বর্তায়, তাহা এই মন্ত্রীরা সম্যক অনুধাবন করিয়াছেন কি? এক বিদেশি যুগলকে আগরার রাস্তায় ফেলিয়া এই ভাবে মারিয়া অঙ্গহীন ও হতচেতন করিয়া দেয় যে ‘ভারতীয় সংস্কৃতিমনস্ক’ যুবসমাজ, যে নির্যাতনের আকারপ্রকার বাকি নাগরিক দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া বিনোদন হিসাবে দেখেন, ভবিষ্যৎ বিনোদনের জন্য ফোন-ভিডিয়ো তুলিয়া লন, সেই মানুষগুলিকে তৈরি করিবার পিছনে সরকারি দায়িত্ব কতখানি, তাহা নেতা-মন্ত্রীরা সত্যই বুঝিলে আত্মগ্লানিতে তাঁহাদের মরমে মরিয়া যাইবার কথা এবং পূর্বকৃত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাহিবার কথা। হাবভাব দেখিয়া মনে হয় মন্ত্রীরা নড়িয়া বসিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁহাদের মতে এই ঘটনা একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা। তাই প্রশাসনিক উদ্যমের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত ধরিয়া এই ব্যর্থতার ক্ষতিপূরণ দরকার। যাহাতে দেশের মুখরক্ষা হয়। পরবর্তী টুরিস্ট-ঋতুতে যাহাতে যথেষ্ট লোকসমাগম হয়। এই ভাবনার মধ্যে কোনও ভুল নাই। ভয়ানক অসম্পূর্ণতা আছে। ইহা কেবল পর্যটনের ভবিষ্যৎ ভাবনা কিংবা প্রশাসনের বর্তমান হালের প্রশ্ন নয়। দেশের সার্বিক অধোগমনের সূচক।
ইতিপূর্বে এমন ঘটনা একেবারে ঘটে নাই, এই দাবি হয়তো করা যাইবে না। কিন্তু যে অসামান্য ভয়ভাবনাহীনতার পরিবেশ গত তিন বৎসরে উত্তরপ্রদেশ ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে নির্মাণ করা হইয়াছে, জাতীয় সংস্কৃতির নামে জবরদস্তির আমদানি হইয়াছে, তাহাতে সরকারি দায়িত্ব এড়াইয়া যাওয়া অসম্ভব। বিদেশি যুগলটিকে ওই উদ্ধত বর্বর যুবকরা ঠিক কী কারণে উত্ত্যক্ত করিতেছিল, তাহা আন্দাজ করা যায়, তাঁহাদের পোশাক-আশাক, ঘনিষ্ঠতার ধরন, সকলই উহাদের ‘লক্ষ্য’ ছিল। যে মানসিকতা এই লক্ষ্যে নিহিত, তাহার সহিত কি রোমিয়ো-ঠেঙানি কার্যক্রমের যোগ নাই? ‘বিজাতীয়’ পোশাক নামে বিশেষ বিশেষ পরিধানের উপর আক্রমণের যোগ নাই? কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের উপর যে নির্যাতন শাস্তিহীন ভাবে ঘটিয়া গিয়াছে, শ্বেতাঙ্গদের সেই নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত করিয়া দিবার উন্মাদ আনন্দ নাই?
কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি বা চ্যুতি নহে, সার্বিক ভাবে এ দেশে যে অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতির জয়জয়কার সম্প্রতি কালে চালু হইয়াছে, তাহারই ন্যক্কারজনক প্রকাশ এই ঘটনায়। কেবল পাঁচ-ছয় জন অপরাধীকে আটক করিলেই দেশের ‘মুখরক্ষা’ হইবে, এমন আশা না করাই ভাল। দেশের মুখ পু়ড়িয়া ঝামা। সুইটজারল্যান্ড অবধি সে বার্তা পৌছাইল এই বার, নূতন খবর হয়তো এইটুকুই। সমস্ত দেশেই অসামাজিক গুন্ডাদের হামলার কথা শোনা যায়। তবে গুন্ডারা মারিয়া মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন পর্যন্ত ব্যাহত করিয়া দিতেছে, এবং দর্শক পথচারীরা নিশ্চিন্ত বিলাসে লুটাইয়া পড়া রক্তাক্ত যন্ত্রণার্ত যুগলের চলচ্ছবি তুলিতেছে— ইহার জন্য বিশেষ ধরনের পরিবেশ চাই, অনৈতিকতার কিছু বিশেষ রকম প্রশিক্ষণ চাই। সুষমা স্বরাজরা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে চিঠি পাঠাইলে তবু কিছু আশ্বাস মিলিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy