Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দলীয় পদাধিকারীদের ভূমিকা সন্তোষজনক কি? ভেবে দেখতে হবে মমতাকেই

খামতিটা ঠিক কোথায় রয়ে যাচ্ছে? খুঁজে বার করতেই হবে এ বার। প্রশাসনের শীর্ষ বিন্দু বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, উশৃঙ্খলতা বরদাস্ত করা হবে না। কঠোর বার্তা আসছে বার বার, শিক্ষার বাতাবরণ দূষণমুক্ত রাখতে প্রয়োজনে রাজদণ্ডও নেমে আসছে নির্মোহ ভঙ্গিতেই। তবু আবর্জনার উদ্ভাস থেকে থেকেই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

খামতিটা ঠিক কোথায় রয়ে যাচ্ছে? খুঁজে বার করতেই হবে এ বার। প্রশাসনের শীর্ষ বিন্দু বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, উশৃঙ্খলতা বরদাস্ত করা হবে না। কঠোর বার্তা আসছে বার বার, শিক্ষার বাতাবরণ দূষণমুক্ত রাখতে প্রয়োজনে রাজদণ্ডও নেমে আসছে নির্মোহ ভঙ্গিতেই। তবু আবর্জনার উদ্ভাস থেকে থেকেই।

মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর বার্তায় কি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাঁর দলীয় সহকর্মীরা? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সারাৎসার তাঁরা বুঝে উঠতেই পারছেন না? প্রশ্নটা উঠে এল বালুরঘাট থেকে।

ছাত্রদের প্রবল চাপে অধ্যক্ষকে পদত্যাগপত্রে সই করে দিতে হল। অধ্যক্ষের অপরাধ বা ত্রুটি? তিনি নাকি পঠনপাঠনের অবনতি ঘটাচ্ছিলেন।

অধ্যক্ষ তাঁর পদে বহাল থাকবেন, না ইস্তফা দেবেন, তার নির্ণায়ক পড়ুয়ারা কবে থেকে হয়ে উঠলেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনের মানে অবনতির যে অভিযোগ দেগে দেওয়া হয়েছে অধ্যক্ষের গায়ে, সে অভিযোগকে তর্কের খাতিরে ধ্রুব সত্য মেনে নিলেও কি অধ্যক্ষের কার্যকালের মেয়াদ নিয়ন্ত্রণের অধিকার বা দায়িত্ব কোনও ভাবে ছাত্র সংগঠনের উপরে বর্তায়? বালুরঘাটের আইন কলেজে কিন্তু তেমনই হল।

এমন ঘটনা প্রথম নয়। একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই আখ্যানের প্রথম পৃষ্ঠা চমকে দেওয়ার মতো নয় একেবারেই। কিন্তু এ আখ্যানের দ্বিতীয় পৃষ্ঠাও রয়েছে এবং বিস্ময়ের উপকরণ সেখানেই মজুত। নৈরাজ্য রোখা না গেলে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের চেহারাটা কেমন দাঁড়াবে, তা মুখ্যমন্ত্রী আগেই আঁচ করেছিলেন। স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়েছিলেন, বেয়াদপি বরদাস্ত নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এমন কঠোর কণ্ঠস্বর সত্ত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যেই নৈরাজ্যের নামান্তর হয়ে উঠছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দলের সৌজন্যেই সে রকমটা ঘটছে। কাহিনির এই দ্বিতীয় পর্বটা সত্যিই বিস্ময়কর নয় কি?

নৈরাজ্যের উৎস এ ক্ষেত্রে অন্তত রাজ্য প্রশাসনের বা রাজ্যের শাসক দলের শিখরটা নয়। খামতি নিম্নবর্তী স্তরগুলিতে। মুখ্যমন্ত্রী বার বার সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। দলনেত্রী বার বার দলীয় স্তরে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তবু ছবি বদলাচ্ছে না। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হোক বা অন্য কোনও কারণে, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির নাম আর নৈরাজ্যের সঙ্গে সে ভাবে জড়িয়ে পড়ছে না আজকাল। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের প্রসঙ্গে বার বার শিরোনামে আসছে শাসকের ছাত্র শাখার নামই। তাই বলতেই হচ্ছে, নিজেদের ভূমিকা ঠিক মতো পালন করছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

বালুরঘাটের তৃণমূল ছাত্রপরিষদ সমর্থকেরা দলনেত্রীর কঠোর অবস্থান সংক্রান্ত বার্তাটা যদি ঠিক মতো পেতেন, তা হলে এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস আদৌ পেতেন না। প্রশ্ন উঠছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জরুরি বার্তাটা দলীয় কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তো? প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব দলনেত্রীর অবস্থানটা বালুরঘাটের নেতাদের স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তো? দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবর্গের ভূমিকা নিয়ে যখন এ ভাবে প্রশ্ন ওঠে, তখন বুঝতে হয়, সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। রাজ্যে এবং বিভিন্ন জেলায় শাসক দলের পদাধিকারীরা আয়নার সামনে দাঁড়ান, আত্মসমীক্ষা করুন, নিজেদের ভূমিকা ঠিক মতো পালন করছেন কি না নিজেরাই বিচার করুন। তাতেও যদি ছবিটা না বদলায়, তা হলে সতর্ক হতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newsletter Anjan Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE