Advertisement
E-Paper

ছুটি মানে কাজ

ছুটি মানে যে কাজ নহে, এমন কথা কে বলিল? বাঙালির ছুটি বাড়িয়াছে বটে, কিন্তু সে এখন বরং পূর্বের চাহিতে অনেক বেশি কাজ করে। গোটা বাংলা জুড়িয়া যে উৎসবের বাতাবরণ তৈয়ারি করিয়া রাখিতে হয় সম্বৎসর, তাহা অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০

ভাদ্রের মাঝামাঝি ছুটির বাজনা বাজিল। আগাম বাজনা। এই বৎসরে ১১ দিন পূজার ছুটি উপভোগ করিবার পূর্বেই পরের বৎসর, অর্থাৎ ২০১৮ সনের পূজার ছুটির ঘোষণা করিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং তাহা এই বৎসরের ১১ দিন অপেক্ষা সরকারি ভাবে দুই দিন বেশি, কিন্তু মাঝে এক দিন কর্মীরা যদি সি এল লইয়া নেন, তাহা হইলে পূজার ছুটি হইবে সর্বমোট ১৫ দিন। মাঝের এক দিনের ছুটি লইবার ঈঙ্গিতটি মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং করিয়াছেন। এবং মানিতেই হইবে, তিনি স্বধর্মে স্থিত। তিনি প্রতি বৎসর নিয়ম করিয়া বাঙালির ছুটি বাড়াইয়া চলিয়াছেন। বাঙালি ইহাই চাহে। কাজ হইতে নিষ্কৃতি বাঙালির কত কালের স্বপ্ন, যুগে যুগে কালে কালে কত বাঙালি কেবল মনের মধ্যে এই স্বপ্ন লালন করিয়াছেন, কিন্তু এমন ভাবে তাহা সত্য হয় নাই। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিবার পর হইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাগ্রচিত্তে সেই স্বপ্নকে সত্য করিয়া তুলিতেছেন। ইহাতে বাঙালি মুখ্যমন্ত্রীকে দুই হাত তুলিয়া আশীর্বাদ করিবে। স্বাভাবিক। না করাটাই অকৃতজ্ঞের কাজ হইবে। বাঙালি অকৃতজ্ঞ নহে।

সমালোচকরা প্রশ্ন তুলিবেন, এত ছুটি কেন? বলিবেন, ইহাতে বাংলার কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হইবে। এই আপত্তিতে বড় বিস্ময় জাগে! বাঙালির কর্মসংস্কৃতি কোনও কালে ছিল কি, যে তাহা নষ্ট হইবে? আর বাঙালির হাতে কাজ কোথায়? না শিল্পক্ষেত্রে, না কৃষিক্ষেত্রে— করিবার মতো প্রচুর পরিমাণ কাজ বাঙালির হাতে তো নাই। যেটুকু রহিয়াছে, তাহা হরে-দরে বৎসরে ছয় মাস কাজ করিলেই সারা হইয়া যায়। তাহা হইলে বাকি দিনগুলিতে বেচারা বাঙালি কী করে? যে রাজ্যে করিবার মতো কাজ নাই, সে রাজ্যে যদি মুখ্যমন্ত্রী একটু বেশি ছুটি দিয়া থাকেন, তাহা হইলে বরং সরকারের পক্ষে মঙ্গল। কারণ উপার্জন না করিতে পারিলে, সাশ্রয় তো করা যায়। এতগুলো দিন ছুটি দিলে, বিজলির বিল বাঁচে, গাড়ির জ্বালানির খরচ বাঁচে, মধ্যবিত্তের বাসভাড়া বাঁচে এবং সর্বোপরি বাঙালির পরিশ্রম বাঁচে। এতগুলি সদর্থক দিক থাকিতেও, এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করিলে তাহা অত্যন্ত অন্যায়।

এহ বাহ্য। ছুটি মানে যে কাজ নহে, এমন কথা কে বলিল? বাঙালির ছুটি বাড়িয়াছে বটে, কিন্তু সে এখন বরং পূর্বের চাহিতে অনেক বেশি কাজ করে। গোটা বাংলা জুড়িয়া যে উৎসবের বাতাবরণ তৈয়ারি করিয়া রাখিতে হয় সম্বৎসর, তাহা অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ। ফুটবল খেলা, রক্তদান শিবির, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদি তো আছেই, তাহার উপরে রহিয়াছে অন্য নানাবিধ সমাজসেবা— কেহ গৃহনির্মাণ করিতে চাহিলে তাঁহাকে চমকানো, কেহ ছোটখাটো ব্যবসা করিতে চাহিলে তাঁহার নিকট প্রণামী গ্রহণ করা ইত্যাদি সব কার্যক্রম ক্রমাগত পালন করিতে হইলে কী পরিমাণ পরিশ্রম করিতে হয়, তাহা কি বাঙালি জানে না? পূজার বৃহৎ কর্মকাণ্ড শুরু হইয়াছে, তাহার জন্যই কি কম পরিশ্রম? কারুশিল্পী খুঁজিয়া আনা, স্পনসর জোগাড় করা, বিশেষ আকর্ষণ তৈয়ারি করা, অন্তত ১০১টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়া বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়া— এই সব কাজ কি দফতরে বসিয়া দুই-একটি ফাইল ঘাঁটিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব? যথেষ্ট ছুটি পাইলে তবেই যথেষ্ট কাজ হয়, এই সত্য আমবাঙালি জানে, আর জানেন তাহার মুখ্যমন্ত্রী। নিন্দুকরা সত্বর সত্য উপলব্ধি করুন।

Work Culture Bengali Durga puja Leave
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy